মুম্বইয়ের বান্দ্রা অঞ্চলের পালি হিলসে একটি বাংলো রয়েছে প্রখ্যাত অভিনেতা দিলীপ কুমারের। ১৯৫৩ সালে দেড়লক্ষ টাকা দিয়ে জমিটি কিনেছিলেন দীলিপ কুমার-সায়রা বানু দম্পতি। ২০০৩ সালে সেখানে গিয়ে থাকতে শুরু করেন তারা। দুই বছর আগে নতুন করে বাংলো তৈরি করা হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই বাংলো তাদের হাতে তুলে দেননি শহরের দাপুটে এক ডেভেলপার সমীর ভোজওয়ানি। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্টে। সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে ২০ কোটি টাকার বিনিময়ে বাংলো ফিরে পান দীলিপ ও তার স্ত্রী সায়রা বানু।
Advertisement
এতকিছুর পরে আবারও দিলীপ কুমারের ওই জমি ও বাড়ি দখলের চেষ্টা শুরু করেছেন ভোজওয়ানি। এখন যে জমির ওপর ওই বাংলো, সেই জমিটিকে নিজের বলে দাবি করছেন নির্মাতা। গত বছর ভোজওয়ানির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান সায়রা বানু। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুম্বাই পুলিশের আর্থিক দুর্নীতি শাখা ভোজওয়ানির বিরুদ্ধে মামলা করে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভুয়া নথি তৈরি করে কিংবদন্তি অভিনেতার সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার নীলনকশা ওই নির্মাতা। কয়েকমাস আগে ভোজওয়ানির বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। উদ্ধার হয় বেশ কিছু নথি ও অস্ত্রশস্ত্র। গত বছরের এপ্রিলে গ্রেফতার করা হয় তাকে। এরমধ্যে পালি হিলের বাংলোটির মালিকানা অভিনেতা দম্পতির হাতেই রয়েছে, একটি পাবলিক নোটিশ প্রকাশ করে এমনটা জানিয়েছেন শেঠ মুলরাজ খাটাউ ট্রাস্টের আইনজীবী আলতমাস শেখ। এতে বলা হয়েছে, ‘দিলীপ কুমারের জমির লিজ সম্পূর্ণ বৈধ। ওই জমির ওপর তার ৯৯৯ বছরের লিজ রয়েছে।’
তবে জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও জমি দখলের হুমকি দিতে শুরু করেছেন ভোজওয়ানি। তার দাবি, দিলীপ কুমার ও সায়রা বানু ওই বাংলোতে ভাড়ায় রয়েছেন। তারা মালিক নন।
Advertisement
এরপর মুম্বাইয়ের ওই ‘রিয়েল এস্টেট কিং’ এর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করছেন অভিনেতা দম্পতি। মামলায় তারা বলেছেন, দিলীপ কুমারের নামে মিথ্যা অপবাদ রটিয়ে বান্দ্রার ২৫০ কোটি টাকার সম্পত্তি হস্তগত করার ষড়যন্ত্র করছেন তিনি। গত ৩১ ডিসেম্বর ভোজওয়ানির কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মানহানির জন্য ক্ষমা চাওয়া ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ২০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে তার কাছে।
তারপরও সঙ্কট এখনও কাটেনি। তাই ভিটেমাটি বাঁচাতে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বারস্থ হয়েছেন অভিনেতা দম্পতি।
দিলীপ কুমারের টুইটার হ্যান্ডলে নরেন্দ্র মোদির উদ্দেশে সায়রা বানু লিখেছেন, ‘মোদি স্যার, জমি মাফিয়া সমীর ভোজওয়ানি জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। বাহুবল ও অর্থবলের ভয়ও দেখানো হচ্ছে পদ্মবিভূষণ সম্মানে সম্মানিত অভিনেতাকে! আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যবস্থা নেননি মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাই, মুম্বাইয়ে।’
পশ্চিবঙ্গের প্রয়াত অভিনেত্রী তথা সর্বকালের সেরা উত্তম-সুচিত্রা জুটির সুচিত্রা সেন যখন কলকাতায় চিকিৎসাধীন ছিলেন, তখন নিয়মিত সুচিত্রার মেয়ে অভিনেত্রী মুনমুন সেনকে টেলিফোন করে সুচিত্রার খোঁজ নিতেন দিলীপ কুমার। বার্ধক্যজনিত কারণে দিলীপ এখন অসুস্থ। জমি-বাড়ি কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে শুনে বেজায় ক্ষুব্ধ মুনমুন।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘শুধু ভারতে নয়, বিশ্বজুড়ে খ্যাত দিলীপ কুমার। তিনি নিজে গোটা বিশ্বের সম্পদ। তার এখন ৯৬ বছর বয়স। মানবিকতা বলে কিছু থাকবে না! এই বার্ধক্যে তার মাথার ছাদ কেড়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে। আমি শিল্পী হিসেবে তাকে সম্মান করি। তার স্ত্রী একাই লড়াই করে যাচ্ছেন। ঘটনাটা পশ্চিমবঙ্গে হলে আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বিল্ডারকে ডেকে সমাধান করিয়ে দিতেন। যেমন সুপ্রিয়া দেবীকে একটি ফ্ল্যাট দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুম্বাইয়ের মতো রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই বিষয়টি আর একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত ছিল। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।’
সূত্র : ডয়েচে ভেলে
এমবিআর/এমএস