নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের মাধ্যমে গত বছর বিশ্ব পরিমণ্ডলে প্রশংসায় ভাসছিল সৌদি আরব। কিন্তু দেশটিতে নারীদের ওপর এখনো অনেক বিধি-নিষেধ জারি আছে; এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পুরুষতান্ত্রিক অভিভাবক ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় একজন নারীকে তার পরিবারের বাবা, ভাই, স্বামী অথবা ছেলের অধীনে থাকতে হয়; যেখানে নারীদের হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন এই পুরষরা।
Advertisement
চলতি সপ্তাহে এই বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোচনা শুরু হয়; যখন সৌদি এক তরুণী বাড়ি-ঘর ছেড়ে ব্যাংককে পালিয়ে গিয়ে একটি হোটেলে অবস্থান নেয়। ওই তরুণী জানায়, তাকে যদি সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হয়; তাহলে বাবার হাতে খুন হতে পারেন তিনি।
পাসপোর্টের জন্য আবেদন, দেশের বাইরে ঘুরতে যাওয়া, সরকারি বৃত্তি নিয়ে বিদেশে পড়াশোনা, বিয়ে করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একজন সৌদি নারীকে পরিবারের পুরুষ সদস্যের অনুমতি নিতে হয়। আরও পড়ুন : স্ত্রীর সঙ্গে ফেসবুকে চ্যাটিং, থানায় যুবককে বেধড়ক মারপিট ডিসির
মিসরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সাংবাদিক মোনা এলতাহায়ি বলেন, এটা এমন একটি বিষয় যা প্রত্যেক সৌদি নারী এবং মেয়েকে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভোগায়। নারীর বিরুদ্ধে সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণে জাতিসংঘের এক নীতিমালায় ২০০০ সালে স্বাক্ষর করেছে সৌদি। এতে স্বাক্ষরের পর শরীয়াহ অথবা ইসলামি বিধি-বিধান অনুযায়ী লিঙ্গ সমতা নিশ্চিতের অঙ্গীকার করে সৌদি।
Advertisement
এছাড়া রক্ষণশীল সৌদি আরব দেশটির নারী ও মেয়েদের খেলাধুলার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বাতিল করেছে। পাশাপাশি স্টেডিয়ামে বসে নারীদের ফুটবল ম্যাচ দেখার অনুমতি দিয়েছে। তবে নারীদের সঙ্গে বৈষম্য রোধে কোনো আইন এবং বৈষম্যের আইনি সংজ্ঞা না থাকায় সৌদি কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতার অভিযোগ এনে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা।
সৌদি আরবের পুরুষ অভিভাবকত্ব ব্যবস্থাকে সমাজ এবং অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। কোরআনের আয়াত থেকে সৌদি আরবে এই ধর্মীয় বিধান চালু আছে বলে ব্যাখ্যা রয়েছে।
আরও পড়ুন : জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে থাইল্যান্ড ছাড়লেন সৌদি তরুণী
২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি আরবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষভাবে অভিভাবকত্বের প্রয়োজনীয়তার শর্ত রয়েছে। এই শর্তের বিরোধিতা করায় দেশটির বেশ কিছু নারী আটক এবং বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।
Advertisement
২০০৮ সালে প্রখ্যাত নারী মানবাধিকার কর্মী সামার বাদায়ি তার বাবার বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে বাড়ি ছাড়েন। তার ঠাঁই হয় একটি আশ্রয় কেন্দ্রে। পরে পিতার অভিভাবকত্ব বাতিল করতে আদালতে মামলা করেন তিনি।
তার বাবাও মেয়ের বিরুদ্ধে অবাধ্য হওয়ার অভিযোগ এনে পাল্টা মামলা করেন। ২০১০ সালে দেশটির একটি আদালত তাকে আটকে রাখার নির্দেশ দেন। এই মামলার ঘটনায় সৌদি মানবাধিকার কর্মীদের মাঝে আলোড়ন পড়ার আগেই সাত মাস কারাগারে কেটে যায় তার। পরে আদালত মামলা বাতিল করে দেন।
আরও পড়ুন : একমাত্র তুরস্কই শান্তি আনতে পারে সিরিয়ায় : এরদোয়ান
২০১৭ সালে দেশটির মরিয়ম আল-ওতাইবি নামের অপর এক নারী মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। পিতার অবাধ্য হওয়ার অভিযোগে তাকে তিন মাস কারাগারেও কাটাতে হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুরুষতান্ত্রিক অভিভাবকত্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু এই আন্দোলনে অংশ নেয়ায় পরিবারে ভাই ও বাবার নির্যাতনের হুমকির মুখে তিনিও বাসা থেকে পালিয়ে যান। এমনকি যেসব নারীরা দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন তারাও কোনো না কোনো সময় গ্রেফতার হয়েছিলেন।
সূত্র : বিবিসি। এসআইএস/এমকেএইচ