ঘরোয়া ক্রিকেটে এক দলে খেলেন না, তাতে কি? জাতীয় দলে দুজন একসাথে খেলছেন সেই ২০০৬-২০০৭ সাল থেকে। সম্পর্কটা সহযোগী সহযোদ্ধা, অধিনায়ক ও ক্রিকেটার ছাপিয়ে আপন ভাইয়ের মত।
Advertisement
মাশরাফি তার কাছে বড় ভাইতুল্য। আর মুশফিকুর রহিমও মাশরাফির আপন ছোট ভাইয়ের মত। আজ শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বিসিবি একাডেমি মাঠেই মিললো সে সত্যর দেখা।
রাত পোহালে মাশরাফির রংপুর রাইডার্সের সাথে এবারের বিপিএলের প্রথম ম্যাচ মুশফিকুর রহিমের চিটাগাং ভাইকিংসের। যার অর্থ, ৫ জানুয়ারি শনিবার শেরে বাংলায় তারা একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বি। তাতে কি? বাস্তবে মাশরাফি আর মুশফিক যেন সহোদর!
আজ দুপুরে প্রেস কনফারেন্স শেষে দুজনার আন্তরিক উপস্থিতি, হাস্য কৌতুক আর গলা জড়িয়ে কথোপকথন- বার বার বলে দিচ্ছিলো, বিপিএলের মাঠের লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ হলেও মাশরাফি আর মুশফিক সত্যিই ভাই-ভাই!
Advertisement
দল সাতটি। কিন্তু একটিমাত্র প্র্যাকটিস মাঠ। সবেধন নীলমনি মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের পাশে বিসিবি একাডেমি মাঠ। সে মাঠেই ২ জানুয়ারি থেকে পালা করে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে দলগুলো। যেহেতু একাডেমি মাঠে ফ্লাডলাইট নেই, তাই দিনের আলোয় প্র্যাকটিস করা ছাড়া উপায়ও নেই। সেক্ষেত্রে সারা দিনে সাত দলের অনুশীলন করা যে বেশ কঠিন।
তবে কি একদম কাকডাকা ভোরে শুরু হচ্ছে প্র্যাকটিস? ঠিক তা নয়। সকাল থেকে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত তিন শিফটে চললো প্র্যাকটিস।
আগামীকাল ৫ জানুয়ারি শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় যে দুই দল এবারের বিপিএলের প্রথম ম্যাচে মুখোমুখি হবে, সেই মাশরাফির রংপুর রাইডার্স আর মুশফিকের চিটাগাং ভাইকিংস আজ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিসিবি একাডেমি মাঠের পাশাপাশি দুই দিকে নেট করলো।
প্র্যাকটিসের এক পর্যায়ে প্রথা মেনে সংবাদ সম্মেলনেও কথা বললেন মাশরাফি আর মুশফিক। তবে অন্য সব আন্তর্জাতিক ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে তারা কথা বলেন বিসিবি কনফারেন্স হলে বসে। আর কাল থেকে যে বিপিএলের ষষ্ঠ পর্ব শুরু হচ্ছে, তার আগের দিনের প্রেস মিট হলো প্রথা ভেঙে প্র্যাকটিস ফিল্ডের এককোণে দাঁড়িয়েই।
Advertisement
সেখানেই আগে কথা বললেন রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আর তারপর চিটাগাং ভাইকিংস ক্যাপ্টেন মুশফিকুর রহিম। সাংবাদিকদের সাথে কথোপকোথন পর্ব শেষে হঠাৎ মাশরাফির সাথে দেখা করতে পূর্ব উত্তর দিকের নেট থেকে পশ্চিম উত্তর দিকের রংপুরের মিনি ড্রেসিং রুমে গেলেন মুশফিক। মুশফিককে দেখেই আনন্দের আতিশয্যে বুকে জড়িয়ে ধরলেন মাশরাফি। তারপর ঠিক বড় ভাইয়ের স্লেহে মুশফিকের গলা জড়িয়ে ধরলেন মাশরাফি।
একটা খোলা মাঠে দুই তিন দলের ১৪-১৫ জন করে প্রায় ৪৫-৪৮ জন ক্রিকেটার প্র্যাকটিস শেষে ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত। টিম বয়গুলো ব্যাগ আর কিটস বাসে ওঠানোর কাজে মনোযোগী। কোচিং স্টাফরাও হোটেলে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রিন্ট ইলেক্ট্রনিক্স ও অনলাইনের সাংবাদিক, ফটোসাংবাদিক ও ক্যামেরা ক্রু মিলে নিশ্চিতভাবেই শতাধিক মিডিয়া কর্মীর সামনে প্রতিপক্ষ অধিনায়ককে গলা জড়িয়ে ধরা, হাস্য-কৌতুক এবং অমন আন্তরিক ব্যবহার সচরাচর দেখা যায় না। যত নিবিড় সম্পর্কই থাকুক না কেন, এসব ক্ষেত্রে অনেকেই শত্রু মানসিকতা না দেখালেও পেশাদার আচরণ করে বড়জোর ‘হাই-হ্যালো’ পর্যন্তই যথেষ্ট মনে করতেন। কিন্তু এখানেই ব্যতিক্রম মাশরাফি।
গলা ধরাধরি করে কথা বলতে বলতে একাডেমি মাঠ ছেড়ে গিয়ে উঠলেন টিম বাসে। মাঠ ছাড়ার আগে উচ্চতায় অনেক খাটো মুশফিকের গলা জড়িয়ে মাশরাফির খুনসুুটি, 'তোরা তো দারুণ শক্তিশালি দল। আমার তো ভয় করছেরে। না জানি কি হয় কাল !’ মুশফিকও খুনসুটি বুঝে পাল্টা খুনসুটিই করতে করতে মাঠ ছাড়লেন।
রাত পোহালে যে দলের সাথে বিপিএলের মত বিগ বাজেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরের প্রথম ম্যাচ, সেই চিটাগাং ভাইকিংস ক্যাপ্টেন মুশফিকের গলা ধরে বড় ভাইয়ের আচরণ এবং এমন আন্তরিক ব্যবহার ও হাস্য কৌতুক করা আসলে মাশরাফির পক্ষেই সম্ভব!
এআরবি/এমএমআর/এমকেএইচ