আন্তর্জাতিক

সমতা, আইন না কি ধর্ম, শবরীমালার ঘটনার নেপথ্যে কী?

বিতর্কিত শবরীমালা মন্দির নিয়ে ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালা এখন বিক্ষোভে উত্তাল। গত মঙ্গলবার সেখানে ছয়শ কিলোমিটারের চেয়েও বড় একটি মানববন্ধন করেছেন কয়েক লাখ নারী। তারা দাবি করছেন, মন্দিরে নারীদের প্রবেশ নিয়ে বিধিনিষেধ তুলে নেয়া সত্ত্বেও কেন তাদেরকে সেখানে ঢুকতে দেয়া হবে না। কিন্তু এ ঘটনার নেপথ্যে প্রকৃতপক্ষে কি নারী-পুরুষ সমতা, আইন নাকি ধর্ম কাজ করছে সেই বিশ্লেষণ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

Advertisement

গত সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া এ বিক্ষোভকে এ ধরনের বিক্ষোভের শ্রেনিতে ফেললে এটাই ভারতের সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। সেপ্টেম্বরে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত শবরীমালায় যে কোনো বয়সের নারীদের প্রবেশে যে বাঁধা ছিল তা বাতিল করার প্রেক্ষিতে আন্দোলন-বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে। প্রাচীন এ মন্দিরটিতে ৫০ বছরের কম বয়সী নারীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত সেটাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেন।

কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায় দেয়ার পর গত চারমাসে মন্দিরে নারীদের প্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। নারীরা মন্দিরটিতে ঢুকতে চাইলে কট্টর হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীর মানুষ ও অন্য অনেকেই রাস্তা অবরোধ করে নারীদের মন্দিরে প্রবেশে বাধা দেয়। কিন্তু গত বুধবার দুইজন নারী সাদা পোশাকের পুলিশের সহযোগিতায় মন্দিরে প্রবেশ করলে দৃশ্যপট পাল্টে যায়।

তবে ভারতে এটাই নারী-পুরুষ সমতার ক্ষেত্রে একটি মাত্র ঘটনা নয়। মন্দিরে কারা প্রবেশ করতে পারবে আর কারা পারবে না এটা একইসঙ্গে ধর্মীয় প্রথা ও আইনের সীমাবদ্ধতার একটি প্রশ্ন। আর এরপর যে বিষয়টি কাজ করছে সেটি হলো রাজনীতি। চলতি বছরে ভারতের জাতীয় নির্বাচনের আগে এটা ধর্মীয় ও ধর্মনিরপেক্ষদের মধ্যে সংঘর্ষেরও একটি উদাহরণ।

Advertisement

আদালতের রায় হওয়ার পর থেকেই নারী-পুরুষ সমতার পক্ষে কেরালা ও কেরালার বাইরে অনেকেই এই রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের অভিযোগ, শবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছরের কম বয়সী নারীদের প্রবেশে বাধা দেয়া ভারতের বহু নারী বৈষম্যের ঘটনার মধ্যে একটি।

গত বুধবার মন্দিরটিতে দুইজন নারীর প্রবেশের পর ‘পবিত্রতার’ কথা বলে মন্দিরটি বন্ধ করে দেন পুরোহিত। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর শুক্রবারের সম্পাদকীয়তে বিষয়টি নিয়ে বলা হয়েছে। ভারতের প্রভাবশালী এই দৈনিকটির ভাষ্য, এর মাধ্যমে বিষুদ্ধতা ও দূষণের পুরনো ও পশ্চাৎপদ ধারণাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

কিন্তু কট্টর ধর্মপন্থী ও তাদের সমর্থকরা জোর দিয়ে বলছে, না, এটা কোনো লিঙ্গ সমতার প্রশ্ন নয়। এটা আইনের সীমাবদ্ধতা। তাদের মতে, আদালতের এরকম ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে কোনো কাজ নেই। তারা এটাকে দেখছে ধর্ম ও বিশ্বাসের দৃষ্টিতে। আর এমনটা হওয়াও মোটেও অনাকঙ্খিত নয়। কেননা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হলেন কট্টর হিন্দুত্বাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রধান।

মন্দিরে ওই দুই নারীর প্রবেশের একদিন আগে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মোদি গত সেপ্টেম্বরে যে বিচারকের বেঞ্চ রায় দেন তার একজন নারী বিচারককে উদ্ধৃত করে বলেন, এটা কোনো আইনের ব্যাপার নয়, এটা হলো মানুষের বিশ্বাস ও ঐতিহ্যগত ব্যাপার।

Advertisement

ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ঘটনায় রাজনীতির রঙ লেগেছে। ভারতের রাজনৈতিক দলগুলো এ ঘটনায় নারীদের প্রবশে বিরোধী পক্ষের সঙ্গে সুর মেলানোর চেষ্টা করছে। কেননা আসন্ন নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ভোট না পেলে তো নির্বাচনে জেতা সম্ভব না। তাই এটাকে তারা নিজেদের আখের গোছানোর মঞ্চ হিসেবেই ব্যবহার করছে।

এসএ/এমকেএইচ