দেশজুড়ে

এখন তিনিই ‘সবে ধন নীলমনি’

এক সময় কিশোরগঞ্জকে নিয়ে ঈর্ষা ছিল দেশজুড়ে। বিশেষ করে স্বাধীনতার পর থেকে বেশিরভাগ সময় কিশোরগঞ্জের আকাশ ছিল তারায় তারায় খচিত।

Advertisement

বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন সবশেষ মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে বরাবরই সামনের কাতারে ছিলেন এ মাটির গর্বিত সন্তানেরা। তেমনি দেশ পরিচালনায় বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন ছিলেন কিশোরগঞ্জের বরেণ্য রাজনীতিবিদরা।

স্বাধীনতার পর এমন কোনো সরকার নেই যেখানে এ জেলার প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ ছিল না। এ জেলার গুণী ব্যক্তিদের বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য ছিল ‘কিশোরগঞ্জের সবাই এক একটা হীরের টুকরা।’

তবে কিশোরগঞ্জবাসীর এ গৌরবের দিন যেন শেষ হতে চলেছে! নানা কারণে খসে পড়ছে এক-একটি তারা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর গঠিত মন্ত্রিসভায় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা কিশোরগঞ্জের কারও ঠাঁই না হওয়ায় এমনটাই মনে করছেন জেলাবাসী। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটলো দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের স্মৃতি বিজরিত কিশোরগঞ্জে।

Advertisement

তবে দেশের আকাশে এখনও জ্বলছে রাষ্ট্রনায়কের তারকাটি। মহামান্য রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন, কিশোরগঞ্জের কৃতসন্তান মো. আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট। এখন তিনিই ‘সবে ধন নীলমনি।’

অথচ, এইতো সেদিন, দেশের রাষ্ট্রপতি, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সেনাপ্রধান, পুলিশ প্রধান, এলজিআরডি মন্ত্রীসহ এক ঝাঁক তারার আলোয় আলোকিত ছিল হাওরকন্যা কিশোরগঞ্জ।

সদ্য সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিদায় জানাতে-না জানাতেই জেলাবাসীকে শুনতে হলো, তার জেলায় এবার জাতীয় সংসদে মন্ত্রীর চেয়ারে কেউ বসছেন না। বর্ষিয়ান নেতা সৈয়দ আশরাফের শোক কাটতে না কাটেতেই এমন সংবাদ যেন কেউ মেনে নিতে পারছেন না।

জানা গেছে, স্বাধীনতার পর প্রথম সংসদ থেকে শুরু করে দশম সংসদ অবধি মন্ত্রিসভায় কিশোরগঞ্জের প্রতিনিধিত্ব ছিল। ১৯৭৩ সালে প্রথম সংসদে উপনেতা ও শিল্পমন্ত্রী ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম। আইন, সংসদ ও বিচার বিষয়ক মন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর এবং আসাদুজ্জামান খান ছিলেন পাটমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোশতাক আহমদের মন্ত্রিসভায় আসাদুজ্জামান খান বন্দর, নৌবাহিনী ও অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

Advertisement

১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদে ডা. ফজলুল করিম স্বাস্থ্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদে হাবিবুল হক ভূঁইয়া আইন, বিচার ও সংসদ মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদে মো. মুজিবুল হক চুন্নু ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম সংসদে এ বি এম জাহিদুল হককে বন্দর, জাহাজ ও নৌচলাচল উপমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ডেপুটি স্পিকার, জিল্লুর রহমান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

২০০১ অষ্টম সংসদে ড. এম ওসমান ফারুক শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে নবম সংসদে বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ স্পিকার এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল আবদুল হামিদ প্রথম মেয়াদে রাষ্ট্রপতি এবং ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদে পুনরায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

২০১৫ সালের ১৬ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান সৈয়দ আশরাফ। একই সংসদে মহাজোটের শরিক হিসেবে জাতীয় পার্টি থেকে মো. মুজিবুল হক চুন্নু শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

দেশের দুঃসময়ে নিজের জীবন বাজি রেখে দল ও দেশের জন্য কাজ করেছেন প্রয়াত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মো. জিল্লুর রহমান, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মতো সৎ, সাহসী ও নির্লোভ রাজনীতিকরা। তাই সরকার ও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে এ জেলার মানুষের আসীন থাকাটা খুব বেশি কিছু না। এখানকার মানুষ মনে করেন, একাদশ জাতীয় সংসদেও সরকারের মন্ত্রী পরিষদে জায়গা হবে কিশোরগঞ্জের। এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

নূর মোহাম্মদ/এমএএস/এমএস