বিদায় হওয়া ২০১৮ সালে সব মিলিয়ে ৫৬টি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। এরমধ্যে আছে যৌথ প্রযোজনার ছবি, আছে আমদানি করা ছবি। অর্ধ শতাধিক চলচ্চিত্রের মধ্যে ব্যবসা সফল হয়নি দশটি ছবিও।
Advertisement
এই পরিসংখ্যান সিনেমা শিল্পের জন্য হুমকির, ভয়ানক ভবিষ্যতের আভাস। তবে চলচ্চিত্রের মানুষেরা নানাভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই শিল্পের চাকা সচল রাখতে। দিনের পর দিন মুনাফা হারিয়েও প্রযোজকরা টাকা লগ্নি করছেন, হতাশা কাটিয়ে নতুন উদ্যমে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামছেন নির্মাতা ও নায়ক-নায়িকারা।
পুরনো বছরের হতাশা কাটিয়ে একটি সফল বছর পাবে ঢাকাই সিনেমা সেই প্রত্যাশায় বুক বেঁধেছেন অনেকে। আশায় প্রদীপ জ্বেলেছেন সিনেমার দর্শকরাও। ২০১৯ সালে মুক্তি পাবে এমন তালিকায় আছে বেশ কিছু ভালো মানের ও বাজেটের সিনেমা। সেগুলো হলে ফিরিয়ে আনতে পারে দর্শক।
সেইসব ছবির বদৌলতে বিগত এক দশকের মতোই ২০১৯ সালেও দেখা যাবে শাকিব খানের আধিপত্য। তার ‘নোলক’, ‘শাহেনশাহ’, ‘একটু প্রেম দরকার’ ছবিগুলো মুক্তি পাবে চলতি বছরে। গল্প, নির্মাণের চমকে ছবিগুলো মুগ্ধতা ছড়াতে পারে বলে প্রত্যাশা ঢাকাই সিনেমায় বর্তমানের সেরা নায়কের।
Advertisement
‘নোলক’ ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে আছেন ববি, ‘শাহেনশাহ’ ছবিতে শাকিবের দুই নায়িকা হলেন নুসরাত ফারিয়া ও রোদেলা জান্নাত। আর শাহীন সুমনের ‘একটু প্রেম দরকার’ ছবিতে শাকিব খানের নায়ক বুবলী।
এছাড়াও চলতি বছরে শাকিব খানের দেখা মিলতে পারে কাজী হায়াতের ‘বীর’ ছবিতেও। ছবিটির মহরত হয়ে গেল সম্প্রতি। তবে এর শুটিং এখনো শুরু হয়নি। তাই চলতি বছরে ছবিটির মুক্তির ব্যাপারটিও নিশ্চিত নয়। বলে রাখা যায়, গেল দুই তিন বছরের মতো চলতি বছরে কলকাতার ছবিতে নাও দেখা যাতে পারে শাকিবকে।
শাকিব খানের পর গেল বছরে সেরা নায়ক হিসেবে আলোচনায় সিয়াম আহমেদ। চলতি বছরটাও তার ভালো কাটবে সেই প্রত্যাশা করাই যায়। সিয়ামের ভক্তরা ও সিনেমার দর্শক এই বছরেই উপহার পাবেন হয়তো সিয়ামের সেরা ছবিটির। বলছি তৌকীর আহমেদের ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ছবির কথা।
ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ছবিটি সিয়ামকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে এমনটাই ভাবছেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। জিতে নিতে পারেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও। এই ছবিতে তার বিপরীতে আছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। এছাড়াও সিয়ামকে দেখা যেতে পারে জাজের একটি ছবিতেও। সেখানে তার নায়িকা পূজা চেরী।
Advertisement
নুসরাত ইমরোজ তিশার ভক্তরাও এবার সিনেমা হলে গিয়ে প্রিয় অভিনেত্রীর তিনটি ছবি দেখার সুযোগ পাবেন। সেগুলো মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবারের বিকেল’, তৌকীরের ‘ফাগুন হাওয়ায়’ ও যৌথ প্রযোজনার ‘হলুদ বনি’।
চলতি বছরে ‘শনিবারের বিকেল’, ‘সাপলুডু’ ছবি দুটো দিয়ে প্রায় এক বছর পর হলে আসবেন নন্দিত অভিনেতা জাহিদ হাসানও। তাকে কলকাতার রাইমা সেনের বিপরীতেও একটি ছবিতে দেখার সুযোগ হয়তো পাবেন দর্শক।
২০১৯ সালে সাফল্যের রঙ ছড়াতে পারেন চিত্রনায়ক সাইমন ও চিত্রনায়িকা মাহি। তাদের ‘আনন্দ অশ্রু’ ছবিটি নির্মিত হচ্ছে রোমান্টিক গল্পে। মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত এই ছবিটি নিয়ে অনেক প্রত্যাশা ‘পোড়ামন’ ছবির জুটির।
এছাড়াও সাইমনের দেখা মিলবে ‘নদীর বুকে চাঁদ’, ‘বাহাদুরি’ নামের ছবিগুলোতে। নায়িকা মাহির ‘অন্ধকার জগত’ ছবিটি দেখতে হলে যেতে পারবেন তার ভক্তরা। বদিউল আলম খোকন পরিচালিত এই ছবিতে মাহির নায়ক ছোট পর্দার ডি এ তায়েব।
চিত্রনায়ক বাপ্পীর জন্য ২০১৮ সালটা ছিলো বেশ চ্যালেঞ্জের। দুটি আলোচিত ছবিও তিনি উপহার দিয়েছেন ‘পলকে পলকে তোমাকে চাই’ ও ‘নায়ক’ নামে। চলতি বছরেও তিনি হাজির হবেন সিনেমা নিয়ে। মিমের বিপরীতে ‘দাগ’ দিয়ে শুরু হবে তার বছর। মুক্তির মিছিলে আছে ‘ডেঞ্জারজোন’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ ছবি দুটিও।
তারমধ্যে দেবাশীষ বিশ্বাস পরিচালিত ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’ ছবিতে বাপ্পীর নায়িকা অপু বিশ্বাস। আর বেলাল সানির ‘ডেঞ্জারজোন’ ছবিতে তার নায়িকা জলি।
চিত্রনায়ক নিরব দেখা দেবেন পুরান ঢাকার মাস্তানের বেশে। চলতি বছরে মুক্তি পাবে তার ‘আব্বাস’ সিনেমাটি। সাঈফ চন্দন পরিচালিত এই ছবিটি নিয়ে নিরবের প্রত্যাশা আকাশা ছোঁয়া। আশা করা যাচ্ছে, মারদাঙ্গা অ্যাকশান ধাঁচের ছবিটি দিয়ে দর্শক মাতাবেন তিনি। ছবিতে নিরবের নায়িকা সোহানা সাবা।
দিনে দিনে ফিকে হয়ে আসছে যেন আরিফিন শুভ’র ক্যারিয়ার। ‘ঢাকা অ্যাটাক’র সাফল্যের পর তেমন করে বলার মতো কোনো সংযোজন নেই এই নায়কের ঝুলিতে। গেল বছরটা ছিলো সুপার ফ্লপের। তবে চলতি বছরে বাজিমাত করে দেখানোর অপেক্ষায় শুভ।
বিদ্যা সিনহা মিমের বিপরীতে গোলাম সোহরাব দোদুলের পরিচালনায় শুভকে দেখা যাবে ‘সাপলুডু’ সিনেমায়। ছবিটি দিয়ে শুভ সাফল্য পেতে পারেন বলে মনে করেন ছবিটির নির্মাতা দোদুল। এছাড়াও এই নায়ককে নিয়ে নতুন ছবির ঘোষণা দিয়েছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির টিম। এটিও হলে আসতে পারে এই বছরে।
‘সাপলুডু’, ‘দাগ’ ছাড়াও মিম ভক্তদের জন্য সুখবরের নাম ‘থাই কারি’। কলকাতার একক প্রযোজনার এই ছবিটি চলতি বছরে বাংলাদেশে মুক্তি পেতে পারে সাফটা চুক্তির আওতায়। এখানে মিমের নায়ক সোহম চক্রবর্তী।
চিত্রনায়ক ফেরদৌসকে ২০১৯ সালে হলে দেখা যাবে দুটি বিগ বাজেটের ছবিতে। দুটি ছবিই নির্মাণ করবেন নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুল। একটি ছবির নাম ‘জ্যাম’ ও অন্যটি হলো ‘গাঙচিল’।
২০১৯ সালে সিনেমার চমক হতে পারেন কণ্ঠশিল্পী থেকে গায়ক হওয়া তাহসান। সিনেমার নায়ক হিসেবে তিনি হাজির হবেন ‘যদি একদিন’ ছবিতে। এখানে তার নায়িকা কলকাতার অভিনেত্রী শ্রাবন্তী। মোস্তফা কামাল রাজ পরিচালিত এই ছবিতে আরও দেখা যাবে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবির ভিলেন চরিত্রে অভিনয় করা তাসকিন রহমানকেও।
অভিনেত্রী জয়া হাজির হবেন কলকাতার ‘ক্রিসক্রস’ ছবিটি নিয়ে। এটি সাফটা চুক্তিতে মুক্তি পেলে হলে গিয়ে দেখতে পারবেন তার ভক্তরা। এছাড়া নিজের প্রযোজনায় তিনি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন ‘ফুড়ুৎ’ নামের একটি ছবি। এটিও চলতি বছরে মুক্তি পেতে পারে।
নতুন নায়িকা অধরা খান ‘ড্রিমগার্ল’, ‘বখাটে’ দিয়ে এবারও হলে আসতে পারেন। পূজাকে দেখা যাবে সিয়ামের বিপরীতেই একটি ছবিতে। এর নাম এখনো ঠিক হয়নি।
এছাড়াও চলতি বছরে বাজিমাত করতে পারে কাজী আনোয়ার হোসেনের বিখ্যাত ‘মাসুদ রানা’-কে নিয়ে নির্মিত জাজ মাল্টিমিডিয়ার ছবিটি। জাজের প্রযোজনায় সিয়াম-পূজার ছবিটিও আনতে পারে ব্যবাসায়িক সাফল্য।
২০১৯ সালে মুক্তি পাবে আমিন খান-পপি, ইমন-শিরিন শিলারি ‘সাহসী যোদ্ধা’ ছবিটি। দর্শক মুগ্ধ করতে পারে বিউটি সার্কাস, ঊনপঞ্চাশ বাতাস ছবিগুলো।
মুক্তি পেলে চলতি বছরটা মাতিয়ে দিতে পারেন অমিতাভ রেজা চৌধুরীর দীপংকর দীপন, হিমেল আশরাফের মতো নির্মাতারাও। তারমধ্যে অমিতাভের ‘রিকশা গার্ল’ ও হিমেলের ‘প্রিয়তমা’ ছবিগুলো বেশ আলোচনায় আছে।
বছরজুড়েই নির্মিত হবে সিনেমা। আসবে অনেক নতুন ছবির নাম। সেখান থেকেও বাজিমাত করে দিতে পারেন কেউ কেউ।
এলএ/এমকেএইচ