বিশেষ প্রতিবেদন

হাসিনা মাহাথিরের মতো স্বৈরাচার হলে আমার আপত্তি নেই

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর। গবেষণা করছেন উন্নয়নের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে। রাজনীতি, উন্নয়ন, গণতন্ত্রের প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র।

Advertisement

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদের ‘গণতন্ত্র মডেল’র দিকে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন। দুর্নীতি রোধে আশু পদক্ষেপ নিলে সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়বে, যা বৈধতার সংকট দূর করবে বলেও মনে করেন এ বিশ্লেষক। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি।

জাগো নিউজ : আগের পর্বে সরকারের নানা চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছেন। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুশাসনের অভাব কীভাবে মেলাবেন?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : গত ১০ বছর ধরে এই সরকার ক্ষমতায়। আমরা সুশাসনের প্রচণ্ড অভাব লক্ষ্য করেছি। এই সরকারের ওপর ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিবাজদের প্রভাব আছে। নতুন এই সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিজ্ঞা কতটুকু পূরণ করতে পারবে, সেটাই দেখার বিষয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সরকার নতুন করে যাত্রা শুরু করলে প্রশংসা পাবে বলে মনে করি। তবে মনে রাখতে হবে, দুর্নীতিবাজদের দিয়ে দুর্নীতি রোধ করা যায় না।

Advertisement

আরও পড়ুন >> বেকার সমস্যাই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জদুর্নীতি দমন করতে হলে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। যেমন- ব্যাংক খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সম্পূর্ণ ক্ষমতা দিতে হবে। ২০০ বছরের ইতিহাসে দেখা গেছে, কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের সঙ্গে বসেন না। অথচ আমাদের এখানে অর্থমন্ত্রী গভর্নরকে হোটেলে ডেকে নিয়ে সিআরআর পরিবর্তন করিয়েছেন। এটি একটি টেকনিক্যাল বিষয়, যা একেবারেই বাংলাদেশ ব্যাংকের এখতিয়ার ভুক্ত। অথচ অর্থমন্ত্রী এখানে প্রভাব খাটিয়ে সিআরআর পরিবর্তন করলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক, পিএসসি, দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রভাব খাটালে রাষ্ট্রের কাঠামো শক্তিশালী হয় না। বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, তবুও তাকে ধরা গেল না। কেন? দুদকের চেয়ারম্যান খুবই ভালো মানুষ। কিন্তু তিনি পদক্ষেপ নিতে পারছেন না, কারণ হয়তো উপর মহল থেকে চাপ আছে। দুদক, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তিশালী করতে হলে রাজনৈতিক চাপ কমাতে হবে।

জাগো নিউজ : সবকিছুই রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত। এই চাপ কমানো সম্ভব কি?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : সরকার মানে একটি অর্গানাইজেশন। আওয়ামী লীগ তাদের ইশতেহারে বলেছে, দুর্নীতি একেবারে দূর করবে। তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতেই আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করছি। কীভাবে দুর্নীতি রোধ করতে পারেন, তার জন্য আমরা পরামর্শ দিতে পারি। কিন্তু করবেন কিনা, তা আমরা বলতে পারি না।

Advertisement

দুর্নীতি রোধ করা সম্ভব এবং সেটা নির্ভর করে ব্যক্তির ওপর।

জাগো নিউজ : একজন ব্যক্তি চাইলেই কি সব সম্ভব?

আরও পড়ুন >> নতুন দায়িত্ব ‘চ্যালেঞ্জ’ মনে করছেন আবদুল মোমেনখোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : মালয়েশিয়ায় এক সময় ব্যাপক দুর্নীতি ছিল। মাহাথির মুহাম্মদ ক্ষমতায় আসার পরই চিত্র পাল্টে যায়। আমি বহুবার সে দেশে গিয়েছি। তিনি তথাকথিত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নন। যদিও তিনি নির্বাচন করেই ক্ষমতায় এসেছেন। শেখ হাসিনা মাহাথিরের মতো স্বৈরাচার হলে আমার আপত্তি নেই। গণতন্ত্রের দুর্বলতা কাটিয়ে খানিক স্বৈরনীতি অবলম্বন করলেই দুর্নীতি রোধ করা যায়। যদি শেখ হাসিনা মাহাথিরের মতো নীতি অবলম্বন করেন, তাহলে দুর্নীতি দূর করা সম্ভব। নইলে দুর্নীতি আরও বেড়ে যাবে। আমি মনে করি, দুর্নীতি রোধে সরকার খানিক স্বৈরনীতি অবলম্বন করুক।

জাগো নিউজ : রাজনৈতিক সংকট জিইয়ে রেখে স্বৈরনীতি তো আরও বিপদ ডেকে আনতে পারে?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : গণতন্ত্রে সংসদীয় ব্যবস্থা হচ্ছে দুই চাকার সাইকেল। এক চাকায় কোনোভাবেই চলতে পারে না। সরকার এবং বিরোধী দল হচ্ছে সাইকেলের দুই চাকার মতো। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের সংসদে বিরোধী দল শত্রুতে পরিণত হয়েছিল। এর কারণ হচ্ছে আদর্শগত বিভাজন। অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের পর যারা ক্ষমতায় এসেছে, তারা স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি নয়। জনগণ এখন তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে।

জাগো নিউজ : কিন্তু তাহলে তো সংসদ ‘এক চাকার সাইকেল’- ই ...

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : অনেকটা তা-ই। স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে, সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকছে না। সংসদে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা দরকার, যারা মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুতে বিশ্বাস রাখবে। এমন একটি বিরোধী দল গঠন করাই রাজনীতির অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

জাগো নিউজ : সরকার তো বিরোধী দলে বিশ্বাসী নয়। বিরোধী শক্তিকে নিঃশেষ করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে… খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : আজকের এই সংকট ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জঘন্য হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি পুনর্বাসিত হয়েছিল। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধের হত্যাকারীদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর আশ্রয় মিলবে না। এ কারণেই আমরা এমন একটি বিরোধী দল চাই যারা আওয়ামী লীগের বিরোধী কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের।

জাগো নিউজ : এমন বিরোধী শিবিরে কারা আসতে পারত?

আরও পড়ুন >> ড্রাইভিং সিটে বসবে প্রাইভেট সেক্টর : অর্থমন্ত্রীখোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : বামপন্থীরা চাইলে শক্তিশালী বিরোধী দল হতে পারত। কিন্তু তারা দিনে দিনে আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। আর ডানপন্থীদের ওপর তো আস্থা রাখা যায় না। মধ্যপন্থী এবং বামপন্থীরা মিলে একটি সরকারবিরোধী বলয় গড়ে তুলতে পারে।

জাগো নিউজ : এই পরিস্থিতির মধ্যে নতুন কোনো সংকটের আভাস মেলে কিনা? খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : একটি দল দিয়ে সংসদ ভালো চালানো যায় না। সব একতরফা হয়ে যায়। যদিও অনেক উদাহরণ আছে একদলীয় শাসন ব্যবস্থার। চীনে এক দলেই সব চলছে। হংকং, সিঙ্গাপুরেও অনেকটা তা-ই। কিন্তু আমাদের রাজনীতির ইতিহাস এবং সংস্কৃতি দ্বি-দলীয় বা বহুদলীয়।

জাগো নিউজ : চীন, হংকং বা সিঙ্গাপুরের সরকারগুলো জনআস্থা রেখে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। শেখ হাসিনার সরকারের জনআস্থায় বড় ধরনের সংকট আছে বলে মনে করা হচ্ছে…

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। চীনে কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় আছে। অন্যদের মাথাব্যথা নেই। চীনের মাথাব্যথা ব্যবসা নিয়ে। কে ব্যবসার সুযোগ করে দিল তা নিয়ে তাদের হিসাব-নিকাশ। উন্নয়নকে তারা সবার আগে জায়গা দিচ্ছে।

জাগো নিউজ : এমন উন্নয়নে গণতন্ত্র চাপা পড়ে। বাংলাদেশে তাই হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে… খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : আমি ঠিক তা মনে করি না। মাহাথিরের গণতন্ত্রেও উন্নয়ন আছে। দক্ষিণ কোরিয়া স্বৈরনীতি অবলম্বন করেই উন্নয়নে গেছে। এশিয়ার চারটি দেশের উন্নয়ন নিয়ে বিশ্বব্যাংক বিস্ময় প্রকাশ করেছে, যেসব দেশে গণতন্ত্র প্রশমিত রাখা হয়েছে।

জাগো নিউজ : স্বৈরনীতির পতনের খবরও আছে। ফিলিপাইন দাঁড়াতে পারেনি। গাদ্দাফি, সাদ্দামের পরিণতি ভয়াবহ হলো…

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : গাদ্দাফি আর মাহাথিরের বিষয় এক নয়। গাদ্দাফি স্বৈরপন্থায় ক্ষমতায় এসেছেন। আর মাহাথির নির্বাচিত হয়ে এসে স্বৈরনীতি অবলম্বন করেছেন। জনগণ মাহাথিরকে সমর্থন করেছে। কিন্তু ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষেত্রে মাহাথির যা ভালো মনে করেছেন, তাই করছেন। জনগণের সঙ্গে আর আলাপের প্রয়োজন মনে করেননি।

আরও পড়ুন >> ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টাল মোকাবেলা করবেন তথ্যমন্ত্রী

জাগো নিউজ : তাহলে বাংলাদেশ কি মাহাথিরের পথে, যেখানে গণতন্ত্রের চাইতে উন্নয়ন বড় করে দেখা হচ্ছে?

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : গণতন্ত্র একেবারে আড়ালে পড়ে যাচ্ছে, আমি তা মনে করি না। গণতন্ত্র হচ্ছে চর্চার ব্যাপার। আমাদের এখানে দীর্ঘ সময় সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্র হত্যা করেছে। উন্নয়ন হয়নি। ১৯৯১ সালে আমাদের নতুন করে শুরু করতে হয়েছে।

গণতন্ত্র সরকার দিতে পারে না। এটি চর্চার ব্যাপার। অধিকার অর্জন করে নিতে হয়। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ঠিক থাকলে এমনিতেই গণতন্ত্রের চর্চা হবে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে সরকারের উন্নয়ন যথেষ্ট বলেই মনে করা হচ্ছে।

জাগো নিউজ : শিক্ষার উন্নয়ন নিয়েও তো বিতর্ক আছে… খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : শিক্ষার প্রসার আর মান আলাদা বিষয়। এখন দেশে শিক্ষার প্রসার ঘটছে। ৯০ ভাগ মানুষ স্বাক্ষর করতে পারলে জাতির উন্নয়ন ঘটবেই। মান নিয়ে পরে উন্নয়ন ঘটবে। শিক্ষার প্রসারের কারণে শ্রীলঙ্কা এত এগিয়ে গেল। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে যদি প্রচুর ব্যয় করা যায়, তাহলে আগামী ২০ বছরে বাংলাদেশ উন্নত দেশে যাবে। এরপর গণতন্ত্রও ভালো অবস্থানে দাঁড়াবে। এর আগে ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়েই যাবে বলে মনে করি।

জাগো নিউজ : তাহলে আপাতত ভাঙা-গড়াই নিয়তি… খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : গণতন্ত্রের সংকট থাকার পরও কিন্তু বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণকে সম্পদে রূপ দিতে পারলেই উন্নয়ন সম্ভব। বাঙালিদের মেধা ও পরিশ্রম করার ক্ষমতা যে কোনো দেশের নাগরিকের চেয়ে বেশি।

১৯৭২ সালে বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকজন শিল্পপতি ছিল। এখন গার্মেন্টস খাতে বাংলাদেশের শিল্পপতিরা বিশ্বসেরা। আমরা ভারতকে পার করেছি। পাকিস্তানের মানুষ বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে চায়। এটি তো বিস্ময়। এ কারণেই আমরা মাহাথিরের গণতন্ত্রের মডেলের কথা বলছি। তবে এমন শাসন ব্যবস্থায় ভালো নেতৃত্ব দরকার।

জাগো নিউজ : কিন্তু এখন তো বিশ্বমহলকে এড়িয়ে আপনি দেশ শাসন করতে পারবেন না। অন্যরাও বাধা হতে পারে…

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : হ্যাঁ, অন্যরাও বাধা হতে পারে। তবে এখন হবে না। উন্নয়নের প্রসার ঘটলে পাশের দেশও বাধা হতে পারে। চীন ও ভারত বাংলাদেশে ঢুকে গেছে। এ দুটি দেশ বাংলাদেশে ব্যবসা করতে চাইলে বাধা আসবেই। তবে উন্নয়ন ঘটে গেলে ব্যবসা ঠেকিয়ে রাখা যায় না। আর ভারত ও চীন বাংলাদেশের জন্যও বড় মার্কেট।

গার্মেন্টসে আমরা সবচেয়ে ভালো করছি এখন। ইউরোপ-আমেরিকার বাজার দখল বাংলাদেশি পোশাকে। তথ্য-প্রযুক্তিতে ঘাটতি রয়েছে। এক্ষেত্রে উন্নয়ন করতে পারলেই বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারব।

জাগো নিউজ : পুরনো একটি বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাই। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন। আজও তদন্ত প্রতিবেদন অপ্রকাশ রয়ে গেল। কী বলবেন এতদিন পর?

আরও পড়ুন >> ভূমির দুর্নীতিতে জিরো টলারেন্সের ঘোষণা মন্ত্রীরখোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ : উপরের মহলের কেউই চান না যে আমি তা মনে রাখি। আমি মনে করি, বিশেষ সিন্ডিকেট শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সিন্ডিকেট না ভাঙতে পারলে শেয়ারবাজারে স্থিরতা আসবে না।

গুটিকয়েক ব্যক্তি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ দখল করে রাখছে। কিন্তু কেন? এক হাজার সদস্য করলে সমস্যা কোথায়? তার মানে কয়েকজন ব্যক্তির হাত থেকে মুক্ত করার কোনো উপায় পাচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।

কেলেঙ্কারির কারণে কয়েকজনের শাস্তি হলো। কিন্তু মূল হোতারা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। এ কারণেই শেয়ারবাজারে সর্বমহলের আস্থা ফিরছে না।

এএসএস/এমএআর/বিএ