বিশেষ প্রতিবেদন

‘বৃদ্ধ’ ইঞ্জিনে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ, সংস্কারে প্রয়োজন ২৫৬ কোটি

>> ২৭২টির মধ্যে ১৯৬ ইঞ্জিনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ>> ২১টি লোকোমোটিভ জার্মানি থেকে আনা হয় ১৯৯৫ সালে>> সংস্কারে প্রয়োজন ২৫৬ কোটি ১১ লাখ পাঁচ হাজার টাকা

Advertisement

বাংলাদেশ রেলওয়ের ২৭০০ সিরিজের ২১টি লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) জার্মানি থেকে আনা হয়েছিল ১৯৯৫ সালে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কয়েক বছর ধরে ইঞ্জিনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলাচল করছে। কমেছে এগুলোর প্রাপ্যতা ও কার্যক্ষমতা। প্রাপ্যতা ও রাজস্ব বৃদ্ধি, নিরাপদ ট্রেন পরিচালনায় ইঞ্জিনগুলো সংস্কারের (নবরূপদান) উদ্যোগ নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

আরও পড়ুন >> অভ্যন্তরীণ-আন্তর্জাতিক রুটে বুলেট ট্রেন চালুর প্রতিশ্রুতি আ.লীগের

‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ২১টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ নবরূপদান’ প্রকল্পের আওতায় এই সংস্কার করা হবে। এতে খরচ ধরা হয়েছে মোট ২৫৬ কোটি ১১ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। এর পুরোটাই খরচ হবে সরকারি কোষাগার থেকে। সম্প্রতি এটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উঠেছে। পিইসি সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এর মধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খরচ হবে ৭৬ কোটি ৯৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮৯ কোটি ৬০ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৯ কোটি ৫৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা খরচ হবে।

সভার কার্যপত্র সূত্রে আরও জানা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ২৭২টি ডিজেল ইলেকট্রিক ইঞ্জিন রয়েছে (১৭৮টি এমজি ও ৯৪টি বিজি)। ২৭২টির মধ্যে ১৯৬টি ইঞ্জিনের (১৪১টি এমজি ও ৫৫টি বিজি) অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল উত্তীর্ণ হয়েছে। মেকানিক্যাল কোড অনুযায়ী একটি ইঞ্জিনের স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল ২০ বছর। তারপরও ইঞ্জিন নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান থেকে ৩০ বছরের বেশি ইঞ্জিন সার্ভিস না করার জন্য জোর সুপারিশ করা হয়েছে। এমজি ইঞ্জিনের মধ্যে এমইএল-১৫ (২৭০০ সিরিজ) শ্রেণির ২১টি ইঞ্জিন ট্রেন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ইঞ্জিনগুলোর বর্তমান কার্যক্ষমতা আশানুরূপ না হওয়ায় এর রক্ষণাবেক্ষণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন >> অনলাইনে ট্রেনের আসন নির্বাচন করবেন যেভাবে

বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মিটারগেজ রেলওয়ের নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত হলেও গত পাঁচ বছরে নতুন কোনো মিটারগেজ ইঞ্জিন সংগ্রহ করা হয়নি। চলমান প্রকল্পের আওতায় নতুন ইঞ্জিন রেলওয়ে বহরে সংযুক্ত করতে আরও দুই থেকে তিন বছর সময় লাগবে। কিন্তু যাত্রী সাধারণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা অনেক বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের চলমান ইঞ্জিন সংকট নিরসনে প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

Advertisement

সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১০০টি নতুন ইঞ্জিন ক্রয়, রেলব্রিজ নির্মাণ, লেভেল ক্রসিং গেট ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে বলেও প্রকল্প সূত্রে জানা যায়।

প্রকল্পের ২৫৬ কোটি ১১ লাখ পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে বিজ্ঞাপনে খরচ হবে তিন লাখ, অন্যান্য মনিহারি জিনিসপত্রে আট লাখ; সম্মানি পাঁচ লাখ, প্রয়োজনীয় স্পেয়ার্স ও যন্ত্রাংশের সরবরাহসহ ২১টি মিটারগেজ ডিজেল ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনের নবরূপদানে ২৩২ কোটি ৭৩ লাখ ৭৭ হাজার; অফিস ইকুইপমেন্ট ও অন্যান্য খাতে পাঁচ লাখ; অফিস ফার্নিচার ও অন্যান্য খাতে চার লাখ; ফিজিক্যাল কনটিনজেন্সি চার কোটি ৬৫ লাখ ৬৬ হাজার ও প্রাইস কনটিনজেন্সি ১৮ কোটি ৬২ লাখ ৬২ হাজার টাকা খরচ হবে।

আরও পড়ুন >> নজর কেড়েছে ট্রেন স্কুল

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সেক্টর ডিভিশন মতামত দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, যে ২১টি ইঞ্জিন নবরূপদান করা হবে সেগুলো সংগ্রহের সময়, এখন কার্যকর রয়েছে কিনা, এসব ইঞ্জিনের ক্রয়মূল্য কত, নবরূপদানের ফলে এগুলো আর কত বছর ব্যবহার করা যাবে, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে প্রকল্পটি সংগতিপূর্ণ কিনা, ফিজিক্যাল ও প্রাইস কনটিনজেন্সি বাবদ যথাক্রমে ২ শতাংশ ও ৮ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে, যা কমানো যেতে পারে; পণ্য ক্রয়ের প্যাকেজ সংখ্যা কমানোসহ ইঞ্জিনের নবরূপদানের জন্য গ্রহণ করা প্রকল্পে কম্পিউটার, ফটোকপিয়ার, অফিস ফার্নিচারের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে সভায় আলোচনা করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পিডি/এমএআর/এমএস