প্রথম দিন খেলতে নেমেই হ্যাটট্রিক ও ম্যাচ জেতানো (৪-০-২৬-৪) বোলিং করে এবারের বিপিএলের সবচেয়ে সাড়া জাগানো পারফরমার এখন ঢাকা ডায়নামাইটসের অফস্পিনার আলিস আল ইসলাম। কিন্তু কে এই আলিস আল ইসলাম? কী তার পরিচয়? কোথায় খেলেছেন আগে? কীভাবে ঢাকা ডায়নামাইটসে এলেন এবং খেললেন ২৩ বছরের এই যুবা?
Advertisement
খুব জানতে ইচ্ছে করছে, তাই না? তাহলে শুনুন, বিপিএল তো বহু দূরে, আগে কখনও ঢাকার প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ ও বিসিএল- কোথাও খেলেননি আলিস। বিপিএলে তার আজকের ম্যাচে জায়গা পাওয়া রীতিমতো এক কল্প কাহিনিকে হার মানায়।
আলিস আল ইসলাম আসলে ঢাকা ডায়নামাইটসের নেট বোলার। নেটে কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন তার বোলিং দেখে তাকে একাদশে সুযোগ দিয়েছেন। রাজধানী ঢাকার অদূরে সাভারের বলিয়ারপুরের ছেলে আলিস কাঁঠাল বাগানের হয়ে দুই বছর দ্বিতীয় বিভাগ লিগ খেলার পর ওল্ড ডিওএইচএসের হয়ে প্রথম বিভাগে লিগ খেলেন।
তারপর তাকে ঢাকার নেটে বোলিংয়ের জন্য ডাকেন কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। কোচ সুজনের ইচ্ছায়ই বিপিএলে অভিষেক- এ তথ্য জানিয়ে খেলা শেষে আল ইসলাম বলেন, ‘আমি আলিস আল ইসলাম। আমি ঢাকা ডায়নামাইটসের নেট বোলার ছিলাম। আগে আমি ঢাকা ফাস্ট ডিভিশনে খেলেছি। নেট বোলিং করার সময় সুজন (ঢাকার কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন) স্যার আমাকে দেখেন। দেখে ওনার বিশ্বাস হয় যে আমি ভালো করতে পারব, তারপর আমাকে টিমে নেন। তারপর টিম ম্যানেজমেন্ট, প্লেয়াররা আমাকে সাপোর্ট করেন। তারপর আমি সেরা একাদশে।’
Advertisement
ম্যাচে দুটো ক্যাচ হাতছাড়া করেছেন। এর বাইরে একটি রিটার্ন ক্যাচও হাত ফসকে বেরিয়ে গেছে। তখন কী মনে হয়েছিল পারবেন? আল ইসলাম অকপটে স্বীকার করেন, ‘ভাই আসলে এটা আমার বিপিএলে প্রথম ম্যাচ। খোলাসা করে বলতে গেলে শেরেবাংলা স্টেডিয়ামেই এটা আমার প্রথম ম্যাচ। আমি আসলে অনেক নার্ভাস ছিলাম। তবে ক্যাচ দুটি ড্রপ করার পর টিমমেটটা অনেক সাপোর্ট করেছেন আমাকে, কোচ সাপোর্ট করেছেন। সবাই আসলে অনেক সাহস দিয়েছেন। তাতে আমার মনে হয়েছে যে, যদি ভালো জায়গায় বলটা করতে পারি, তাহলে ভালো কিছু হতে পারে। আমি শুধু ভালো জায়গায় বল করতে চেয়েছি।’
হ্যাটট্রিক ওভারে অধিনায়ক সাকিব কিছু একটা বলেছিলেন। কী বলছিলেন সাকিব? জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘সাকিব ভাই শুধু বলছিলেন যে, ভালো হচ্ছে, তুই তোর ভালো জায়গায় বল করতে থাক।’
একাদশে থাকবেন কখন জানলেন- প্রশ্ন করা হলে আল ইসলামের জবাব, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় জানতে পারি খেলব। স্যার (কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন) আমাকে ডেকে বলেন শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে। আমি প্রস্তুতই ছিলাম। এত বড় স্টেডিয়ামে, এত বড় টুর্নামেন্টে প্রথম খেলা নার্ভাসেরই বিষয়। আমি প্রথমে নার্ভাসই ছিলাম, তবে তারপরও ভালো হয়েছে।’
জানা গেছে, প্রথম বিভাগে তার বোলিং অ্যাকশন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। তবে বিসিবি সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে তার বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সংশয় ছিল। তা শুধরেও দেয়া হয়েছে।
Advertisement
শুক্রবার প্রেস কনফারেন্সে সেই প্রশ্ন উঠল। তাতে ঠিক ভড়কে না গেলেও কেমন যেন ম্রিয়মান হয়ে গেল চোখ মুখ। মুখে বললেন, ‘না আসলে কখনও প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। তবে সবাই আসলে ভাবছিলেন...।’ কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলেন, তা না বলে উল্লেখ করলেন, ‘আসলে প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি।’
শেষ ওভারে দুই চার হজম করার পর কী মনে হচ্ছিল- পারবেন? আলিসের জবাব, ‘আসলে প্রথম দুটি বল স্ট্যাম্পের বাইরে করেছি। যেটা শফিউল ভাই ভালো পেয়েছেন। তারপর ভাবলাম স্ট্যাম্পের মধ্যে করি। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম, মনে হচ্ছিল পারব।’
অভিষেকে হ্যাটট্রিক। যেন কোনও ক্রিকেটার, বোলারের জন্য অনেক বড় অর্জন, কৃতিত্ব, প্রাপ্তি। বিপিএল খেলতে নেমে এই হ্যাটট্রিক করে ইতিহাসে নিজের নাম লিখিয়ে ফেলা। আসলে অনুভূতিটা কেমন? আলিস আল ইসলামের শেষ কথা, ‘আসলে হ্যাটট্রিক করা যায় না। হ্যাটট্রিক হয়ে যায়।’
এআরবি/এসএএস/জেডএ