হোক তা জাতীয় দলের হয়ে, বিগব্যাশ কিংবা আইপিএলে। মাঠে অস্ট্রেলিয়ানরা শতভাগ পেশাদার। টিম অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে স্টিভেন স্মিথ আর ডেভিড ওয়ার্নাররা সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে চেষ্টা করেন জিততে। ভারতের সাড়া জাগানো আসর আইপিএলেও তদের দেখা যায় শতভাগ সিরিয়াস। জিততে মরিয়া।
Advertisement
কিন্তু অজি ক্রিকেটের এই দুই জ্বলন্ত সূর্য প্রথমবার বিপিএল খেলতে এসেও কি অমন সিরিয়াস থাকবেন? দল জেতাতে সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দেবেন? বিপিএল ও বিগ ব্যাশের তুলনায় স্বল্প পরিচয়ের লো প্রোফাইল ক্রিকেটারদের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন তারা? এমন কৌতূহল ছিল অনেকেরই।
তাদের সে কৌতূহল নিবারণে মুখ খুলেছেন খোদ ডেভিড ওয়ার্নার। সিলেট অধিনায়ক আজ দিনের প্রথম ম্যাচ শেষে মিডিয়ার সাথে কথা বলতে এসে কথা বার্তায় বুঝিয়ে দিলেন, আমি শতভাগ সিরিয়াস। আমার মনোযোগ, মনোসংযোগ আর দৃঢ় সংকল্প আছে পুরোপুরি।
তা যে আছে, তার প্রমাণ শুনতে চান ? তাহলে শুনুন। সবার আগে পিচ সম্পর্কে পরিষ্কার ও স্বচ্ছ ধারণা নিতে চাচ্ছেন ওয়ার্নার। প্রথম ম্যাচে শেষে যেভাবে কথা বললেন, তা শুনে মনে হলো অনেকটা ধারণা নিয়েও ফেলেছেন।
Advertisement
শেরে বাংলার যে পিচে খেলা হচ্ছে সেই পিচ সম্পর্কে ওয়ার্নার বলেন, ‘এই পিচে প্রথম ৬ ওভার সব দলের জন্যই কঠিন। আজকের ম্যাচে দেখেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৩০ রানের মধ্যে ৫ থেকে ৬ উইকেট খুইয়ে বসেছিল। আর একই সময় আমাদেরও একই অবস্থা ছিল। এখানে নতুন বল খুব চ্যালেঞ্জিং। কখনো টার্ন করে। কখনও করে না।’
ওয়ার্নার বোঝাতে চাইলেন, সেটাই বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক এর কারণও খুঁজে বের করেছেন। তার ধারণা, নতুন বল যখন সিম বা সেলাইয়ের ওপরে পিচ করছে, তা টার্ন করছে। আর যে ডেলিভারিগুলো সিমের ওপরে পড়ছে না, সেগুলো স্কিড করে সোজা চলে যাচ্ছে। শুধু শেরে বাংলায় নয়, সিমে পড়ে নতুন বল উপমহাদেশের সব উইকেটেই এভাবে ঘোরে।
আর তাই ওয়ার্নারের ব্যাখ্যা, ‘এ পিচে দেখে খেলাই সর্বোত্তম কাজ। এবং বলের পিছনে তাড়া করার চেয়ে যতটা সম্ভব ক্রিজে থেকে রান সচল রাখার চেষ্টাই সবচেয়ে কার্যকর কৌশল।’
এই পিচে সোজা ব্যাটে খেলা সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর। এমন অনুভব ও উপলব্ধি থেকে ওয়ার্নার জানিয়ে দিলেন, এখানে ক্রস ব্যাটে খেলতে যাওয়া মানেই বিপদ ডেকে আনা।
Advertisement
এ উইকেটে কত রান নিরাপদ ও লড়িয়ে স্কোর? তা নিয়ে ওয়ার্নার বলেন, ‘আপনি ১৩০ রানকে ডিফেন্ড করে ফেলতে পারেন।’ সন্ধ্যার পর উইকেট কেমন ব্যবহার করে, তা জানার অপেক্ষায় ওয়ার্ন।
তার অস্ট্রেলিয়া দলের সতীর্থ স্মিথের সাথে টস করার অনুভূতিটা কেমন ছিল? এ প্রশ্নর জবাবে ওয়ার্নার বলেন, ‘আমরা দুই অস্ট্রেলিয়ান দুই দলকে লিড করেছি। অনুভূতিটা দারুণ।’
শুধু বিপিএলে নেতৃত্ব দেয়াটাকেই বড় করে দেখতে চান না ওয়ার্নার। বিপিএলে সম্ভাব্য করণীয়ও ঠিক করে ফেলেছেন। তাই বাংলাদেশের তরুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের সাথে নিজের ক্রিকেট জ্ঞান শেয়ার করতে চান।
হৃদয়ের সাথে তার রান আউটের দৃশ্যটি ছিল খুব দৃষ্টিকটু। তিনি সিঙ্গেলস নিতে অন্য প্রান্ত থেকে ব্যাটিং প্রান্তে চলে আসার পরও হৃদয় ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিষয়টি খুব চোখে লাগার মত। তিনি কি ভাবছেন? তার অনুভূতি কেমন? জানতে চাওয়া হলে ওয়ার্নার মোটেই হৃদয়ের ওপর দোষ চাপাননি। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটে এমন হয়। এটা আসলে ভুল বোঝাবুঝি। আসলে সেটা তেমন কোন ব্যাপার না। দিন শেষে আমরা দুজন ওটা নিয়ে কথাও বলেছি। হৃদয়, তিন চার রকমের কল করেছে। আমি তাকে বলেছি ‘ইয়েস’ কল করা ঠিক হয়নি। তোমাকে দেখেই বল হিট করা উচিত ছিল।’
হৃদয়ের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফিরলেও ওয়ার্নারের রান আউটের বিষয়টি থার্ড আম্পায়ার পর্যন্ত গড়িয়েছিল। ওয়ার্নার অনেকটা সময় মাঠে দাঁড়িয়েও ছিলেন। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, তিনি যখন অন্য প্রান্ত থেকে দৌঁড়ে ব্যাটিং প্রান্তে চলে আসেন, তখন হৃদয়ের ব্যাট পপিং ক্রিজের ওপরে ছিল।
সে সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে ওয়ার্নার বলেন, ‘অনেকেই বলেছেন সিদ্ধান্তটি সঠিক ছিল না। আসলে কি ঘটেছে আমি তা দেখিনি। তবে আমার মনে হয়েছে, আমি পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমি জানি না কি হয়েছে। কারণ আমি তো ক্যামেরার পিছনে ছিলাম। কি আর করা আমি যদি নটআউট হয়ে থাকি, তারপরও আমাকে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নিতেই হবে।’
স্থানীয় ক্রিকেটারদের সাথে প্রথম ম্যাচ খেলার অনুভূতি কেমন ছিল? জানতে চাওয়া হলে ওয়ার্নার বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল আমার প্রতিপক্ষ দলে যেসব স্থানীয় ক্রিকেটার আছেন, তাদের সম্পর্কে ধারণা নেয়া। সেই কাজে আমি আমার নিজ দলের স্থানীয় ক্রিকেটারদের ব্যবহার করতে পেরেছি। তাদের কাছ ধারণাও নিয়েছি কে কেমন, কার কি ধরণ।’
‘সাব্বির আমার সাথে খুব ভালো মানিয়ে নিয়েছে। তাসকিন আর আল আমিন তাদের ফিল্ডিং পজিশন খুব ভাল জানে। তারা জানে কোথায় বল করতে হবে। এটাই আমার ক্যাপ্টেন্সির স্টাইল। আমি বোলারদের ২৪ বল করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেই। আমার মনে হয় আজ তারা ভালই করেছে। আমি তাদের ওপর সন্তুষ্ট। আমরা ১৩০ রান প্রায় ডিফেন্ড করে ফেলেছিলাম।’
তার দলের অন্যতম শীর্ষ তারকা নাসির এ ম্যাচ খেলেননি। কি কারণে নাসির একাদশে নেই? এ প্রশ্নের উত্তরে ওয়ার্নার বলেন, ‘সবাই বলাবলি করছিল নাসির খেলবে কি খেলবে না? আমি ঠিক নিশ্চিত না নাসির পুরোপুরি ফিট কি-না। সে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকলে অবশ্যই দলে থাকতো। নাসির ছিল না বলেই না আমাদের দুজন তরুণকে খেলাতে হয়েছে।’
এআরবি/এমএমআর/জেআইএম