স্বাস্থ্য

ছিলেন ‘অত্যাচারী মানবিক’ ডাক্তার, হতে চান ‘চাকর’

‘বাংলাদেশে এমন কোনও হাসপাতাল নেই যেখানে তিনি ফোন করেননি। তার চেনা-পরিচিত এমন কোনও ডাক্তার নেই যাকে তিনি ‘অত্যাচার’ করেননি। ডাক্তারদের কাছে ফোন করেই তিনি বলতেন, ভাই আমার রোগীটা ভর্তি করে দেন, ভাই আমার রোগীটা এখনও ভর্তি হয় নাই কেন? অপারেশনের ডেটটা করে দেন। এমনিভাবে মানবিক কাজে বহু ডাক্তারকে ‘অত্যাচার’ করেছেন তিনি।

Advertisement

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে ২০০১ সালে এমবিবিএস পাস করার পর একটি দিনের জন্য চাকরি করেননি। বাবার নির্দেশে জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য তিনি মানবিক কাজে নিজেকে মনোনিবেশ করেন। গত ১৭ বছরে নিজ এলাকার (জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা) এক লাখেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে দেখেছেন, তাদের ওষুধ দেয়ার চেষ্টা করেছেন।

যে লোকটি ১৭ বছর ধরে নিজ এলাকার রোগীদের সেবা প্রদানের জন্য ডাক্তারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কল্যাণে তিনি এখন দেশের ১৬ কোটির বেশি জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। দেশের মানুষের কল্যাণে তিনি এখন জনগণের ‘চাকর’ বা ‘সেবক’ হয়ে স্বাস্থ্য সেক্টর পরিচালনা করতে চান। তিনি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ডা. মুরাদ হাসান।

বৃহস্পতিবার (১০ জানুয়ারি) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) শহীদ ডা. মিলন অডিটরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে নিজের এই জীবন কাহিনি জানান তিনি।

Advertisement

ঢামেকের এমবিবিএস প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টশন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করছিলেন। নিজের স্মৃতিচারণে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বললেন, আমি আগে থেকেই জনগণের সেবক বা চাকর ছিলাম। বহু ডাক্তারকে মানবিক (রোগীর চিকিৎসা) কাজের জন্য ‘অত্যাচার’ করেছি। যেদিন থেকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছি, সেদিন থেকে আরও বড় চাকর হিসেবে নিজেকে মনে করছি।

তিনি সবাইকে মনিব হিসেবে এবং নিজেকে চাকর হিসেবে মনে করে কাজ করে যেতে চান।

মুরাদ হাসান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, সবচেয়ে বেশি মেধাবিরা ডাক্তার হবেন, তারা সবচেয়ে বেশি সেবা দেবেন। এ জাতির প্রত্যাশাও তাই। তিনি জানালেন, তিনি ডাক্তারদের জন্য, তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করতে চান। তবে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন পূরণে ডাক্তারদের কাছ থেকেও তিনি সহায়তা কামনা করেন।

স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী বলেন, মানুষ ডাক্তারদের দেখে ভয় পায়, ডাক্তারদের কাছে যেতে চায় না। কারণ, গেলে অনেক টাকা ভিজিট দিতে হবে, অনেক টেস্ট করাতে হবে। মানবিক চিকিৎসক হয়ে জনগণের মন থেকে এ ভীতি দূর করতে হবে।

Advertisement

তিনি জানান, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাকালে ২০০০ সালের ২৮ জানুয়ারি তিনি বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের আক্রমণের শিকার হন। তার বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কেটে পড়ে যায়। ওই সময় বিএনপি-জামায়াতের তিন দিনের হরতাল চলছিল। সেদিন রাত ১২টায় তাকে মারাত্মক আহত অবস্থায় ঢামেকের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে আনা হয়। অধ্যাপক ডা. সাফখাত হোসেন খন্দকার তার অস্ত্রোপচার করে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রতিস্থাপন করেন। সে হিসেবে তিনিই দেশের প্লাস্টিক সার্জারি প্রতিস্থাপনের প্রথম রোগী বলে দাবি তার।

এমইউ/জেডএ/জেআইএম