খেলাধুলা

হাই ভোল্টেজ ম্যাচে গেইলের রংপুরের সামনে স্মিথের কুমিল্লা

পাওয়ার প্লে‘তে তার চেয়ে ভয়ঙ্কর, বিপজ্জনক, বিধ্বংসী আর কার্যকর ব্যাটসম্যান বা ব্যাটিং পারফরমার নেই একজনও। ২০ ওভারের ফরম্যাটে প্রথম ৬ ওভারে ফিল্ডিং সীমাবদ্ধতা কাজে লাগিয়ে বিগ হিট নেয়া, ভাল-মন্দ যে কোন ধরণের ডেলিভারিকে অবলীলায় বাতাসে ভাসিয়ে সীমানার ওপারে পাঠনোয় ক্রিস গেইল অনন্য। এই কাজে তার জুড়ি মেলা ভার।

Advertisement

নিউজিল্যান্ডের ব্রেন্ডন ম্যাককালাম আর তার স্বদেশি এভিন লুইসও আছেন। তবে তারা কেউ গেইলের মত এত স্বচ্ছন্দে আর অনায়াসে ছক্কা হাঁকাতে পারেন না। বিশ্বের যে কোন মাঠে, যে কোন পিচে ২০ ওভারের ফরম্যাটে চার-ছক্কা হাঁকানোর প্রতিযোগিতা হলে গেইলকে হারানোর পারফরমার আসলে নেই। গেইলের এই অবলীলায় চার ও ছক্কা হাঁকানোর ক্ষমতার কারণে ২০ ওভারের ফরম্যাটে তার চাহিদা বেশি।

দলগুলো জানে, প্রথম ৬ ওভারে ফিল্ডার ৩০ গজের ভিতরে বেশি থাকাকালিন সময় গেইলের উত্তাল ব্যাটিংটা অনেক বেশি প্লাস। ঐ উত্তাল উইলোবাজিতে প্রতিপক্ষ বোলিং হয়ে যায় এলোমেলো। আর গেইলের ছক্কা বৃষ্টিতে পাওয়ার প্লে‘র প্রতি ওভারে ১০ রান করে পাওয়ার প্লে‘তে স্কোর ৬০ ‘এর ঘরে। প্রথম ৬ ওভারে ওভার পিছু ১০ রান ওঠার বড় সুবিধা হলো, পরের ব্যাটসম্যানরা তুলনামূলক চাপমুক্ত হয়ে খেলার সুযোগ পান।

পরের ১৪ ওভারে ৭/৮ রান তুললেও ২০ ওভার শেষে স্কোর গিয়ে ঠেকে ১৭০-১৮০ ‘তে। আর সবচেয়ে বড় কথা, গেইলের ওমন বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের মুখে প্রতিপক্ষের ফ্রন্টলাইন বোলাররা খেই হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তী বোলারদের জন্যও কাজটি কঠিন হয়ে যায়।

Advertisement

কাজেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ক্রিস গেইল টপ অর্ডারে সবচেয়ে বড় সম্পদ। এ কারণেই এই ফরম্যাটে বিশেষ করে ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরগুলোয় গেইলের ডিমান্ড সবার চেয়ে বেশি।

বিপিএলেও গেইলের কার্যকারিতা সর্বাধিক। তিনিই একমাত্র ব্যাটসম্যান, যার বিপিএলে সর্বাধিক পাঁচটি সেঞ্চুরি আছে। আর কারো দুটি শতরানও নেই। তিনি টপ স্কোরার নন। তারপরও ম্যাচ পিছু রান তোলায়ও গেইল দুর্বার। সে হিসেবে ধারে কাছে কেউ নেই। এখন পর্যন্ত বিপিএলের সব আসর মিলে সবচেয়ে বেশি রান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের (৬৪ খেলায় ১৪২৪)।

আর সেখানে গেইল ২৬ ম্যাচে করে ফেলেছেন ১১৩৫। আর ছক্কা বৃষ্টিতে মাঠ মাতানো গেইল ওই ২৬ ম্যাচে হাঁকিয়েছেন ১০৭ ছক্কা। যার মধ্যে আগেরবার শেষ তিন ম্যাচেই তার ব্যাট থেকে এসেছে ৩২টি (খুলনার বিপক্ষে এলিমিনেটর পর্বে ১৪ টি, আর ফাইনালে ঢাকার বিপক্ষে ১৮ টি)।

ছক্কা হাঁকানোয় গেইলের ধারে কাছে কেউ নেই। তার দ্বিগুণ ম্যাচ খেলা পারফরমাররাও তার অর্ধেক ছক্কাও হাঁকাতে পারেননি। বিপিএলে গেইলের সর্বাধিক ১০৭ ছক্কার বিপরীতে দ্বিতীয় সর্বাধিক ৪৮ ছক্কার (৬৩ ম্যাচে) মালিক সাব্বির রহমান রুম্মন ।

Advertisement

আগের বারও গেইলের চওড়া ব্যাটের ওপর ভর করেই শেষ হাসি হেসেছে রংপুুর রাইডার্স। নকআউট পর্বে গেইলই ছিলেন ত্রাণকর্তা। এলিমিনেটর পর্বে খুলনা আর ফাইনালে ঢাকার বিপক্ষে ঝড়ো শতক ও ছক্কার বিশ্ব রেকর্ড গড়ে আলোচিত-আলোড়িত হয়েছিলেন গেইল।

এবারো গেইল ঝড় দেখার অপেক্ষায় উন্মুখ সবাই। কিন্তু রংপুর রাইডার্সের দুই ম্যাচ হয়ে গেছে, তবু তার দেখা মেলেনি। ভক্ত-সমর্থক ও অনুরাগীরা আসলে গেইলের উত্তাল উইলোবাজি দেখার প্রহর গুণছেন। কিন্তু নিজ দেশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড থেকে এনওসি বা অনাপত্তি পত্র না আসায় তার পক্ষে মাঠে নামা সম্ভব হয়নি। অথচ তিনি এসেছেন ৫ জানুয়ারি সকালেই।

গতকাল রোববার খুলনার বিপক্ষে খেলার আগে শেরে বাংলায় গেইলকে ব্যাট হাতে প্র্যাকটিস করতে দেখে অনেকেই আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু অনাপত্তিপত্র না আসায় তার পক্ষে আর মাঠে নামা সম্ভব হয়নি। তবে গেইল ভক্ত তথা রংপুর রাইডার্স সমর্থকদের জন্য সুখবর, সব ঠিক থাকলে কাল রংপুর রাইডার্সের হয়ে ঠিকই খেলবেন ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানব।

এ ম্যাচে দল রংপুরও গেইলের দিকেই তাকিয়ে। কারণ মঙ্গলবার শেরে বাংলায় রংপুরের তৃতীয় ম্যাচটি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে। অজি তারকা স্টিভেন স্মিথের নেতৃত্বে কুমিল্লা এবার অনেক বেশি শক্তিশালী। যে দলে গেইলের স্বদেশি এভিন লুইস, শহীদ আফ্রিদি, শোয়েব মালিক আর তামিম ইকবাল আছেন।

মাশরাফি বিন মর্তুজার রংপুরের সাথে স্মিথের কুমিল্লার ম্যাচটি হাই ভোল্টেজ ম্যাচ বলেই ধরা হচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, চ্যাম্পিয়ন রংপুরের শুরু ভালো হয়নি এবারো। চিটাগাং ভাইকিংসের সাথে হার দিয়ে যাত্রা শুরু। পরের ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনার বিপক্ষে ৮ রানের স্বস্তির জয়ে মাঠ ছাড়লেও চ্যাম্পিয়নরা এখনো চ্যাম্পিয়নদের মত খেলতে পারেনি। অন্যদিকে স্টিভেন স্মিথের কুমিল্লার যাত্রা শুরু হয়েছে ডেভিড ওয়ার্নারের নেতৃত্বে এক ঝাঁক তরুণের দল সিলেট সিক্সার্সের বিপক্ষে ৪ উইকেটের জয় দিয়ে।

ক্রিকেট অনুরাগীরা কাল রংপুর আর কুমিল্লার হাই ভোল্টেজ ম্যাচে চার ও ছক্কা বৃষ্টি দেখার আশা করতেই পারেন। কারণ এ ম্যাচটি হবে সন্ধ্যার পর ফ্লাডলাইটের আলোয়। প্রথম দুদিনই প্রমাণ হয়েছে, প্রথম ম্যাচে বল থেমে আসে। বাউন্সও থাকে কম। যে কারণে হাত খুলে খেলা বা ফ্রি স্ট্রোক প্লে কঠিন।

কিন্তু সন্ধ্যার ম্যাচে শিশির ভেজা পিচে পেসারদের বল স্কিড করে। ব্যাটেও আসে মোটামুটি গতিতে। আর বল ভেজার পর স্পিনারদের গ্রিপিংয়ে হয় সমস্যা। সব মিলে পরের ম্যাচে তুলনামূলক রান ওঠে। তার প্রমাণ প্রথম দিন রাজশাহীর বিপক্ষে ঢাকার ১৮৯ রান আর কাল দ্বিতীয় ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে রংপুরের ১৬৯ রান। জবাবে খুলনাও করেছে ১৬১। তাই ধরেই নেয়া যায়, মঙ্গলবার গেইল আর স্মিথের লড়াইয়ে ছক্কা বৃষ্টিও হবে।

দেখা যাক, হাইভোল্টেজ এই লড়াইয়ে জয়ী হয় কোন দল- মাশরাফি, গেইলের রংপুর নাকি স্মিথ, তামিম, এভিন লুইস আর আফ্রিদিদের কুমিল্লা!

এআরবি/এমএমআর/এমএস