খেলাধুলা

দুপুরের স্লো পিচে খুলনার বিপক্ষে কি করবেন ঢাকার জাজাই?

আফগান প্রিমিয়ার লিগে অল্প কিছু দিন আগে ১২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে হৈ চৈ ফেলে দিলেও বিপিএলে তাকে সেভাবে আমলে আনা হয়নি। বরং অনেক তারার ভীড়ে হযরতউল্লাহ জাজাইয়ের কথা কেউ মাথায়ও আনেনি।

Advertisement

ভক্ত-অনুরাগী, সমর্থক আর ক্রিকেট বোদ্ধা ও পন্ডিতদের কেউই হয়ত কল্পনাও করেননি আফগান যুবক জাজাই মাঠে নেমেই নজর কাড়বেন। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে প্রতিপক্ষ বোলিংকে দুমড়ে মুচড়ে দলের জয়ের নায়ক হবেন।

কেউ না ভাবলেও কঠিন সত্য হলো, সেই আফগান যুবা জাজাইই এবারের বিপিএলে প্রথম প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়েছেন। যারা আগে কখনো বিপিএল খেলেননি, অস্ট্রেলিয়া তথা বিশ্ব ক্রিকেটের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র-স্টিভেন স্মিথ আর ডেভিড ওয়ার্নার শুরু থেকেই খেলছেন। কিন্তু তারপরও সে অর্থে বিপিএল এখনো দর্শক প্রিয় হয়ে ওঠেনি।

তার বড় কারণ, টি-টোয়েন্টি ম্যাচে দর্শকরা যা চান, সেই চার-ছক্কার অবাধ প্রদর্শনী খুব কম। প্রতিদিন প্রথম ম্যাচটি হচ্ছে লো স্কোরিং। যাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টির কোনোই আস্বাদন মিলছে না। ৫ জানুয়ারি চ্যাম্পিয়ন রংপুর রাইডার্স আর চিটাগাং ভাইকিংসের কম রানের, নিষ্প্রাণ, আকর্ষণহীন ও ম্যাড়মেড়ে ম্যাচ দিয়ে শুরু। যে খেলায় এক দলের ৯৮ রান টপকাতেও অন্য দলকে শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করতে হয়েছে।

Advertisement

একইভাবে পর দিন মানে ৬ জানুয়ারি দুই অস্ট্রেলিয়ান স্টিভেন স্মিথ আর ডেভিড ওয়ার্নারের লড়াইও জমেনি একদমই। কি করে জমবে? আগে ব্যাট করতে নেমে ওয়ার্নারের সিলেট সিক্সার্স তুলেছিল মোটে ১২৭। ঐ মামুলি স্কোর তাড়া করে স্মিথের কুমিল্লা জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছেছে মাত্র এক বল আগে। তাও আফ্রিদি (২৫ বলে ৩৯*) ত্রাণকর্তা হয়ে দেখা না দিলে ম্যাচটির ফল কি হতো বলা দুষ্কর।

এমন যে আসরের হতশ্রী অবস্থা, তাতে প্রথম প্রাণের সঞ্চার করেছেন ঢাকা ডায়নামাইটসের ২০ বছরের আফগান ওপেনার হযরতউল্লাহ জাজাই। ৫ জানুয়ারি রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ১৯০.২৪ স্ট্রাইকরেটে সাত ছক্কা আর চার বাউন্ডারিতে মাত্র ৪১ বলে ৭৮ রানের ঝড়ো ইনিংস উপহার দিয়ে চমকে দিয়েছেন ঢাকার জয়ের নায়ক জাজাই।

সাকিব আল হাসান আর আন্দ্রে রাসেলের মত দু দু‘জন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার দলে। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে যারা বিশেষ পারদর্শী। সাথে সুনিল নারিন আর কাইরান পোলার্ডের মত অতি কার্যকর পারফরমার। তাদের পিছনে ফেলে প্রথম দিন হযরতউল্লাহ জাজাই ঢাকার ম্যাচ জয়ের রূপকার, ম্যাচ সেরাও। বিষয়টি সাড়া পড়ার মতই।

এই আফগানের চমক জাগানো ব্যাটিং নৈপুন্য, অবলীলায় ছক্কা হাঁকানো এবং পাওয়ার প্লে‘তে উত্তাল উইলোবাজি কাল মঙ্গলবার খুলনা টাইটান্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগেও ঢাকাকে সাহস জোগাচ্ছে। তাই এ ম্যাচের আগে জাজাইয়ের কথাই হচ্ছে বেশি।

Advertisement

পাশাপাশি একটি প্রশ্নও উঠেছে, ‘আচ্ছা জাজাই তো সন্ধ্যার পরে শিশির ভেজা তুলনামূলক সহজ হয়ে যাওয়া পিচে ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছেন, দিনের আলোয় দুপুরে যে ম্যাচটি হচ্ছে সেখানেও কি তা পারবেন? এখন পর্যন্ত দিনের আলোয় যে দুটি ম্যাচ হয়েছে, তার একটিতেও রান হয়নি। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটেনি। সেখানে ব্যাটে ঝড় তোলা বহুদূরে। লুইস, তামিম, ওয়ার্নার, স্মিথ, সাকিব, আন্দ্রে রাসেল, নারিন, পোলার্ডের মত স্পেশালিষ্টরাও কিছু করতে পারেননি। সেখানে তরুণ ও আনকোরা জাজাই কি করবেন? তা নিয়ে সংশয় দেখা যেতেই পারে।

অবশ্য সবদিন আর জাজাইয়ের জ্বলে ওঠার দরকারও নেই। ঢাকায় আছে তারার মেলা। এক ঝাঁক অভিজ্ঞ, পরিণত ও ম্যাচ জেতানো পারফরমার। তাদের এক বা দুইজন জ্বলে উঠলেই ঢাকার জয়ের কেতন উড়বে।

এখন দেখার বিষয়, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা টাইটান্স কাল মঙ্গলবার সাকিবের ঢাকার বিপক্ষে কতটা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। প্রথম ম্যাচে রংপুর রাইডার্সের সাথে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও হেরেছে রিয়াদের দল। ১৭০ রান করতে গিয়ে ১১.১ ওভারে এক উইকেটে ৯০ রান থাকা পরও পারেনি। শেষ ৫৩ বলে ৯ উইকেট হাতে থাকার পরও ৮০ রান করা সম্ভব হয়নি।

ঐ ম্যাচের পর বোঝা গেছে, খুলনা দলে ফিনিশারের অভাব পরিষ্কার। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ, আরিফুল আর ব্রাথওয়েট আছেন। যারা পারেন ঝড় তুলতে। কিন্তু রোববার রাতে তাদের কারো ব্যাটই কথা বলেনি। ঢাকার সাথে জিততে হলে জুনায়েদ-স্টারলিং উদ্বোধনী জুটির ভাল খেলা, অন্তত একজনের বড় ইনিংস আর মাঝখানে অধিনায়ক রিয়াদ, আরিফুল, ব্রাথওয়েট ও জহুরুল অমিদের হাত খুলে খেলা যে খুব জরুরী।

না হয়, তারকাখচিত ঢাকা ডায়নামাইটসের সঙ্গে খুলনা টাইটান্সের পেরে ওঠা কঠিনই হবে!

এআরবি/এমএমআর/এমএস