দেশজুড়ে

সুবর্ণচরে নারীকে গণধর্ষণের কথা স্বীকার করল তারা

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ভোটের রাতে দলবেঁধে নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত এজাহারভুক্ত দুই আসামি আবুল হোসেন ও ছালা উদ্দিন আদালতে ১৬৪ ধারায় অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।

Advertisement

সোমবার দুপুরে নোয়াখালীর ২ নম্বর আমলি আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নবনিতা গুহের আদালতে তারা এ জবানবন্দি দেয়। আদালতে দেয়া তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

নোয়াখালীর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ওই নারীকে ধর্ষণের কথা অকপটে স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবিন্দ দিয়েছে দুই আসামি। আদালতে দেয়া আবুল হোসেন ও ছালা উদ্দিনের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন আদালত। এ ঘটনায় জড়িত মুরাদ নামে আরও এক আসামির সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আগামী ১০ জানুয়ারি তার রিমান্ড শুনানি হবে।

এদিকে, ওই নারীকে নির্যাতনের ঘটনায় নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পাঙ্খার বাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নারীদের নিরাপত্তা দাবি ও গণধর্ষণের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

Advertisement

দুপুরে উপজেলা ভূমিহীন কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন উন্নয়ন সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির। সমাবেশে মানবাধিকার আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সদস্য সালমা আলী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ভূমিহীন নেতা শাহানা আক্তার, ইব্রাহিম খলিল ও নুর উদ্দিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে হাজারো নারী-পুরুষ অংশ নেন। সমাবেশে বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। সেই সঙ্গে গণধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবি করেন তারা। একই সঙ্গে স্বাধীন দেশে নারীদের নিরাপত্তার দাবি করেন।

উন্নয়ন সংস্থা ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক খুশি কবির বলেন, একজন বোনের ওপর নির্যাতন করে ওরা বুঝিয়ে দিয়েছে তোমরা একজনও যদি কথা বলো এবং আমাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দাও তাহলে তোমাদের খবর আছে। আজ যেটি করা হয়েছে কাল এর চেয়ে বেশি তোমাদের বোনদের ওপর করা হবে। এ ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে ধরা হয়েছে, কয়েজনের নাম এজাহারে আছে। কিন্তু তাদের যে গং রয়েছে তারা নানাভাবে চেষ্টা করবে ক্ষতি করার। তাই তাদের উৎখাত করার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর সকালে নির্যাতিত গৃহবধূ ভোট দিতে গেলে নৌকার কয়েকজন সমর্থক তাকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বলে। তিনি তখন ধানের শীষে ভোট দেয়ার কথা বললে তাদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হয়। এ সময় তারা তাকে ‘তোর কপালে শনি আছে’ বলে হুমকি দেয়। পরে কেন্দ্র থেকে দ্রুত বের হয়ে বাড়ি ফিরে যান গৃহবধূ।

Advertisement

এরপর রোববার রাত ১২টার দিকে একই এলাকার ১০-১২ জন তাদের বাড়িতে এসে প্রথমে বসতঘর ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পিটিয়ে আহত করে। পরে স্বামী ও স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে (১২) বেঁধে রেখে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে গৃহবধূকে গণধর্ষণ করে তারা।

একপর্যায়ে তারা তাকে গলা কেটে হত্যার করতে উদ্যত হয়। এ সময় প্রাণ ভিক্ষা চাইলে তারা তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় বাড়ির উঠান সংলগ্ন পুকুর ঘাটে ফেলে চলে যায়।

মিজানুর রহমান/এএম/আরআইপি/এসজি