উপকূলীয় জেলা পিরোজপুরে এবার মৌসুমী ফল আমড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজার দর বেশি থাকায় এ অর্থকারী ফল বিক্রি করে চাষিরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। ফলে প্রতি বছর এ জেলায় আমড়া বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। পল্লী গায়ের সব বাড়িতে একটি-দুটি করে এই ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ আমড়ার চাড়া রোপন করা হচ্ছে।পিরোজপুর জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে নাজিরপুর, কাউখালী এবং নেছারাবাদে (স্বরুপকাঠি) আমড়ার বাগান করে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে বাগান মালিকরা। অন্যান্য উপজেলায় মাটি কেটে চারা রোপনের উপযোগী করা হচ্ছে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬০০ হেক্টর বাগানে এ বছর এই মৌসুমে ফলটির ফলন হয়েছে ৫ হাজার টন। এই আমড়া স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে বাগান মালিকরা প্রায় ১০ কোটি টাকা উপার্জন করবে।জেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অরুন রায় জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, লাভজনক এ মৌসুমী ফল আমড়া গাছে রোগ বালাই খুবই কম। কিছু কিছু গাছে বৈশাখের শুরুতে নতুন গজানো পাতায় লেদা পোঁকার আক্রমণ হয়। কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা ঘুরে ঘুরে বাগানে গিয়ে চাষিদের বিভিন্ন ধরনের কিটনাশক ছিটানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন।আমড়ার ব্যবসাকে কেন্দ্র করে কাউখালী এবং স্বরুপকাঠীতে গড়ে উঠেছে শতাধিক আমড়ার আড়ৎ। আমড়া বেপারিরা শ্রাবণ এবং ভাদ্র মাসে বাগানে গিয়ে বাগান মালিকদের কাছ হতে ৭৫০ থেকে ৮০০টি আমড়া ভর্তি বস্তা গড়ে ৮০০ টাকায় ক্রয় করে। এই আমড়া কাউখালী ও স্বরুপকাঠি আড়তে এনে ১২শ-১৩শ টাকায় বিক্রি করে। সেখান থেকে আমড়া পাঠানো হয় চাঁদপুর ও ঢাকায়। সেখানে ১৯শ থেকে ২ হাজার টাকায় প্রতি বস্তা আমড়া বিক্রি হয় বলে জানিয়েছে আমড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা।কাউখালী ও স্বরুপকাঠির আড়তদার জাহাঙ্গির, মীর শাহজাহান, মোস্তফা শেখ, আব্দুল লতিফ খসরু জাগো নিউজকে জানালেন, ভ্যানভাড়া, লঞ্চ ঘাটের টোল, লঞ্চ ভাড়া এবং অন্যান্য খরচসহ ঢাকা এবং চাঁদপুর মোকামে এক বস্তা আমড়া পাঠাতে ২৫০ থেকে ২৭৫ টাকা খরচ হয়। খরচ বাদে প্রতি বস্তা আমড়ায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা লাভ হয়। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে ফেরিওয়ালারা ঘুরে ঘুরে আমড়ার ছাল ফেলে বিট লবন দিয়ে প্রতিটি আমড়া ৫ টাকা করে বিক্রি করে। আকারে বড়, পুষ্টিকর এবং সুস্বাধু পিরোজপুরের আমড়া মুখোরোচক বিধায় বিক্রি হয় দেদারছে। পিরোজপুরের মাটি আমড়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী বলে জানালেন কৃষি কর্মকর্তারা। তবে এই গাছ দ্রুত বর্ধনশীল এবং নরম বিধায় কালবৈশাখী, টর্নেডো, সাইক্লোনসহ একটু জোরে বাতাস হলে ভেঙে বা গাছের গোড়া থেকে উপড়ে পড়ে যায়। এছাড়া নিম্নচাপের কারণে অতি বর্ষণে পিরোজপুর জেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে চার-পাঁচ দিন আমড়া গাছের নিচে পানি জমে থাকলে শিকার পঁচে গাছ মরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। পিরোজপুর সদর উপজেলা, নাজিরপুর, কাউখালী ও নেছারাবাদের মাটি আমড়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী হওয়ায় এই এলাকায় আমড়ার ফলন খুবই ভালো হয় বলে জানিয়েছেন এখানকার কৃষি কর্মকর্তারা। নাজিরপুরের আমড়া বাগানের মালিক সত্যেন্দ্রনাথ হালদার জানান, যে হারে মানুষের মাঝে আমড়া বাগানের প্রতি ঝোঁক দেখা যাচ্ছে তাতে অনেকেই আগামীতে আমড়া বিক্রি করে স্বাবলম্বী হবেন এবং পিরোজপুরের এই সুস্বাদু আমড়া অচিরেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।এমএএস/পিআর
Advertisement