ধর্ম

হজের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ইন্নাদিনা ইনদাল্লাহিল ইসলাম অর্থাৎ ইসলামই আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থা। এই ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। হজ হচ্ছে পাঁচটি ভিত্তির একটি। যা শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত। আমরা কেন হজ করি, হজ কিভাবে মানুষের প্রতি, কি কারণে ফরজ হলো এ ব্যাপারে  মানুষেরই জানা-অজানা বিষয়গুলো জাগো নিউজের পাঠকদে জন্য হজের সংক্ষিপ্ত প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হলো :হজ কি?হজ মানে হচ্ছে সংকল্প করা, পরিভাষায়, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে হজের মাসের নির্ধারিত দিনসমূহে নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাইতুল্লাহ ও সংশ্লিষ্ট স্থানসমূহ জিয়ারত ও বিশেষ কার্যাদি সম্পাদন করাই হচ্ছে হজ। (কাওয়াইদুল ফিকহ)হজের পটভূমি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট :হজের ইতিহাস অতি প্রাচীন এবং এর প্রতিটি কাজ ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত ও তাৎপর্যপূর্ণ।১. হজরত আদম আলাইহিস সালাম ও হজরত হাওয়া আলাইহিস সালাম জান্নাত থেকে পৃথিবীতে আসার পর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। একে অপরকে ব্যকুল হয়ে খুঁজতে থাকেন। অবশেষে আল্লাহর অশেষ রহমতে তাঁরা আরাফাতের ময়দানে পরস্পর মিলিত হন। তারই কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সমগ্র পৃথিবী থেকে বনী আদম প্রতি বছর আরাফাতের মহামিলন প্রান্তরে উপস্থিত হয়ে আল্লাহ তাআলার দরবারে রোনাজারি, কান্নাকাটি করে তাদের হৃদয় ও মন দিয়ে আল্লাহকে উপলব্দি করার প্রাণপণ চেষ্টা সাধনা করেন। আর তা করা হয় ৯ই জিলহজ দুপুরের পর থেকে ১০ই জিলহজ ফজরের পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময় কিছুক্ষণের জন্য হলেও অবস্থানই হল হজের রুকন।২. হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও তাঁর স্ত্রী বিবি হাজেরা এবং তাঁদের পুণ্যবান সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম এর দ্বারা প্রচলিত আজ থেকে প্রায় চার হাজার বছর পূর্বে সংঘঠিত সাঈ, মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ এবং কুরবানী আদায় করা। এভাবে হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সর্বযুগের আল্লাহ প্রেমিক, আল্লাহর জন্য নিবেদিত প্রাণ নাবী-রাসূলগণসহ সব অলী-আবদাল তথা আল্লাহর নেককার, সত্যপ্রাণও মাকবূল বান্দাগণের পরম ব্যকুলতার সঙ্গে আল্লাহর ঘরে হাজিরা দেয়ার মাধ্যমে রচিত হয়েছে হজ ও জিয়ারাতের সুবিশাল ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।পৃথিবীতে সর্বপ্রথম হজরত আদম আলাইহিস সালাম বাইতুল্লাহ শরীফে হজ আদায় করেন। পর্যায়ক্রমে হজরত নূহ আলাইহিস সালামসহ অন্যান্য নাবী ও রাসূলগণ বাইতুল্লাহ জিয়ারত ও তাওয়াফ করেছেন। (আখবারে মক্কা)।হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, বাইতুল্লাহ পুনঃর্নিমাণের পর হজরত জিব্রিল আলাইহিস সালাম এই ঘরকে তাওয়াফ ও হজ করার জন্য হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে বলেন। এ নির্দেশ পেয়ে হজরত ইবরাহিম ও হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম উভয়েই তাওয়াফসহ হজের যাবতীয় কার্মকাণ্ড সমাধা করেন। এরপর আল্লাহ তাআলা গোটা পৃথিবীর মানুষের জন্য হজের ঘোষণা ছড়িয়ে দিতে নির্ধেষ দেন। কুরআনের ঘোষণাটি এই :`এবং মানুষের নিকট হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার নিকট আসবে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার ক্ষীনকায় উষ্ট্রের পিঠে, তারা আসবে দূরদূরান্তের পথ অতিক্রম করে। (সূরা হজ : আয়াত ২৭)তখন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আল্লাহ নির্দেশ পেয়ে একটি উঁচু স্থানে আরোহন করলেন এবং ডানে-বামে, পূর্ব-পশ্চিমে ফিরে হজের ঘোষণা করে বললেন:`আইয়ুহান্নাসু কুতিবা আলাইকুমুল হাজ্জু ইলাল  বাইতিল আ`তিক্বি ফাআঝিবু রাব্বাকুম` `হে লোকসব! বাইতুল্লাহ শরীফের হজ তোমাদের ওপর ফজর করা হয়েছে। তোমরা তোমাদের  প্রতিপালকের আহবানে সাড়া দাও।হজরত ইবারাহিম আলাইহিস সালামের  এ আহবানে সাড়া দিয়ে পূর্ব-পশ্চিম দিগন্তে যাদের  হজ নসিব হয়েছে,তারা `লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক` হাজির হে আল্লাহ! আমার সবাই হাজির` বলেছে। যার যতবার নসিব হয়েছে ততবার হজ পালনে সাড়া দিয়েছে। এভাবে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পর যত নাবী-রাসূল পৃথিবীতে এসেছেন তাঁরা সবাই বাইতুল্লাহ জিয়ারত করেছেন এবং হজ পালন করেছেন। (আখবারে মাক্কা)হজ ফরজে আল্লাহর বানী :মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ করা তার জন্য  আবশ্যক কর্তব্য।` (সূরা আল-ইমরান : আয়াত ৯৭) উপরোক্ত বিষয়াবলীর আলোকে হজের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে বুকে ধারন করে হজের যাবতীয় কর্মকাণ্ড পালন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে এগিয়ে যাব। অপর অক্ষম, দুর্বল হাজিদেরকে কর্মকাণ্ড সম্পাদনে সহযোগিতা করব। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।জাগোনিউজ২৪.কমের সঙ্গে থাকুন। ওমরা ও হজের ধারাবাহিক আলোচনা পড়ুন। কুরআন-হাদিস মোতাবেক আমলি জিন্দেগি যাপন করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করুন। আমিন, ছুম্মা আমিন।এমএমএস/এআরএস/পিআর

Advertisement