বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও জাতীয় সংসদ সদস্য, প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়ও সাংসদ। এবার ওয়ানডে ফরম্যাটে টাইগার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাও বিপুল ভোটে জিতে চলে আসলে সংসদে এবং জাতীয় সংসদ সদস্যর তকমা গায়ে এঁটেই বিশ্বকাপ ক্রিকেটের বড় মঞ্চে পা রাখবেন মাশরাফি।
Advertisement
আচ্ছা অধিনায়ক মাশরাফির সংসদ নির্বাচনে এমন বিপুল বিজয় আর সংসদ সদস্য হওয়াটা কিভাবে দেখছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন?
ওপরের প্রশ্নটি শুনতে নিশ্চয়ই খুব কানে লাগছে, তাই না? হ্যাঁ এটা সত্যি যে, গুঞ্জনটি মোটেই শ্রুতিমধুর নয়। কর্কশ; কিন্তু চরম সত্য হলো, ক্রিকেট পাড়া ছাপিয়ে অনেক জায়গায়ই এমন গুঞ্জন, কানাঘুষা, ফিসফাস। বাংলাদেশে পরশ্রীকাতরতা মহামারির মত। ছোঁয়াচেও। কারো ভাল সহ্য করার মানসিকতাটা কম। সে চিন্তা থেকেই আসলে কোথাও কোথাও কিন্তু এমন প্রশ্ন উঠছে, ‘বর্তমান বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন মাশরাফির রাজনৈতিক উত্থান এবং শিরোনামে উঠে আসাকে কিভাবে দেখছেন?
তবে শুনুন, বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন রীতিমত মাশরাফি প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এক কথায় মাশরাফিতে মুগ্ধ বোর্ড সভাপতি। মাশরাফির এমপি হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়াটা হবে তার কাছে দারুণ এক রোমাঞ্চকর ঘটনা। তাইতো মুখে এমন কথা, ‘এটি তো একটি সাঙ্ঘাতিক ব্যাপার। আমার মনে হয়, ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো এটি হতে যাচ্ছে। আমার এটি জানা নেই বা কখনো শুনিনি যে একজন পার্লামেন্ট সদস্য ক্রিকেট খেলছে মাঠে এবং অধিনায়কত্ব করছে। সুতরাং এটি পুরোপুরি নতুন হবে এবং আমি অনেক রোমাঞ্চিত এটি নিয়ে। আমার মনে হয়, এর চেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না।’
Advertisement
ক্রিকেটার মাশরাফি ও সাংসদ মাশরাফি, মাশরাফি আসলে কি চান? তার ভাললাগার ক্ষেত্রটা কোথায়, তাও বেশ ভালই জানা পাপনের। তাইতো তার কন্ঠে একথা, ‘একটি জিনিস মনে রাখবেন, মাশরাফি রাজনীতিতে এসেছে এবং সে অনেক বেশি সিরিয়াস। ওর কিন্তু রাজনীতি করার পেছনে ওই কি হবো এটার চিন্তা নেই। একটাই চিন্তা ওর মাথায়, সেটি হলো এলাকার কাজ। এলাকার মানুষের জন্য ও কিছু করতে চায়।’
এখন থেকেই নাকি এলাকার চিন্তায় ব্যাস্ত মাশরাফি। পাপন বলেন, ‘আজকেও যতক্ষণ সে আমার সাথে ছিলো একই কথা বলেছে যে, পাপন ভাই আমার এটি লাগবে, ওটা লাগবে। আমি শুধু বলেছি সব হবে, আগে শপথটি নিয়ে নাও, মন্ত্রীপরিষদ গঠন হোক, তুমি যা যা চাও সব হবে। এগুলো নিয়ে চিন্তা করো না। ও এগুলো নিয়ে অনেক বেশি আগ্রহী। এলাকায় কাজ করতে চায়। তবে এটি যেমন সত্যি, তেমন ওর মনের মধ্যে যে সারাক্ষণ ক্রিকেটই আছে এতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ ও একদম ওখান থেকে সরাসরি অনুশীলনে চলে গিয়েছে। বিপিএল শুরু হতে যাচ্ছে। সুতরাং নিজের খেলার প্রতি সম্পূর্ণ সিরিয়াস আছে। একটুকুও পরিবর্তন হয়নি। এর বড় প্রমাণ হচ্ছে, যখন আমরা নির্বাচনের মাঠে চলে গিয়েছি এবং এলাকায় কাজ করছি তখন কিন্তু সে খেলছিলো এবং খেলার মধ্যে ছিলো। ও অনেক দেরি করে গিয়েছে। এটাই প্রমাণ করে যে, এখনও খেলাটিই তার কাছে বেশি প্রাধান্য পায়।’
এদিকে কেউ কেউ মনে করছেন ক্রিকেটার-অধিনায়ক মাশরাফির জন্য সামনের সময়গুলো বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ তাকে এখন অনেক কিছুই সামলাতে হবে। ক্রিকেট, মাঠ, জাতীয় দল, এলাকার উন্নয়ন এবং সংসদ সদস্যের দায়-দায়িত্ব সামলানো হবে বেশ কঠিন। কাজটি কঠিন। এখন একদিকে যেমন ক্রিকেট, অন্যদিকে রাজনীতি, এলাকার উন্নয়ন এবং সংসদীয় রীতি-নীতি মেনে চলা ও নতুন সাংসদ মাশরাফির জন্য কাজটি চ্যালেঞ্জিং। তবে বিসিবি বিগ বসের তা মনে হয় না। তার স্থির বিশ্বাস, মাশরাফি একজন সত্যিকার বীর। সাহসী যোদ্ধা। সে ঠিক সব কিছু সামলে নিতে পারবে।
তাইতো পাপনের মুখে এমন সংলাপ, ‘আপনারা যেটি বলছেন, এক ধরনের একটি চিন্তাভাবনা আছে মানুষের। তবে আমি এর সাথে কোনোভাবেই একমত নই। আমি একমত নই এই কারণে যে, মাশরাফি যা করেছে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য সেটাই যথেষ্ট হওয়া উচিৎ। তার জীবন এক রকমই থাকবে না, বিশেষ করে ক্রিকেটারদের। পারফর্মেন্স ওঠা-নামা করে এবং ও এমন একটি সময়ে এসেছে যখন কিনা প্রায় শেষের দিকে। যে কোনো সময়ে সে অবসরে চলে যেতে পারে। সেদিক থেকে চিন্তা করে আমরা চাই যতদিন সে খেলতে পারে খেলুক। আর তার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবে এই ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। এখন পারফর্মেন্স কি হবে সেটি জানি না, কিন্তু সে যে চেষ্টা করবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ ও হচ্ছে সত্যিকারের একজন যোদ্ধা।’
Advertisement
এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম