আন্তর্জাতিক

শবরীমালা ইস্যুতে উত্তাল কেরালা, ইন্ধনে বিজেপি

শবরীমালা মন্দিরে দুই নারীর প্রবেশের ঘটনায় দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্য আন্দোলনে উত্তাল রয়েছে। ১২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছে কয়েকটি সংগঠন। বাস ভাঙচুর, অবরোধ বিক্ষোভে উত্তাল কার্যত গোটা রাজ্য।

Advertisement

রাজ্যজুড়ে অশান্তির জন্য ভারতের ক্ষমতাসীন পার্টি বিজেপিসহ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের উস্কানিকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন।

বুধবার ভোরে দুই নারী শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেন। এ ঘটনার পর থেকেই কেরালার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু করে কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। রাস্তা অবরোধ, জোর করে দোকানপাট বন্ধ করে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে বিভিন্ন জায়গায়। এমনকি সচিবালয়ের সামনে খবর সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের মারধরের অভিযোগ ওঠে বিজেপির যুব মোর্চার সদস্যদের বিরুদ্ধে।

এসবের পাশাপাশি বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেয় শবরীমালা কর্ম সমিতিসহ কয়েকটি সংগঠন। গতকালই বুধবারের বিক্ষোভে আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। হরতালের জেরে রাস্তা অবরোধ, ভাঙচুর চলছেই। মৃত্যুর খবরে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়। তাণ্ডব শুরু করেন বনধ সমর্থকরা। বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে রাজধানী তিরুঅনন্তপুরম, কালিকট, মালাপ্পুরমসহ বিভিন্ন জায়গায়। ত্রিশুরে একটি বাস ভাঙচুর করা হয়।

Advertisement

সিপিএম সমর্থকদের পাঁচটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। বন্ধ রাখা হয়েছে কর্নাটক স্টেট ট্রান্সপোর্টের কেরলে চলাচল করা সমস্ত বাস। রাজ্য জুড়ে কালো দিবস পালন করছে ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ)।

শবরীমালা কর্ম সমিতির নেতা কে পি শশীকলা মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা অবরোধ-বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন। কেরালার সাধারণ মানুষকেও বনধ সমর্থনের আবেদন করেছেন।’

অন্যদিকে রাজ্যজুড়ে অশান্তির জন্য বিজেপিকে দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন। তিনি বলেন, ‘শবরীমালা ইস্যুতে এটা বিজেপির পঞ্চম হরতাল। আর সঙ্ঘ পরিবার ধরলে এটা গত তিন মাসে রাজ্যে সপ্তম হরতাল। ওদের কাছে এটাই শেষ রাস্তা। দুর্ঘটনা, মৃত্যু বা আত্মহত্যাকেও শবরীমালার সঙ্গে জুড়ে এই হরতাল-অবরোধের রাজনীতি করে যাচ্ছে বিজেপি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট সব বয়সের নারীদের মন্দিরে প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এই সব আন্দোলন করার অর্থ শীর্ষ আদালকে অবমাননা করা।’

Advertisement

গত একশো বছরের রীতি অনুযায়ী, ৮ থেকে ৫০ বছর বয়সের কোনও নারীই সবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারতেন না। কিন্তু সম্প্রতি পুরনো নিয়মে বদল আনে সুপ্রিম কোর্ট। গত ২৮ সেপ্টেম্বর যুগান্তকারী রায় দেয় সর্বোচ্চ আদালত। যে কোনও বয়সের নারীই এই মন্দিরে পা রাখতে পারবেন বলে জানান বিচারপতিরা।

তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরোধিতায় একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আন্দোলন শুরু করে। একশো বছরের রীতি ভেঙে সবরীমালায় কোনওভাবেই ঋতুবতী নারীরা প্রবেশ করতে পারবেন না বলে জানান আন্দোলনকারীরা।

কিন্তু বিক্ষোভকারীদের বাধা উপেক্ষ করেই বুধবার ভোররাতে মন্দিরে প্রবেশ করেন দুই নারী। প্রার্থনা সেরে দিনের আলো ফোটার আগেই চলে যান তারা। ওই ভক্তদের নিরাপত্তার জন্য মোতায়েন ছিল পুলিশকর্মীরা। এ ঘটনার পরই রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে অশান্তি।

সূত্র: আনন্দবাজার

এসআর/এমএস