দেশজুড়ে

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার স্ত্রীর পিটিশন দাখিল

`র‍্যাবের হাতে আটক` কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের সন্ধান পেতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া। আদালত এ বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার ও মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। রোববার কুষ্টিয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-১ এর বিজ্ঞ বিচারক সাজ্জাদুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। এদিকে, কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবু ও সাধারণ সম্পাদক এবং কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের সন্ধান পেতে দুপুরে দ্বিতীয়বারের মত কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সবুজের পরিবারের সদস্যরা। একই দাবিতে তারা প্রেসক্লাবের সামনে অনশন কর্মসূচিও পালন করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া জানান, আমরা নিশ্চিত র‍্যাবই সবুজ ও লাবুকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু র‍্যাব বিষয়টি স্বীকার করছেনা। গত তিন দিন ধরে তারা কোথায় আছে, কারা কাছে আছে, জীবিত না মৃত নাকি গুম হয়েছেন ? কিছুই জানতে পারছিনা। একেক সময় একেক রকম তথ্য আমাদের কাছে আসছে। কোন সময় তথ্য আসছে ঢাকায় র্যাব হেড কোয়ার্টারে তাদের রাখা হয়েছে। আবার বলা হচ্ছে, সিরাজগঞ্জে র‍্যাবের কাছে আছে। আমরা সেখানেও খোঁজ নিয়েছি। তথ্য পেয়েছি কুষ্টিয়া র‍্যাব-ডিবি পুলিশের কাছে দিয়ে দেয়া হয়েছে। সেসব জায়গায়ও খোঁজ নিয়েছি। কিন্তু কেউই সবুজ লাবুর সন্ধান দিচ্ছে না। সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরেও তাদের সন্ধান না পাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আদালতের আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছি। সংবাদ সম্মেলনে জিনিয়া তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট শোক দিবসের অনুষ্ঠানে সংঘর্ষের সময় সবুজ-লাবু সার্বক্ষণিক জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গেই ছিলেন। ওই দিন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত ভিডিও ফুটেজ দেখলেই এর সত্যতা মিলবে। এছাড়া সংঘর্ষে নিহত সবুজ হোসেনকে কারা মেরেছে সেটাও ওই সব ভিডিও ফুটেজে আছে। তিনি আরো বলেন, সবুজ-লাবু দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাদের বিরুদ্ধে কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নেই। এ সময় সবুজের স্ত্রী বলেন, আমার স্বামী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, রোজা রাখেন। তার কারণেই কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়া এলাকায় সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের এনএস রোডের ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করতে পারছেন। সবুজের স্ত্রী সবার প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের বিগত পাঁচ বছর মেয়াদে এবং বর্তমান সময়ে আমার স্বামী সবুজ কোন অন্যায় কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে এমন প্রমাণ কি কেউ দেখাতে পারবেন ? আর আমার স্বামী এবং লাবুর বিরুদ্ধে যদি কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকতো তাহলে কীভাবে তারা সরকার কর্তৃক একাধিক অস্ত্রের লাইসেন্স পেল ? তিনি আরো বলেন, ১৫ আগস্ট শোক র্যালি শেষে কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ ও তার ক্যাডাররা নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। ওই দিন টিভি নিউজে দেখা গেছে মোমিজের বোনের দেবর চাকুরিচ্যুত পুলিশ কর্মকর্তা আনিচুর রহমান আনিস কিভাবে নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে শর্টগানের গুলি ছুড়ছে ? জিনিয়া সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, সবুজ হোসেন হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। প্রায় এক বছর ধরে রাজনীতির বাইরে থাকা মোমিজ সেদিন কেন ক্যাডারদের নিয়ে শোক মিছিলে অংশ নিল ? তাই সঠিক তদন্ত করলেই বেরিযে আসবে কারা সবুজ হোসেনকে খুন করেছে, কি কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে ? সবুজের স্ত্রী দাবি করেন, তার স্বামী অল্প দিনেই সব মহলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। তাই তার দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনায় কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক মোমিনুর রহমান মোমিজ গংরা সবুজকে ফাঁসাতে সুপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর মাধ্যমে বহিষ্কৃত ওই নেতা রাজনীতিতে সক্রিয় ও আধিপত্য বিস্তার করতে চাইছে। তিনি আরো বলেন, সবুজ যদি ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকে তবে তাকে বিচারিক আইনের আওতায় সোপর্দ করা হোক। বিচারে তার যে শাস্তি হয় আমরা মেনে নেব।সংবাদ সম্মেলন শেষে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব চত্বরে অনশন কর্মসূচি পালন করেন সবুজের পরিবারের সদস্যরা। কর্মসূচিতে সবুজের মা সাহিদা খাতুন, ছেলে শেখ শাহেদ হোসেন ও মেয়ে সুমাইয়া শেখ উপস্থিত ছিলেন। গত কয়েক দিন ধরে সবুজ-লাবু `র‍্যাবের হাতে গ্রেফতার` সংবাদটি টক অব দ্যা ক্যান্ট্রিতে পরিণত হয়। সাংবাদিকসহ প্রশাসনের কাছে ক্ষমতাসীন দলের এই দুই নেতার খবর জানতে চাচ্ছেন সবাই। সবার একটাই প্রশ্ন সবুজ-লাবু তাহলে আসলে কোথাই ? এদিকে, সবুজ-লাবু প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের রহস্যজনক নিরাবতা পালন এবং ভূমিকা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা না হওয়ায় দলের মধ্যে এমনিতেই সংকট রয়েছে। সবুজ-লাবুর এ ঘটনাটি দলের মধ্যে মারাত্মক ইমেজ সংকট তৈরি করেছে। অন্যদিকে, শেখ সাজ্জাদ হোসেন সবুজের মা শাহিদা খাতুন গত শুক্রবার কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ওইদিন ভোর রাতে র‍্যাব সদস্যরা গাজীপুর শহরের একটি রিসোর্ট থেকে তার ছেলে ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান লাবুকেও আটক করেছে। এ সময় রিসোর্ট মালিক মনির হোসেনকেও র্যাব আটক করে বলে তিনি জানান। এদিকে, একটি সূত্র জানায়, শনিবার রাতে র‍্যাব সদস্যরা আটক দুই স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতাকে কুষ্টিয়া ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। তবে ডিবি পুলিশের ওসি সাব্বিরুল ইসলাম এ তথ্য সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন।আল-মামুন সাগর/এআরএ/এমআরআই

Advertisement