অর্থনীতি

লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি

রফতানির পালে হাওয়া লেগেছে। চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দুই হাজার ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রফতানি আয়ে সুখবর নিয়েই অর্থবছর শুরু হয়েছিল। ইতিবাচক সেই রফতানি ধারা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া স্থিতিশীলতার কারণে দেশের প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক খাতের আয় ক্রমান্বয়ে বাড়ছে, যার কারণে রফতানিতে বড় প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে।

ইপিবির তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সব ধরনের পণ্য রফতানিতে বৈদেশিক মুদ্রার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তিন হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ৮৭৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ সময়ে আয় এসেছে দুই হাজার ৪৯ কোটি ৯৮ লাখ মার্কিন ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রফতানি আয় অর্জিত হয়েছিল এক হাজার ৭৯১ কোটি ৬০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ১৪ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, একক মাস হিসেবে গত ডিসেম্বরে ৩৪২ কোটি ৬১ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি হয়। এটি গত বছরের ডিসেম্বরের চেয়ে দুই দশমিক ১৮ শতাংশ বেশি। গত বছরের ডিসেম্বরে রফতানি হয়েছিল ৩৩৫ কোটি ৩১ লাখ ডলারের পণ্য।

Advertisement

দেশের রফতানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। আলোচিত সময়ে এই খাত থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে রফতানি আয় এসেছিল এক হাজার ৪৭৭ কোটি ২৭ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে তৈরি পোশাক খাতে পণ্য রফতানিতে আয় হয়েছে এক হাজার ৭০৮ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে প্রবৃদ্ধি ১৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে ছয় মাসে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় আয় বেড়েছে আট দশমিক ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে নিটওয়্যার খাতের পণ্য রফতানিতে ৮৬৫ কোটি ২৬ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেড়েছে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ।

গত অর্থবছরের তুলনায় গত ছয় মাসে নিটওয়্যার খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন গার্মেন্ট পণ্য রফতানিতে ৮৪৩ কোটি ২৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাঁচ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ'র (পোশাকশিল্প প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতি) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে পোশাক শিল্পকে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। আমরা এখন শতভাগ কমপ্লায়েন্স কারখানার দিকে হাঁটছি। প্রতি মাসেই রফতানি আয় বাড়ছে, বাড়ছে প্রবৃদ্ধি। কিন্তু এ খাতের কিছু সমস্যা বড় আকার ধারণ করছে।

তিনি বলেন, ইউরোপের বাজারসহ অন্যান্য দেশের ক্রেতা এবং পণ্যের মূল্য ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। মজুরি, জ্বালানি, পরিবহন ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। মজুরি বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় ১৭ দশমিক ১১ ভাগ বেড়েছে। ফলে পোশাক শিল্প নিদারুণ চাপের মধ্যে রয়েছে। প্রতিযোগী দেশের সঙ্গে অস্তিত্ব এবং আমাদের সক্ষমতা টিকিয়ে রাখা এখন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া অ্যাকর্ড, অ্যালায়েন্সের শর্তানুযায়ী এ শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কাজে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে।

Advertisement

ইপিবির প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ৬৬ দশমিক আট শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে কৃষিপণ্য রফতানিতে। এ খাত থেকে আয় এসেছে ৫১ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রফতানি আয় বেড়েছে ৫১ দশমিক ১৫ শতাংশ। গত ছয় মাসে হোম টেক্সটাইল খাতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে শূন্য দশমিক তিন শতাংশ। এ সময় আয় এসেছে ৪০ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের চয় মাসে প্লাস্টিক পণ্যে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ২১ দশমিক ২৫ শতাংশ। এ সময়ে আয় হয়েছে পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ ডলার, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি।

গত ছয় মাসে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমেছে। একই সঙ্গে অর্জিত হয়নি লক্ষ্যমাত্রা। এ সময়ে এ খাত থেকে আয় এসেছে ৪২ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ ছাড়া চামড়াজাত পণ্য রফতানিতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় কম হয়েছে এক দশমিক ৬৮ শতাংশ। প্রবৃদ্ধিও গত বছরের চেয়ে ১৪ দশমিক ১৮ শতাংশ কম হয়েছে। এ সময়ে আয় হয়েছে ৫৩ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এ ছাড়া গত ছয় মাসে প্রবৃদ্ধি কমেছে মাছ, গ্লাস ও জাহাজ রফতানিতে।

এসআই/জেডএ/জেআইএম