বাবা-মা’র বিয়ের তৃতীয় বছরে পৃথিবীতে আসে ফারিয়া আক্তার দোলা (৫)। বাবা-মা সারাদিন কাজ করতো। নানীর কাছে বড় হয়েছে। তবুও রাতে বাবা-মাকে পেলে এক মুহূর্ত ছাড়ত না দোলা। বুধবার (৯ জানুয়ারি) তার জন্মদিন ছিল। ৫ বছরে পা দিত দোলা। জন্মদিনে মামা মোহাম্মদ হাসানের কাছে বড় ভাল্লুক পুতুল (টেডিবিয়ার) চেয়েছিল সে। তবে সেটি পাওয়ার একদিন আগেই চলে গেল দোলা।
Advertisement
পরিবারের সবাই শোকে কাতর। সবাই বাসায় কাঁদছে। ভাগ্নির জন্য রাত থেকেই স্যার সলিমুল্ল্যাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের গেটের বাইরে বসে ছিলেন হাসান। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ বাড়িতে নিয়ে দাফন করবে। মর্গে প্রতিবেদকের কাছে ভাগ্নির সর্বশেষ স্মৃতিচারণ করেন হাসান।
গুলিস্তান-এয়ারপোর্ট রুটের (৩ নম্বর) বাসচালক হাসান। ভাগ্নির স্মৃতি নিয়ে হাসান বলেন, ‘সাত দিন আগে (৩১ ডিসেম্বর) রাতে নির্বাচনের ডিউটি শেষ করে ওদের বাসায় যাই। সেদিন দোলা আমাকে জিজ্ঞেস করলো, ‘মামা ৯ তারিখে আমার হ্যাপি বার্থ ডে, কি দিবা?’ উত্তরে আমি বললাম, ‘মামুনি তুমি কি চাও?’ দোলা বলল, ‘আমাকে একটা ভাল্লুক পুতুল কিনে দিবা।’ আর ওকে পুতুল কিনে দেয়া হল না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল।’
হাসান জানায়, ‘দোলা ডেমরার কোনাপাড়ার একে মডেল স্কুলের নার্সারিতে পড়তো। প্লে-গ্রুপ থেকে এবার সে নার্সারিতে উঠেছে। সোমবার প্রথম ক্লাস ছিল তার। ক্লাস থেকে বাড়ি ফিরেই নিখোঁজ হয় সে। এরপর মেলে মরদেহ।’
Advertisement
দোলার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তার বাবা ফরিদুল ইসলাম সিটি গ্রুপের টিন তৈরি কারখানায় এবং মা পারভিন আদমজীতে একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন। সারাদিন নানীর সঙ্গে বাড়িতে থাকতো দোলা। সোমবার দুপুরে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে দোলা দুপুরে গোসলে যায়। গোসল শেষে নানী তাকে ভাত খেতে ডাকে। একই সময় তাকে ডাকতে আসে তার বান্ধবী নুসরাত। দোলা ভাত না খেয়ে নুসরাতের সঙ্গে খেলতে চলে যায়। এরপর তাদের না পেয়ে এলাকায় মাইকিং ও ফেসবুকে প্রচারণা চলে।
পরে এলাকাবাসীর কথা শুনে পাশ্ববর্তী মোস্তফার ঘরে গিয়ে খোটের নিচে একজনের ওপর আরেকজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে সেগুলো উদ্ধার করে খাটের উপরে রাখা হয় বলে জানান হাসান।
এ ঘটনায় নিহত আরেক শিশু নুসরাত জাহান (৪) কোনাপাড়ার আইডিয়াল স্কুলের প্লে-গ্রুপে পড়তো। তার বাবা যাত্রাবাড়ীতে ফলের আড়তে কাজ করে। একমাত্র কন্যাকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ গোঁটা পরিবার। রাত থেকেই থানা আর বাসায় দৌড়াদৌড়ি করছে তারা।
এদিকে দুই শিশুর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মঙ্গলবার দুপুরে তাদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক নওশাদ মাহমুদ।
Advertisement
ময়নাতদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুইজনের শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। শ্বাসরোধে মৃত্যুর আলামত মিলেছে। মৃত্যুর আগে ধর্ষণ হয়েছে কিনা সে বিষয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না।’
এদিকে পুলিশের সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘শিশু নুসরাত জাহানের কপালে বাম চোখের ওপরে চাপ লাগা কালচে দাগ রয়েছে। নাকের ওপরেও কালচে দাগ রয়েছে। তবে তার কান এবং যৌনাঙ্গ স্বাভাবিক।’
আর দোলার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, ‘তার গলার ডানপাশের সামনের দিকে কালচে দাগ রয়েছে। তার যৌনাঙ্গ, নাক ও কান স্বাভাবিক পাওয়া গেছে।’
যেই বাড়ি থেকে মরদেহ দুটি পাওয়া গেছে সেখানকার গৃহকর্তা মোস্তফার স্ত্রী ও শ্যালককে সোমবার রাতে আটক করেছে পুলিশ। দুই শিশুর পরিবার বলছে, মূল অভিযুক্ত মোস্তফা পুলিশের হাতে রাতেই আটক হয়েছে। তবে বিষয়টি শিকার করছে না ডেমরা থানা পুলিশ।
ডেমরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশ তদন্ত করছে। মোস্তফাকে ধরতে অভিযান চলছে।’
ডেমরা থানা জানিয়েছে, এলাকার কেউ কেউ মোস্তফাকে রাজমিস্ত্রি, কেউ পোশাক শ্রমিক বলে জানে। তবে সে একজন মাদকসেবী। সে তার স্ত্রী এবং পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে নাসিমা ভিলায় সাবলেট থাকতো।
এআর/এএইচ/এমকেএইচ