খেলাধুলা

খেলাটি জানি এবং আমার অভিজ্ঞতাও আছে : আশরাফুল

এই বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িয়েই আলো থেকে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছিলেন। তারপর আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট তাকে পাঁচ বছর সব ধরনের ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ করেছিল। সে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে মুক্ত বিহঙ্গ হয়েছেন আগেই। শাস্তিমুক্ত আশরাফুলের দু-দুটি প্রিমিয়ার লিগ, জাতীয় লিগ আর বিসিএল খেলাও হয়ে গেছে। তবে বিপিএল খেলাটাই ছিল শুধু বাকি।

Advertisement

এবার বিপিএলের প্লেয়ার্স ড্রাফট থেকে তাকে কিনে নিয়েছে চিটাগাং ভাইকিংস। সব কিছু ঠিক থাকলে হয়ত এবারের বিপিএলের মধ্য দিয়ে ক্রিকেটের রঙিন জগতে আবার পা রাখতে যাচ্ছেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

আজ প্র্যাকটিসে এসে সাংবাদিকদের সাথে কথাও বলেছেন এ নন্দিত ও নিন্দিত ক্রিকেটার। আসুন জেনে নেই কেমন ছিল সাংবাদিকদের সঙ্গে আশরাফুলের সেই কথোপকোথন-

প্রশ্ন : আবার বিপিএল খেলতে যাচ্ছেন, কেমন লাগছে?

Advertisement

আশরাফুল : আসলে খুবই ভালো লাগছে। গত দুই বছর প্রথম শ্রেণি এবং ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে খেলতে পেরেছিলাম; কিন্তু এই খেলাগুলো আসলে সম্প্রচার হয় না। এই বিপিএলটি একটি আন্তর্জাতিক মানের টুর্নামেন্ট। এখানে খেলতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। চিটাগাং ভাইকিংসের মালিককে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, আমাকে বাছাই করার জন্য। আর যেহেতু আমি খেলাটি জানি এবং আমার অভিজ্ঞতা আছে সুতরাং চেষ্টা করবো সুযোগ পেলে ভালো খেলার।

প্রশ্ন : বিপিএলে মানিয়ে নেয়া চ্যালেঞ্জের কি না?

আশরাফুল : অবশ্যই চ্যালেঞ্জের হবে। যেটি বললাম যে, এটি একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, এখানে ভালো খেললে কাউন্ট হয়। আমার যেহেতু অভিজ্ঞত আছে, আমি ১৩ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছি এবং প্রথম দুই আসর বিপিএলে খেলেছিলাম। সেখানে চ্যাম্পিয়ন দলের অংশ ছিলাম এবং ভালো খেলেছিলাম। চিটাগাং ভাইকিংসের হয়ে এবারও ভালো খেলার চেষ্টা করবো। দলটিও যেন ফলাফল পায় আমার পারফর্মেন্সের মাধ্যমে সেটিও গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : এই বিপিএল থেকেই আপনার গায়ে কলঙ্ক লেগেছিল। কিভাবে দেখতে চান বিষয়টিকে?

Advertisement

আশরাফুল : আমি যে অন্যায় করেছিলাম তার শাস্তি পেয়েছি এবং সেটার কারণে কিন্তু আমি পাঁচ বছর ৯ মাস বাইরে ছিলাম এই ফরম্যাট থেকে। যেহেতু আমি অন্যায় স্বীকার করেছি এবং প্রায়শ্চিত্ত পেয়েছি এবং গত দুটি বছর আমি ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছি।

মোটামুটি ভালো ক্রিকেট খেলেছি, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বলেন, বিসিএলের এই মৌসুমটি ভালো হয়েছে। সুতরাং আমি চেষ্টা করবো। কারণ, আমার যারা ভক্ত আছেন তারা সকলেই অপেক্ষায় আছেন যেন, আমি আবার ফিরে আসতে পারি। তাদের জন্য হলেও চেষ্টা করবো এই বিপিএলে ভালো খেলতে। তাহলেই আমার মনে হয় যে, প্রশ্নগুলো যে আমি পারবো কিনা...। এটাও একটা মনে করি যে আমাদের ক্রিকেটের জন্য ফিরে আসতে পারি, এটা একটি উদাহরণ তৈরি হবে যে দীর্ঘ সময় বাইরে থেকেও আবার পারফর্মেন্স দিয়ে ফিরে আসাটা এটাও একটা চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি।

প্রশ্ন : ফিরে আসার পরে কি সেই দিনগুলোকে মিস করছেন...।

আশরাফুল : আসলে সবকিছুরই অভিজ্ঞতা হয়েছে। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় টেস্ট থেকেই দলে ছিলাম। গত পাঁচ বছর বাইরে ছিলাম। যদিও আমার এখানে আসার অনুমতি ছিলো নিয়মিত। তবে এরপরেও আমি অনুশীলন পর্বটি আমার বাসার ওখানেই করতাম। এত দূর আসতাম না। আজকে এসে আসলে..., বললাম না যে গত দুই বছর আমি খেলেছি জাতীয় লিগ, ঢাকা লিগ, বিসিএল। তবে এই ফরম্যাটটি ভিন্ন। এখানে আসলে সম্প্রচার হয়, ফোকাস হয়, পারফর্মেন্সটি কাউন্ট হয়। সবগুলো পারফর্মেন্সই গণ্য করা হয়। তবে এটি একটু আলাদাভাবে হয়। একটি ক্রিকেটারের যে স্বপ্ন থাকে বাংলাদেশ দলে খেলাটা সেটার জন্য আসলে এটি অনেক বড় প্ল্যাটফর্ম। আমি আসলে এর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম গত পাঁচটি বছর।

প্রশ্ন : এই পরিবেশে এত বড় ফোকাস পাচ্ছেন, পুনর্জন্ম মনে হচ্ছে কি?

আশরাফুল : আমি যখন জাতীয় লিগে খেলেছি তিন বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আসার পর, তখনই আমার আলাদা একটি অনুভূতি হয়েছে। যাদের সাথে খেলতাম তিন বছর পর আবারও তাদের সাথে জাতীয় লিগে খেলেছি; কিন্তু এই ফরম্যাটটিতে খেলা হয়নি পাঁচ বছর। অবশ্যই অন্যরকম একটি অনুভূতি হচ্ছে। আমি প্রত্যেকটি মুহূর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করছি। এই ধরণের ফরম্যাট এবং পরিস্থিতিতে খেলার অভিজ্ঞতা আমার আগেও ছিলো। এমন না যে, আমার আজকে নতুন হচ্ছে। এই কারণে নরমালভাবেই চিন্তাভাবনা করছি।

প্রশ্ন : কারো সাথে আলোচনা হয়েছে কিনা?

আশরাফুল : আমি যখন প্রিমিয়ার লিগে খেলি, তখন আমার প্রথম অধিনায়ক ছিলো নান্নু ভাই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমার অধিনায়ক ছিলেন সুজন ভাই। আর মুশফিকের যখন অভিষেক হলো তখন আমি বাংলাদেশ দলের নিয়মিত সদস্য ছিলাম। একসাথে আমরা খেলতে পারছি, ভালো লাগছে। আলোচনা সেভাবে হয়নি। কারণ চিটাগাং ভাইকিংসের সবার সাথে আজকেই সাক্ষাৎ হলো এবং অনুশীলন করেছি। সামনের সময়গুলোতে হয়তো আমরা আলোচনা করবো।

প্রশ্ন : বিপিএলে ফেরার মাধ্যমে কি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়া পরিপূর্ণতা পেল?

আশরাফুল : হ্যাঁ এটি সত্যি কথা যে, বাংলাদেশ দলের জার্সিটি আবারো পরতে চাই, সেটার জন্য সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম এটি। আমি আগে থেকেই জানি এটি এবং সবাই জানে। আমি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে পাঁচটি সেঞ্চুরি করেছি; কিন্তু কেউ খেলা দেখেনি, শুধু স্কোরগুলো দেখেছে।

এই প্ল্যাটফর্মটি আমি জানি যে যদি আমি ভালো খেলি...। জানি যে খেলার স্টাইল অনেক পরিবর্তন হয়েছে, আমি যখন খেলা শুরু করেছিলাম তখন কিন্তু এখন যে স্টাইলটি চলছে সেভাবে খেলতাম। এই কারণে আমার একটি জায়গা দরকার ছিলো, যেখানে আমি মনে করি যে সুযোগ পেলে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলতে পারবো। সেই প্ল্যাটফর্মটি আমার দরকার ছিলো, পাঁচ বছর পর আমি পেয়েছি। যদি আমি সুযোগ পাই তাহলে আমার পারফর্মেন্স দিয়ে চেষ্টা করবো ভালো করার।

প্রশ্ন : জাতীয় দলে খেলার ব্যাপারে যেমন ব্যাটিংয়ের দরকার তেমনটি হয়নি, এই প্রসঙ্গে কি বলবেন?

আশরাফুল : সেভাবে যদি বলেন আমার নিষেধাজ্ঞা না থাকলে প্রিমিয়ার লিগে পাঁচটি সেঞ্চুরি নিয়ে হয়তো বা অনেক আলোচনা হতো; কিন্তু যেহেতু আমার নিষেধাজ্ঞা ছিলো এবং এই বিপিএল দিয়ে আমি আবারো খেলতে পারবো। ১৩ই আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত আমার নিষেধাজ্ঞা ছিলো, আমি যে সেঞ্চুরিগুলো করেছিলাম তখন কিন্তু আমার নিষেধাজ্ঞা ছিলো যে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বা বিপিএলে খেলতে পারবো না। আমার জাতীয় লিগটি খুব একটা ভালো হয়নি, তবে বিসিএল মোটামুটি ভালো হয়েছে। কিন্তু আমার মূল ফোকাস ছিলো এই বিপিএলেই। কারণ, এখানে ভালো কিংবা ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলতে পারলে অনেক কিছু সহজ হবে। যেহেতু আমার অনেক অভিজ্ঞতা আছে আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার, সবাই দোয়া করবেন ইনশাল্লাহ আমি চেষ্টা করবো।

প্রশ্ন : সবাই আপনার এ ফেরাকে কেমন ওয়েলকাম করেছে?

আশরাফুল : সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক আছে আল্লাহর রহমতে। এখন শুধু পারফর্মেন্সের জন্য অপেক্ষা করছি।

প্রশ্ন : কত বছর পর্যন্ত ক্রিকেট খেলবেন এবং বিশ্বকাপের আগে কোনও পরিকল্পনা আছে কিনা?

আশরাফুল : যেহেতু আমি একজন ব্যাটসম্যান, সুতরাং আমি যদি ফিট থাকতে পারি, বিশ্বাস করি আরও চার-পাঁচ বছর খেলতে পারবো ইনশাল্লাহ। আপনি যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দিতে তাকান, তাহলে দেখবেন অনেকেই আছেন এমন। সেটা নির্ভর করবে ফিটনেসের ওপরে। গত দুই বছরের থেকে আমি নিজেকে অনেক ফিট মনে করছি সবকিছুর দিক দিয়েই। ফিটনেস এবং পারফর্মেন্স ঠিক থাকলে যতো লম্বা সময় খেলা যায়। আর বাংলাদেশ দলে তো অবশ্যই খেলতে চাই। কারণ তিনটি বিশ্বকাপ খেলেছি বাংলাদেশের হয়ে ২০০৩, ২০০৭ এবং ২০১১ সালে। ২০১৫ সালে নিষেধাজ্ঞা না থাকলে হয়তো তখন সুযোগ পেতে পারতাম। সামনে যেহেতু ২০১৯ বিশ্বকাপ রয়েছে, যদিও আমি সেটি নিয়ে চিন্তা করছি না। তারপরেও আমি মনে করি যে, আমি যদি ভালো পারফর্মেন্স করতে পারি, তাহলে আমার অভিজ্ঞতাগুলো কাউন্ট করতে পারে।

এআরবি/আইএইচএস/এমএস