বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দেশভাগের পর সময়ের প্রয়োজনেই সংগঠনটির জন্ম ইতিহাসের মহানায়কের হাতে। সময় যখন চেয়েছে তখনই সোচ্চার হয়েছে। শাসকশ্রেণির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ভূমিকা রেখেছে দেশমাতৃকার জন্য। বিজয় নিয়েই ফিরেছে ঘরে। তাইতো বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সব অর্জনের গর্বিত অংশীদার ছাত্রলীগ।
Advertisement
আজ ৪ জানুয়ারি, প্রতিষ্ঠার ৭১ বছর পেরিয়ে ৭২-এ পা রাখছে ছাত্রলীগ। ১৯৪৮ সালের এ দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে স্বল্প পরিসরে যাত্রা শুরু করা সংগঠনটি এখন উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিজহাতে গড়া ছাত্র সংগঠনটি আজ আস্থা অর্জন করেছে দেশের ছাত্রসমাজের।
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ। স্বৈরাচার হটানো থেকে ১/১১-এর সেনাসমর্তিত সরকারের কূটকৌশল থেকে দেশকে রক্ষা করা সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনের সারিতে থেকে নেতৃত্বদানকারী সংগঠনের নাম বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। দেশের সব গৌরবময় অর্জনের গর্বিত অংশীদার। জাতির ক্রান্তিকালে ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত হয়ে ভূমিকা রেখেছে পূর্ণভাবে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে একে একে ৭১ বছর অতিবাহিত করেছে এ সংগঠন। বাঙালি জাতিসত্তার সঙ্গে মিশে থেকে জাতির উত্থানের সব ইতিহাসের প্রত্যক্ষ সাক্ষী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ৫২-এর ভাষা আন্দোলনে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে বাঙালির ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা, ৫৪-এর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ৫৮-এর আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬-এর ৬-দফার পক্ষে গণঅংশগ্রহণের মাধ্যমে মুক্তির সনদ হিসেবে এই দাবিকে প্রতিষ্ঠা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে পাকশাসকদের পদত্যাগে বাধ্য এবং বন্দীদশা থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করা, ৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভ এবং ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য নেতাকর্মী সম্মুখসমরে অংশগ্রহণ করে লাল সবুজের পতাকা ছিনিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
Advertisement
স্বাধীনতার পরও গণতন্ত্র যখনই হুমকির মুখে পড়েছে তখন এ সংগঠন আবির্ভূত হয়েছে ত্রাতার ভূমিকায়। ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে ১/১১ এর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পতন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ছাত্রলীগের ভূমিকার কথা দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়া এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা পরে জাতীয় রাজনীতিতেও নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষনেতার রাজনীতিতে হাতেখড়িও হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর সব কর্মসূচি স্থগিত করেছে সংগঠনটি।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রfব্বানী স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্রলীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন পরবর্তী সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শুক্রবার বাদ জুমা সব সাংগঠনিক ইউনিটকে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করার নির্দেশ দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শুক্রবার সকালে শুধুমাত্র জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। এ ছাড়া পরবর্তী সব কর্মসূচি স্থগিত করা হলো।
Advertisement
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পরে জানিয়ে দেয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এমএইচ/বিএ