খেলাধুলা

সিলেটের জন্য সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে চাই : ওয়ার্নার

তিনি টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সবচেয়ে বিপজ্জনক ওপেনার ক্রিস গেইল নন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের আরেক ভয়ঙ্কর ওপেনার ব্রেন্ডন ম্যাকালাম কিংবা এবি ডি ভিলিয়ার্সের সৃজনশীলতা, সৃষ্টিশীলতা আর উদ্ভাবনী ক্ষমতাও হয়তো তার নেই। তারপরও ডেভিড ওয়ার্নার বিশ্ব ক্রিকেটের বড় নাম। তারকা ব্যাটসম্যান।

Advertisement

৭৪ টেস্টে ২১ সেঞ্চুরি এবং ২৯ হাফ সেঞ্চুরিতে ৬৩৬৩ রান তার। ১০৬ ওয়ানডেতে ১৪ সেঞ্চুরি ও ১৭ অর্ধশতকে রান ৪৩৪৩ আর টি-টোয়েন্টিতে শতরান নেই, সর্বোচ্চ ৯০। ৭০ ম্যাচে ১৭৯২ রান। এটাই শেষ নয়, তার স্ট্রাইকরেট ১৪১.১০ করে।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৪০ প্লাস স্ট্রাইকরেট চাট্টিখানি ব্যাপার নয়। বেশ কঠিন। বিশ্বের অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যানেরও যা নেই। সবচেয়ে বড় কথা তার নেতৃত্ব ক্ষমতাও বেশ।

বল টেস্পারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে ২০১৮ সালের আইপিএল খেলতে পারেননি। তার আগেরবার মানে ২০১৭ সালে সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের অধিনায়ক ছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। তার নেতৃত্বে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।

Advertisement

এবারই প্রথম বিপিএল খেলতে এসেছেন অস্ট্রেলিয়ার এই অসাধারন প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান। সিলেট সিক্সার্সের এবারের অধিনায়কও তিনি। বুধবার রাতে রাজধানীতে পা রাখা ওয়ার্নার আজ শেরে বাংলায় বিসিবি একাডেমি মাঠে সিলেট সিক্সার্সের হয়ে অনুশীলনও করেন। এরপর সন্ধ্যায় স্থানীয় প্রচার মাধ্যমের সামনে কথা বলতে আসেন তিনি।

কথোপকোথনের বড় অংশ জুড়ে ছিল বিপিএল। তার ক্যারিয়ারের কলঙ্কিত অধ্যায় নিয়ে অতি কৌশলী ও কুটনৈতিক ভাষায় খুব কম কথা বলছেন ওয়ার্নার। বল টেম্পারিং নিয়ে যতগুলো প্রশ্ন হয়েছে, তিনি তা সুকৌশলে পাশ কাটিয়ে গেছেন। আর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে আবার খেলার বিষয় নিয়েও বিপিএল ভুমিকা রাখতে পারে বলে জানিয়েছেন ওয়ার্নার।

সিলেট সিক্সার্সের অধিনায়ক মনোনীত হয়ে বেশ খুশি এ অস্ট্রেলিয়ান। বিপিএলে প্রথমবার খেলতে এসেই অধিনায়কত্ব পাওয়ার অনুভুতি ব্যক্ত করে ওয়ার্নার বলেন, ‘নেতৃত্ব পেয়ে আমি গর্বিত। অধিনায়ক হিসেবে আমার প্রথম ও মূল কাজ হবে কোচিং স্টাফ, টিম ম্যানেজমেন্টদের সাথে নিয়ে ক্রিকেটারদের সেরাটা বের করে আনা। আমাদের সেরা একাদশটা খুঁজে বের করতে হবে। এবং মাঠে নামার আগে প্রস্তুতিটাও হতে হবে যথার্থ।’

নিজের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে ওয়ার্নার মিডিয়ার সাথে প্রথম আলাপেই জানিয়ে দিলেন, ‘আমি আসলে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে চাই। সে ক্ষেত্রে রান করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, আমি তাই রান করতে উন্মুখ হয়ে আছি।’

Advertisement

প্রথমবার বিপিএল খেলতে আসার অনুভুতি জানতে চাওয়া হলে ওয়ার্নার বলেন, ‘আমি বিপিএল খেলতে আসতে পেরে বেশ রোমাঞ্চিত। পুলকিত।’

ওয়ার্নারের ধারনা, আইপিএল থেকে যেমন ভারতে বেশ কিছু সম্ভাবনাময় তরুণ উঠে এসেছেন, একইভাবে বিপিএল খেলে খেলেও নতুন প্রতিভার উন্মেষ ঘটবে। অজি ক্রিকেটে তার সহযোগি স্টিভেন স্মিথও এবারের বিপিএলে ওয়ার্নারের প্রতিপক্ষ। সাবেক এ অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক খেলবেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে।

স্বদেশী স্মিথকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেতে এবং দেখতে কেমন লাগবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়ার্নার বলেন, ‘সেটা অন্য সব ম্যাচের মতই হবে। স্মিথ তো আর একা খেলবে না। তার দলে ১১ জন ক্রিকেটার খেলবেন। আমার কাছে বড় ব্যাপার হবে নিজ দলের বোলারদের উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত করা। যাতে করে স্মিথ তাদের ওপর ছড়ি ঘোরাতে না পারেন। বরং আমার দলের বোলাররা তার ওপর চেপে বসতে পারেন।’

সবার জানা অস্ট্রেলিয়ানরা হার্ড-বাউন্সি ট্র্যাকে খেলে বড় হওয়া ও অভ্যস্ত। স্লো-লো ট্র্যাকে কম গতির ও স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে তারা ততটা স্বচ্ছন্দ নন। তাই ওয়ার্নার ও স্মিথের বিপিএলে ভাল খেলা, রান করা এবং দল জেতানো ভূমিকা নেয়ার ক্ষেত্রে উইকেট অবশ্যই বড় ভূমিকা থাকবে। উইকেট ভাল হলে মানে নির্ভেজাল ব্যাটিং ট্র্যাক হলে ওয়ার্নারের স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল উইলোবাজিতে সহায়ক হবে।

ওয়ার্নার নিজেও তা ভাবছেন। তবে তিনি একটি নতুন তথ্য দিয়েছেন। তাহলো এখন অস্ট্রেলিয়ার ক্লাব ক্রিকেট হচ্ছে স্লো ও লো ট্র্যাকে। আজ কোচ ওয়াকার ইউনুসের সাথে উইকেট নিয়ে কথা বলেছেন।

উইকেটের প্রসঙ্গ আসতে সে কথোপকোথনের উদাহরণ টেনে ওয়ার্নার বলে উঠলেন, ‘আমি আজ অস্ট্রেলিয়ার ক্লাব ক্রিকেট নিয়ে কোচ ওয়াকার ইউনুসের সাথে কথা বলছিলাম। তাকে জানিয়েছি, সেখানে পিচ গুলো স্লো অ্যান্ড লো। যদিও ঐ সব কন্ডিশনে নিজেকে মানিয়ে নেয়া কঠিন। তারপরও আমি বেশ ভাল সময় কাটিয়েছি এবং প্রচুর রানও করেছি। আমি ঢাকা ও চট্টগ্রামে আগে খেলার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, বিপিএলের উইকেট হয়ত তেমনই মন্থর গতির ও নিচু বাউন্সের হবে।’

তার নিজের লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা বলতে গিয়ে ওয়ার্নার জানান, ‘আমার মূল কাজ হচ্ছে ছন্দে থাকা এবং সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া।’

বল টেম্পারিংয়ের অভিযোগে সাসপেন্সনের খারায় পড়ে অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের বাইরে। খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে হচ্ছে সময়টা ভাল যায়নি। হতাশায় কেটেছে; কিন্তু ডেভিড ওয়ার্নারের কাছে যখন জানতে চাওয়া হলো সাসপেন্ড হবার পরের সময়টা কেমন কাটছে?

তার ভাবলেশহীন জবাব, নাহ! জীবন সুন্দরই আছে। আমি আমার পরিবারের সাথে বেশ সুন্দর সময় কাটিয়েছি। মাঠের বাইরে থাকাটাকে ‘শাপে বর’মনে হয় তার। তাইতো মুখে একথা, আসলে আমি যদি মাঠের বাইরে ছিটকে না পড়তাম তাহলেতো আর ঘরে থাকা হতো না তেমন, পরিবারের সাথেও সময় কাটানো যেত না। আমি ওই প্রাপ্ত সময়টাকে যতটা সম্ভব ভাল ভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছি। আমি ভাল মানুষ হতে চাই। তবে আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে একজন ভাল পিতা এবং আদর্শ স্বামী হওয়া। এখন আবার ক্রিকেটে ফিরে আসা। এ সময়ের লক্ষ্য একটাই সিলেট সিক্সার্সকে ওপরে টেনে তোলা।’

বিপিএলকে ফ্র্যাঞ্চাইজি আসর হিসেবে এতটুকু ছোট করে দেখতে চান না ওয়ার্নার। এমন টুর্নামেন্টে খেলতে আসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘কানডায় একটি টুর্নামেনন্ট খেলেছি। যেখানে সব ম্যাচ এক মাঠেই হয়েছিল। সেটাও ছিল খুব কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং। আর সেখানে বিপিএলতো প্রতিষ্ঠিত আসর। আর এখানে বিশ্বমানের ভেন্যু আছে। আমি আশা করছি খুব ভাল উইকেটে প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ক্রিকেটই হবে।’

আগামী মার্চেই তার এক বছরের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। তার পরপরই বিশ্বকাপ। সেখানে টিম অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে পারা বা দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে খুব বেশি চিন্তা-ভাবনা নেই। কিংবা থাকলেও ওয়ার্নার তা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন।

আর তাই মুখে এমন কথা, আমাকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নিবে কি নিবে না, সেটা নির্বাচকরাই ভাল জানেন। সেটা তাদের কাজ। দিন শেষে রান করা ছাড়া আমি কিই বা করতে পারি? কিংবা করার আছে। আমি সেই কাজ করার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমি এটুকু বলতে পারি সিলেট সিক্সার্সের হয়ে আমি আমার সেরাটাই নিংড়ে দেব। ’

এআরবি/আইএইচএস/এমকেএইচ