দেশজুড়ে

সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জে শোকের ছায়া

আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুর খবরে কিশোরগঞ্জে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বৃহস্পতিবার রাতে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

Advertisement

সৈয়দ আশরাফের মৃত্যু সংবাদে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েন কিশোরগঞ্জ জেলা অাওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। মৃত্যু খবর শুনে আওয়ামী লীগ অফিসে ছুটে আসেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তারা প্রিয় নেতার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. এম এম আফজাল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, সৈয়দ আশরাফ ছিলেন দেশের একজন সৎ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠে তিনি দেশের জন্য কাজ কেরেছেন। তিনি ছিলেন জননেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত বিশ্বস্ত। দেশের ক্রান্তিলগ্নে তিনি সাহসিকতার সাথে দলের হাল ধরেছেন। এ ক্ষতি কোনো অবস্থাতেই পূরণ হবার নয়।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম বলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে দেশ একজন মহান নেতাকে হারালো। তিনি সকল দলের নেতাদের প্রদি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তার সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা শান্তিতে রাজনীতি করতে পেরেছেন।

Advertisement

জেলা সম্মিলিত নাগরিক আন্দোলনের প্রধান সমনন্বয়কারী এনায়েত করিম অমি বলেন, সৈয়দ আশরাফ বারবার জন্মায়না। তিনি শুধু দেশের নয়, ছিলেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন রাজনীতিবিদ। তার মৃত্যুতে দেশের এক অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে গেল।

পরিবাররে সদস্যরা জানান, মৃত্যুর সময় বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে তার দুই বোন সৈয়দা নাজমা ইসলাম, সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি ও একমাত্র মেয়ে সৈয়দা রিমা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৯৬ সাল থেকে টানা পাঁচবার কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। তবে অসুস্থ থাকায় একাদশ সংসদ নির্বাচনে শপথ নেয়ার আগেই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হলো এ নেতাকে।

দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের বড় ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫০ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। এছাড়া দায়িত্ব পালন করেছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

Advertisement

১৯৭৫ সালের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলাখানায় জাতীয় চার নেতার সাথে তার বাবাকে হত্যার পর দেশ ছেড়ে লন্ডনে চলে যান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। লন্ডনের হ্যামলেট টাওয়ারে বসবাস করতে থাকেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৬ সালে তিনি দেশে ফেরেন। ওই বছর প্রথম কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হলে তাকে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর ২০০১, ২০০৬, ২০০৮, ২০১৪ ও সবশেষ সদ্যসমাপ্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অসুস্থ অবস্থায় এমপি নির্বাচিত হন।

বিভিন্ন সময় তিনি এলজিআরডি ও জনপ্রশাসনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের ৯ জুলাই তাকে এলজিআরডি মন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই বছরের ১৬ জুলাই তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় জনপ্রমাসন মন্ত্রণালয়ের।

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর স্ত্রী শীলা ইসলামের মৃত্যুতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন তিনি। এরপর অসুস্থ হয়ে একই বছরের ৩ জুলাই থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি হন এ বরেণ্য রাজনীতিক। ফুসফুস ক্যান্সারও আক্রান্ত সৈয়দ আশরাফের অবস্থা অবণতি হলে গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর তিনি জাতীয় সংসদ থেকে তিন মাসের ছুটি নেন। এ অবস্থায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হন তিনি। তবে শপথ নেয়ার আগেই চিরবিদায় নেন সৈয়দ আশরাফ।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামে গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল গ্রামে। তার একমাত্র মেয়ে সৈয়দা রীমা ইসলাম লন্ডনে একটি ব্যাংকে কর্মরত। মৃত্যুকালে তিন ভাই ও দুই বোন রেখে যান তিনি। আগামীকাল শনিবার থাইল্যান্ড থেকে তার মরদেহ দেশে আনার কথা রয়েছে।

নূর মোহাম্মদ/বিএ