খেলাধুলা

তামিমের উইকেট নিয়েই বেশি খুশি মাশরাফি

 

এ ম্যাচের আগে তিন দিনের পাঁচ ম্যাচে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের একজন ক্রিকেটারও ম্যাচসেরা পারফরমার হতে পারেননি। রংপুর আর চিটাগাং কিংসের প্রথম ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন, চিটাগাং কিংসের ভিনদেশি পেসার রবি ফ্রাইলিঙ্ক।

Advertisement

দ্বিতীয় ম্যাচের সেরা আফগান হজরতউল্লাহ জাজাই। দ্বিতীয় দিন প্রথম ম্যাচের সেরা পারফরমার কুমিল্লার শহিদ আফ্রিদি। ওইদিন দ্বিতীয় খেলার সেরা পারফরমার রিলে রুশো। আজ তৃতীয় দিন প্রথম ম্যাচে আবার ম্যান অব দ্য ম্যাচ ঢাকার আফগান রিক্রুট জাজাই। এটাই শেষ নয়।

এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাটসম্যান হাফ সেঞ্চুরি করতে পারেননি। সাকিব আল হাসানের ৩/১৮ ছাড়া কোনো বোলার ৪ উইকেটের পতনও ঘটাতে পারেননি। মোটাদাগে এবারের বিপিএলে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সামগ্রিক পারফরমেন্স ঠিক প্রত্যাশিত মানে পৌঁছেনি।

দেশের পারফরমারদের এমন নিষ্পৃহতা আর অনুজ্জ্বলতায় জ্বলে উঠলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। বল হাতে আসর সেরা কুমিল্লা রাইডার্সের ব্যাটিংআপে ভাঙন ধরিয়ে রংপুর রাইডার্সের সহজ জয়ের নায়ক মাশরাফি। ১৬ রানে ৪ উইকেট দখল করে বিপিএল তথা তার টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার সেরা এ বোলিংয়ের পুরস্কার হিসেবে ম্যাচ সেরাও হয়েছেন মাশরাফি।

Advertisement

মধ্য তিরিশে দাঁড়িয়ে সংসদ নির্বাচনে জিতে এসে দু’দিন পুরো অনুশীলন করার সুযোগ পাননি। তাতে কী? বল হাতে ঠিক জ্বলে উঠে মাশরাফি জানান দিলেন, ভালো পারফরম করা আর দল জেতাতে সবার আগে দরকার শতভাগ মনোযোগ। মনোসংযোগ। সঙ্গে আত্মনিবেদন।

আর তাই বাকিরা যখন নিজেদের হারিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছেন, তখন মাশরাফির বোলিং আগুনে পুরে ছারখার এভিন লুইস, তামিম, স্মিথ, শোয়েব মালিক, বিজয় আর আফ্রিদির গড়া শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ।

কিন্তু শুনে অবাক হবেন, এমন মাঠ আলোকিত করা ম্যাচ উইনিং পারফরমেন্সের পরও মাশরাফি ভাবলেশহীন। অন্যরা পারছেন না। তরুণরা রীতিমত চরম ব্যর্থ। অথচ তিনি একাই আসর সেরা ব্যাটিং লাইনআপে ধ্বস নামালেন। তা নিয়ে এতটুকু উচ্ছাস নেই। ভাবখানা এমন, আসলে আমি আমার সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে চেষ্টা করেছি। এটাই শেষ কথা।

আর এখনই জের টানার কিছু নেই। অনেক ওঠা নামার পালা সামনে। তাই আমার এ পারফরমেন্সকে খুব বড় করে দেখার কিছু নেই। তাইতো আত্মনিবেদনের প্রসঙ্গ আসতেই মুখে এমন কথা, ‘না আসলে সবাই চেষ্টা করছে। সবসময় যে সব প্লেয়ারের সব ঠিক মত যায়, তাও না। দেখা যাবে এখন ঠিক মত যাচ্ছে। পরে আবার খারাপ যাবে। টি-টোয়েটি ফরম্যাট অনেক আনপ্রেডিক্টেবল। যে উইকেটে খেলছি সেটাও আনপ্রেডিক্টেবল। আসলে দুই তিন ম্যাচেও কাউকে ভেরি হাইলাইটেড করাও কঠিন। খারাপ ভালো দুই দিকে বিচার করা খুব কঠিন। আর প্রেসারও ছিল, যখন চার-পাঁচ উইকেট পড়ে গেছে। তবে এটা সত্যি আমাদের পুরো বোলিং গ্রুপ ভালো বোলিং করেছে।’

Advertisement

আজকের বোলিংটাকে কতটা হাইলি রেট করছেন? এমন প্রশ্নর জবাবে বিপিএলকে এতটুকু ছোট না করে মাশরাফি বলে দিলেন, ‘আমি স্পেশালি সবসময় ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ কাউন্ট করি। আমার কাছে ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচের গুরুত্ব আরও বেশি থাকে। তবে আমি যখন যেটা খেলছি, তাতেও আমার সর্বোচ্চ দিয়ে খেলার চেষ্টা করি; কিন্তু যদি আপনি স্পেশালি কাউন্ট করার কথা বলেন, তাহলে আমি শুধু ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ কাউন্ট করি। আর এসব ম্যাচে আমি শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করি। তবে কাউন্টের ক্ষেত্রে আমি ইন্টারন্যাশনালটাকেই কাউন্ট করি।’

আজকে বোলিং সাফল্যের রেসিপি কি ছিল? কাটারগুলোকে কি খুব ভাল ধরেছে? এমন প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হলো মাশরাফি স্বীকার করলেন, ‘আমি হিট করতে চেয়েছি জোরে। ঠিক জায়গায় বল করতে পেরেছি। আমি একা না, সবাই। এটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর সবাই ভালো বল করেছে ‘

আজ দিনের প্রথম ডেলিভারি করার পরই তার মনে হচ্ছিলো আজ কিছু একটা হতে পারে। সেটা কি কারণে? তাও জানিয়েছেন। প্রথম বল করার পর মনে হয়েছে, এ উইকেটে ডাবল পেস থাকবে। মানে একটা ঠিক আসবে, অন্যটা আস্তে বা থেমে আসবে।

মাশরাফি বলেন, ‘প্রথম বল করার পর আমার কাছে মনে হয় যে উইকেটে ডাবল পেস হওয়ার চান্স আছে। ওইখান থেকে মনে হচ্ছিল যে, রাইট লেন্থে হিট করতে পারলে ভালো কিছু হবে এই উইকেটে। লাকি আমরা যে, আর্লি উইকেট গুলো নিতে পেরেছি। খালি উইকেট পেলে তো হয় না, রাইট লেন্থে বল করাটা ভেরি ইম্পরট্যান্ট। আমার পরে যারা এসেছে সবাই ঠিক জায়গায় বলটা করতে পেরেছে।’

এভিন লুইস আর স্টিভেন স্মিথের মত বিশ্বমানের হার্ড হিটার থাকার পরও তার আজকের চার উইকেটের মধ্যে তামিমকে ফিরিয়েই বেশি সন্তুষ্ট মাশরাফি। তার কারণও আছে। তার ভাষায়, ‘চার উইকেটের ভেতরে অবশ্যই তামিমের উইকেটটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্মিথেরটাও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তবে তামিম সবসময় আমাকে ভালো হ্যান্ডেল করে। দীর্ঘ দিন তামিম আমাকে ভালো খেলে আসছে। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে, ফোর ডে- যেটাই খেলেছি, তামিম সবসময় আমাকে ভালো হ্যান্ডেল করে। আমার বিপক্ষে তার স্ট্রাইক রেটও ভালো থাকে। কাজেই তামিমের উইকেটটা অবশ্যই আমার জন্য পজেটিভ ছিল। যেহেতু ও আমার বিপক্ষে সবসময় সফল থাকে, ওর উইকেট নেয়াটা আমার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির টনিক হিসেবে কাজ করে। তারপরে স্মিথ, লুইস- ওরা কি করতে পারতে পারে আমরা সবাই জানি। আমার ক্ষেত্রে তামিমের উইকেটটা ইম্পরট্যান্ট ছিল।’

এআরবি/আইএইচএস/বিএ