জাতীয়

মজুরি বাড়ল পোশাক শ্রমিকদের

শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরির কয়েকটি গ্রেডে বেতন আশানুরূপ বৃদ্ধি না পাওয়ায় পোশাক শিল্পের উদ্ভুত বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে উক্ত গ্রেডগুলোর মধ্যে সমন্বয় করা হয়েছে।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পোশাক শ্রমিকদের মজুরি যৌক্তিকহারে বৃদ্ধির নির্দেশ দেয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে করে ঘোষিত মজুরির সাতটি গ্রেডের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে ছয়টি গ্রেডেই বেতন বেড়েছে।

রোববার শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব আফরোজা খান চূড়ান্ত মজুরি ঘোষণা করেন। এ সময় বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান, বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলাম, এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, আতিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন >> পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির গেজেট জারি

Advertisement

শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব আফরোজা খান বলেন, ২০১৩ সালে ৭ম গ্রেডে বেতন ছিল ৫ হাজার ৩০০ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ৮ হাজার টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ৮ হাজার টাকাই রাখা হয়েছে।

২০১৩ সালে ৬ষ্ঠ গ্রেডে বেতন ছিল ৫ হাজার ৬৭৮ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ৮ হাজার ৪০৫ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ৮ হাজার ৪২০ টাকা করা হয়েছে।

২০১৩ সালে ৫ম গ্রেডে বেতন ছিল ৬ হাজার ৪২ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ৮ হাজার ৮৫৫ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ৮ হাজার ৮৭৫ টাকা করা হয়েছে।

২০১৩ সালে ৪র্থ গ্রেডে বেতন ছিল ৬ হাজার ৪২০ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ৯ হাজার ২৪৫ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ৯ হাজার ৩৪৭ টাকা করা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন >> ছাত্রলীগ এলো, সড়ক ছাড়ল পোশাকশ্রমিকরা

২০১৩ সালে তৃতীয় গ্রেডে বেতন ছিল ৬ হাজার ৪০৫ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ৯ হাজার ৫৯০ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ৯ হাজার ৮৪৫ টাকা করা হয়েছে।

২০১৩ সালে ২য় গ্রেডে বেতন ছিল ১০ হাজার ৯০০ টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ১৪ হাজার ৬৩০ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ১৫ হাজার ৪১৬ টাকা করা হয়েছে।

এবং ২০১৩ সালে ১ম গ্রেডে বেতন ছিল ১৩ হাজার টাকা। ২০১৮ সালে সেটি করা হয় ১৭ হাজার ৫১০ টাকা। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে এটি ১৮ হাজার ২৫৭ টাকা করা হয়েছে।

মজুরি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৩ সালের নিম্নতম মজুরি কাঠামো থেকে ২০১৮ সালের ঘোষিত মজুরি কাঠামো সমন্বয়ের ফলে মোট মজুরি ১ম গ্রেডে বৃদ্ধি পেল ৫,২৫৭ টাকা, ২য় গ্রেডে বৃদ্ধি পেল ৪,৫১৬ টাকা, ৩য় গ্রেডে ৩,০৪০ টাকা, ৪র্থ গ্রেডে বৃদ্ধি পেল ২,৯২৭ টাকা, ৫ম গ্রেডে বৃদ্ধি পেল ২,৮৩৩ টাকা, ৬ষ্ঠ গ্রেডে বৃদ্ধি পেল ২,৭৪২ টাকা এবং ৭ম গ্রেডে বৃদ্ধি পেল ২,৭০০ টাকা।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, নতুন বেতন গ্রেডে চিকিৎসা, যাতায়াত এবং বাড়িভাড়া বৃদ্ধি ছাড়াও বেসিক বেতনের সঙ্গে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়েছে। এ মজুরি গত ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। ডিসেম্বরের অতিরিক্ত মজুরি জানুয়ারির বেতনের সাথে যোগ করে ফেব্রুয়ারিতে প্রদান করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন >> গুলি করে শ্রমিক হত্যার নিন্দা ফখরুলের

বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, গার্মেন্টসে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন হবে, তবে কোনো অবস্থাতেই গার্মেন্টস কারখানা ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা যাবে না। আগামীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা এই সেক্টরকে কোনো অবস্থাতেই ধ্বংস হতে দেব না। গার্মেন্টস শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে চাই।

মন্ত্রী বেতন গ্রেড ঘোষণার সময়ে আন্দোলনে নিহত গার্মেন্টস শ্রমিকের জন্য নিজের তহবিল থেকে এক লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, শিল্পের স্বার্থে শান্তি বজায় রেখে উৎপাদন বাড়াতে হবে। মালিক-শ্রমিক ও দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ পরিহার করে শ্রমিকদের আগামীকাল কাজে যোগদানের আহ্বান জানান।

গার্মেন্টস মালিকদের পক্ষ থেকে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরে বেতন-ভাতা বাড়ানো নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করতে পারে। কিন্তু সেই আন্দোলন কখনো ধ্বংসাত্মক হতে পারে না। এবারের আন্দোলনে যারা গার্মেন্টস সেক্টরে ভাঙচুর চালিয়েছেন তাদেরকে আইনের আওতায় আনার আহ্বান জানান।

এমইউএচ/বিএ/পিআর/জেআইএম