এমপি পদ থেকে নিজেই পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। রোববার সকালে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশ নিয়েই বের হয়ে এসে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মাননীয় স্পিকারের কাছে আমার পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেব। এর আগে এমপি পদ বাতিলের শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য সকালে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যান আওয়ামী লীগের সাবেক এই মন্ত্রী ও তার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। আর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যান দলের দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওসার।শুনানি থেকে বেরিয়ে এসে টাঙ্গাইল-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য আরো বলেন, আমার নেতা চান না এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করি। আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করবো। এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে গেলাম। এ নিয়ে আর শুনানি করার দরকার নেই।বেরিয়ে যাওয়ার আগে লতিফ সিদ্দিকী সাংবাদিকদের বলেন, আমার ঈমানে এতটুকু দুর্বলতা নাই। যা প্রচার হয়েছে, তা মিথ্যা প্রচার হয়েছে। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হলেও ‘নেতার প্রতি’ এখনও ‘অনুগত’ বলে মন্তব্য করেন লতিফ।তিনি বলেন, আমি যেহেতু অনুগত, আমি কমিশনকে বলেছি, আজকের এই শুনানি মুলতবি করা হোক। আমি মাননীয় স্পিকার বরাবর আমার পদত্যাগপত্র পৌঁছে দেব।রোববার সকালে ইসির এই শুনানির এখতিয়ার নিয়ে লতিফ সিদ্দিকীর দায়ের করা রিট খারিজ করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এতে তার সংসদ সদস্যপদ নিয়ে শুনানিতে নির্বাচন কমিশনে যাওয়ার রায়ই চূড়ান্ত হয়। এরপর আজকের (রোববারের) পূর্ব নির্ধারিত শুনানিতে অংশ নেওয়ার জন্য ইসিতে যান তিনি। সকাল সাড়ে ১১টায় এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও আইন শাখার যুগ্ম সচিবের উপস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের সম্মলন কক্ষে বেলা ১১টায় শুনানি শুরু হয়। লতিফ পদত্যাগ করবেন জানিয়ে দিলে ১৫ মিনিটেই শুনানি শেষ হয়ে যায়।গত ১৩ জুলাই লতিফ সিদ্দিকীর সাংসদ পদ বাতিলের জন্য জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে চিঠি দেন দলটির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ওই চিঠিতে বলা হয়, ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় গঠনতন্ত্র অনুসারে লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। যেহেতু আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদও নেই, সেহেতু এই দলের মনোনয়নে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য পদেও তাকে বহাল রাখা সমীচীন হবে না। এরপর লতিফ সিদ্দিকীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদকে চিঠি দেন স্পিকার। ওই চিঠির সঙ্গে সৈয়দ আশরাফের চিঠিটিও যুক্ত করেন স্পিকার।চিঠিটি পাওয়ার পর ইসি আওয়ামী লীগ ও লতিফ সিদ্দিকীর কাছে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা চায়। দুই পক্ষই পরে ব্যাখ্যা দেয়। আওয়ামী লীগ থেকে সদস্যপদ বাতিল করার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় সংসদের নেই বলে নিজেই নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে লিখিতভাবে জানান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ ইসিকে জানান, লতিফ সিদ্দিকী এখন আর দলের কেউ নন তাই তার এমপিপদ বাতিল করা হোক। পবিত্র হজ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করায় দলীয় সদস্য পদ ও মন্ত্রিত্ব হারানোর পর এবার সংসদ সদস্য পদও হারাতে বসেছেন আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। এ ক্ষেত্রে শুনানি করেই তার ভাগ্য নির্ধারণ করতে যাচ্ছে ইসি। সূত্রগুলো জানিয়েছে, লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানোর বিষয়ে স্পিকারের চিঠির পর নড়েচড়ে বসেছে ইসি।
Advertisement
এইচএস/আরএস/এসএইচএস