প্রবাস

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের আনাগোনা

মালয়েশিয়া সাউথইস্ট এশিয়ার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান যেখানে প্রচুর লোক আসে বিভিন্ন দেশ থেকে। দেশটির জনসংখ্যা ঘনত্ব কম বলে বাহির থেকে প্রচুর শ্রমিক নিয়োগ হয় প্রতি বছর। প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি এই দেশে বসবাস করে।

Advertisement

ইতিহাস ঘাটলে পাওয়া যায় মালয়েশিয়ায় বাঙালিরা প্রথম যাওয়া আসা শুরু করে পঞ্চদশ শতকে যখন মালয়েশিয়ায় সুলতানি শাসন চলছিল। তাদের যাওয়া আসার মূল কারণ ছিল ব্যবসা-বাণিজ্য। পরবর্তিতে, ব্রিটিশ শাসন চলাকালীন প্রচুর বাঙালি শ্রমিক এখানে কাজের উদ্দেশ্যে আনা হয়েছিল।

আঠারো শতকের প্রথম দিকে পেনাং রাজ্যে বাংলাদেশিরা প্রথম একটি মসজিদ নির্মাণ করেন যা কিনা এখনো রয়েছে। তবে দেশ স্বাধীনের পর ১৯৮৬ সালে প্রায় ৫০০ জন এই দেশে আসে চাষাবাদের কাজে। ১৯৯২ সালে দুই দেশের মধ্যে প্রথম শ্রম-শক্তি রফতানির জন্য চুক্তি হয়।

তাদের মধ্যে বেশিরভাগই আসে কাজের খোঁজে। ২০১৭ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে প্রায় ২লাখ ৫০ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় কাজ করছে। তাদের মধ্যে অনেকই এখনো অবৈধভাবে বসবাস করছে। এমনও লোক আছে যিনি পঁচিশ বছর ধরে আছেন।

Advertisement

পুলিশের ভয়ে দেশে ফিরে যেতে পারছেন না। গত বছর ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় প্রচুর পরিমাণে অবৈধ প্রবাসীকে বৈধ করার সুযোগ করে দেয়া হয়। তবে তার জন্য অনেক কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। অনেক বাংলাদেশিদের জেলে আটকানো হয়েছিল। অনেক বাংলাদেশিকেই চলে যেতে হয়েছিল এই দেশ থেকে।

মালয়েশিয়ার সরকার একটি পদক্ষেপ নিয়েছিল যেখানে তিনি কোন অবৈধ শ্রমিক রাখবেন না। এমনকি ভিজিট ভিসায় যারা নতুন এসেছিল তাদেরকে বিমানবন্দরে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। কারণ অনেকেই ভিজিট ভিসার নামেই এখানে এসে অবৈধ হয়ে যায়। অনেক বাংলাদেশিদের এয়ারপোর্ট থেকেই ফেরত পাঠানো হয়।

তবে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি লেবার নিয়োগ হয় বলে এই দেশে কিছুটা রেসিজম করা হয়। তবে গায়ে খেটে কাজ করার ব্যাপারে বাংলাদেশি আর থাইল্যান্ড সবার কাছেই প্রথম অগ্রাধিকার রাখে।

শ্রমিকের পাশাপাশি মালয়েশিয়ায় প্রচুর পরিমাণে অধ্যয়নরত প্রচুর স্টুডেন্ট থাকে। বর্তমানে এশিয়ার বড় এডুকেশনাল হাব হিসেবে পরিচিত এই দেশটি। এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অসংখ্য বিশ্বমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০১৭ সালের একটি জরিপে এসেছে প্রায় আঠাশ হাজার স্টুডেন্ট এই দেশে অধ্যয়নরত। যা কিনা এই দেশের সর্বমোট বিদেশি স্টুডেন্টের চার ভাগের এক ভাগ। প্রায় প্রতিটি ক্যাম্পাসেই কমবেশি বাংলাদেশি দেখতে পাওয়া যায়। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ার ফ্লাইট মাত্র ৪ ঘণ্টা।

Advertisement

আমাদের দেশের অনেক স্টুডেন্টের অভিভাবকই এখানে ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে নিয়োজিত অথবা তাদের আসা-যাওয়া রয়েছে। নিকটবর্তী এই দেশের সঙ্গে পরিচিত বলেই অভিভাবকরা তাদের ছেলে-মেয়েদের এই দেশে পড়াশোনা করাতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। আরেকটি কারণ হচ্ছে, এখানে একজন স্টুডেন্টের বসবাসের খরচ বাংলাদেশের খরচের প্রায় সমান।

যেখানে লিভিং স্ট্যান্ডার্ড বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি। ভার্সিটির টিউশন ফি একেক যায়গায় মান অনুযায়ী নির্ধারিত। তবে একটি স্ট্যান্ডার্ড ইউনিভার্সিটিতে গ্রাজুয়েশন করতে গড়ে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা খরচ হবে। অন্যান্য দেশের অনুযায়ী এই দেশে স্কলারশিপ প্রোগ্রাম খুবই কম। তবে ওয়েভার ব্যবস্থা রয়েছে প্রায় প্রতিটি ইউনিভার্সিটিতেই।

বাংলাদেশের স্টুডেন্টরা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক এগিয়েই থাকে। তাই বাংলাদেশি স্টুডেন্টরা অনেক সুনাম অর্জন করেছে। প্রতিটি ক্যাম্পাসেই হাই কমিটি, ক্যাম্পাস কম্পেটিশন, হাল্ট প্রাইজ কম্পিটেশন, স্পোর্স্ট পার্টিসিপেন্টসদের মধ্যে বাংলাদেশিরাই এগিয়ে থাকে।

তাছাড়া এই দেশে প্রচুর পরিমাণে বাংলাদেশি পর্যটক আসে প্রতি বছর। উন্নত ট্যুরিজমের কারণেই আমাদের দেশ থেকে অনেকেই এই ভূমিতে পাড়ি দেয়। তাদের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি লোক আসে। এ ছাড়া নব্য বিবাহিতদের হানিমুন এবং মেডিকেলের উদ্দেশ্য এখানে প্রচুর বাংলাদেশি পর্যটক আসে।

অতিথি লেখক: তারেক মাহমুদ, মালয়েশিয়ার মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

এমআরএম/এমকেএইচ