বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ৩০০ সদস্য বিশিষ্ট সর্বোচ্চ আইন পরিষদ। প্রাপ্তবয়স্ক ভোটারের সরাসরি ভোটের ভিত্তিতে প্রতি আসন থেকে একজন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
Advertisement
নারীদের জন্য সংসদে সংরক্ষিত থাকে কিছু আসন। যারা ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হন। ১৫ জন দিয়ে সংরক্ষিত এই আসনের যাত্রা হলেও বিভিন্ন সরকারের শাসনামলে এখানে এসেছে অনেক পরিবর্তন ও সংযোজন।
সর্বশেষ ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী সংরক্ষিত নারী আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়েছে। এ সংখ্যা বহাল রেখেই গঠিত হচ্ছে নতুন সংসদের বিন্যাস।
এরই মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যরা শপথ গ্রহণ করেছেন। রাষ্ট্রপতি সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করে মন্ত্রিসভা গঠনের সম্মতি দিয়েছেন।
Advertisement
এবার সংসদের সংরক্ষিত আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সূত্রে জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি তফসিল দিয়ে মার্চের মধ্যেই ভোটগ্রহণ করা হবে। রাজনৈতিক দলগুলো বাছাই করে তাদের পছন্দের নারীদের মনোনয়ন দিতে পারবে। কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলে রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপ্রাপ্তদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করবেন।
এরই মধ্যে নতুন মেয়াদে সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে সরব হয়েছেন আওয়ামী লীগের নারী নেত্রীরা। রাজনীতিতে সক্রিয় বিভিন্ন পেশাজীবী নারীদের পাশাপাশি আলোচনায় আছেন শোবিজের তারকারাও। বিভিন্ন আড্ডা-বৈঠকে উঠে আসছে বেশকিছু নাম। উল্লেখ করা যায় অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, শমী কায়সার ও অপু বিশ্বাসের কথা।
তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই রাজনীতিতে সক্রিয় রোকেয়া প্রাচী। নিয়মিতই তাকে রাজপথে পাওয়া যায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে। তিনি বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সেই সুবাদে ফেনী-৩ আসনে (দাগনভূঞা-সোনাগাজী) গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীও ছিলেন এই অভিনেত্রী। তার আগে চালিয়েছিলেন প্রচারণা। শেষ পর্যন্ত টিকিট পাননি। তবে মনোনয়ন পাওয়া নেতার জন্য নৌকায় ভোট চেয়েছেন দলের নির্দেশ মেনে।
Advertisement
এবার তিনি আশা করছেন সংরক্ষিত আসনে দল থেকে মনোনয়ন পাবেন ও নির্বাচিত হবেন বলে। জাগো নিউজকে আজ (সোমবার) দুপুরে রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই আমি আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে বড় হয়েছি। নেত্রী শেখ হাসিনার সান্নিধ্য আমার রাজনৈতিক ও দেশপ্রেমের চেতনাকে উজ্জ্বল করেছে। সেই আদর্শ ও অভিজ্ঞতাকে মানুষের কাজে ব্যবহার করতে চাই।’
এই অভিনেত্রী আরও বলেন, ‘সবেমাত্র মন্ত্রিসভা গঠিত হলো। সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন প্রক্রিয়া এখনও অনেক দেরি। তবে আমি নিজেকে তৈরি করছি। সময় হলে আনুষ্ঠানিকভাবেই বাকি সব জানাতে পারব।
আমি আশাবাদী, আপা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) আমাকে মূল্যায়ণ করবেন। দলের জন্য আমার শ্রম, ত্যাগ সম্পর্কে অবশ্যই তিনি অবগত।
আরেক অভিনেত্রী শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার। তিনিও কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনিও রোকেয়া প্রাচীর সঙ্গে নৌকার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছিলেন ফেনী-৩ আসনে (দাগনভূঞা-সোনাগাজী)।
অনেক আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত বাদ পড়ে তার নাম। শোনা যাচ্ছে, সরাসরি নির্বাচনের টিকিট না পেলেও সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নে এগিয়ে আছেন এই অভিনেত্রী।
সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়ার আলোচনায় আছে আরও একটি নাম। তিনি ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে তিনি সক্রিয় ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রচারণায়।
ছড়িয়েছিল তার মনোনয়ন কেনার গুজবও। অপু বিশ্বাস সেই গুজব নাকচ করে দিলেও গণমাধ্যমে এসেছিল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও বগুড়া জেলা সভাপতি আলহাজ মমতাজ উদ্দিনের পরামর্শে নির্বাচনে অংশ নেবেন এই নায়িকা। তবে শেষাবদি গুজবই প্রমাণ হয়েছিল সেই খবর। মনোনয়ন কিনেননি অপু।
তবে এবার অপু বিশ্বাস নিজেই জানান, সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান তিনি। অপু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি পারিবারিকভাবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির আদর্শে বেড়ে উঠেছি। তার রাজনৈতিক জীবন ছোটবেলা থেকেই প্রভাবিত করেছে।
তাকে তো চোখে দেখার সুযোগ পাইনি। ধন্য হয়েছি বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখে। তার মাতৃত্বসুলভ ব্যবহার, কঠিন নেতৃত্ব, মানবিকতার সুনাম আজ বিশ্বময়। তার আদর পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। আমার জীবনের করুণ দুঃসময়ে তার কাছ থেকে সাহস পেয়েছি, ধৈর্যশীল হওয়ার পরামর্শ পেয়েছি। আমি তার নেতৃত্বে কাজ করার সুযোগ চাই।’
এই নায়িকা আরও বলেন, ‘রাজনীতিতে আমি সক্রিয় নই। এবারই প্রথমবার রাজনীতির মাঠে ছিলাম নৌকার প্রচারণায়। নির্বাচনের শুরু থেকেই ভিডিও বার্তাসহ দেশের নানা প্রান্তে ছুটে গেছি নৌকার প্রার্থীদের জন্য ভোট চাইতে। এছাড়াও নানারকম সামাজিক কার্যক্রমে আমি জড়িত।
অনেক সংগ্রাম করে নিজেকে আজকে একটি অবস্থানে নিয়ে এসেছি। অভিজ্ঞতায় দেখেছি দেশের বঞ্চিত নারী ও শিশুরা কতো প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। তাদের জন্য অনেক কিছু করার পরিকল্পনা আছে আমার। তার বাস্তবায়নের জন্য আমার সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন। সেজন্য সবকিছু ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন চাইব আমি।’
শোবিজ থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য মনোনয়ন চাইবেন অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। ছাত্রজীবন থেকেই জ্যোতি সক্রিয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে। গত নির্বাচনে ময়মনসিংহ-৩ আসন থেকে মনোনয়ন কেনার আলোচনায়ও এসেছে তার নাম।
শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি। অংশ নেন দল থেকে মনোনয়ন দেয়া প্রার্থীর প্রচারণায়। এবার জ্যোতি তৈরি হচ্ছেন সংরক্ষিত আসনের জন্য। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টাই দলের উপর নির্ভর করে। দল ও নেত্রী যাদের চাইবেন তারাই সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পাবেন। নিজের কার্যক্রম, সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার আলোকে আমিও মনোনয়ন চাইবো। বাকিটা সময় বলবে।’
এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য মনোনয়ন চাওয়ার তালিকায় দেখা যেতে পারে অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার, অঞ্জনা, তারানা হালিম, তারিন প্রমুখকে। এলএ/পিআর /এসজি