বিনোদন

এই পৃথিবীতে মানুষের বেঁচে থাকাটাই সেরা সৌন্দর্য : জাহিদ হাসান

সন্ধ্যার আলো-আঁধার থেকে ক্রমশই আলো কমছিল তখন। বছরটা ফুরানোর কয়েক দিন আগে রাজধানীর এক শুটিং স্পটে প্রবেশ করেই দেখা মিললো ছোট-পর্দা ও বড়পর্দার জনপ্রিয় তারকা জাহিদ হাসানের। দেশের জনপ্রিয় ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ভিশন-এর শুভেচ্ছা দূত তিনি। সেই দায়িত্ব থেকেই ভিশন রেফ্রিজারেটরের বিজ্ঞাপনের শুটিং করছিলেন।

Advertisement

শুটিং বিরতিতে মেকাপরুমে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পরই আবার শুটিং শুরু হবে। এর আগেই অল্প বিস্তর আলাপে জমিয়ে তুললেন নন্দিত এই অভিনেতা। ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’, ‘আমার আছে জল’, ‘প্রজাপতি’, ‘হালদা’ চলচ্চিত্রের অভিনেতা জাহিদ হাসান কথা বলেন ফেলে আসা ২০১৮ ও নতুন বছর ২০১৯ নিয়ে।

নতুন সিনেমা ও নতুন দিনের আশা প্রত্যাশার কথাও জানান তিনি। তুলে ধরা হলো আলাপের চুম্বক অংশ।

জাগো নিউজ : কথা না বাড়িয়ে শুরুতেই ২০১৮ সালের আপনার প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে কিছু কথা শুনতে চাই-

Advertisement

জাহিদ হাসান : চরম সত্য একটা কথা, সময় থেমে থাকে না। সে নিজের গতিতেই চলতে থাকে। দিন মাস বছর কখন চোখের পলকে পার হয়ে যায় টেরই পাওয়া যায় না। অথচ পেছনে চোখ রাখতে গেলেই সব ঘটনাগুলোকে এই তো সেই দিনের ঘটনা বলেই মনে হয়। তাই আমি এত হিসেব করি না কখনোই।

ফেলে আসা বছরে আমার একজন কাজিন মারা গেছেন। আমার বেশ কয়েজন বন্ধুকে চির দিনের জন্য হারিয়ে ফেলেছি। হিসেব করলে এগুলোই করি। নাট্য জগত, শোবিজের বেশ কজন প্রিয় মানুষকে হারিয়েছি, এগুলো আমাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ব্যক্তিগতভাবেও আমার জন্য অনেক শোকের। তাদের ভীষণ মিস করি।

জাগো নিউজ : নতুন বছরের বিশেষ কোনো পরিকল্পনা কী করেছেন?

জাহিদ হাসান : না। বলার জন্য হয় তো অনেকে বলে, আমি সাধারণত ওইভাবে বছরের পরিকল্পনা করি না। আমি সব সময়ই চাই, আল্লাহ যেন আমাকে সুস্থ রাখেন, বাঁচিয়ে রাখেন, সব সময় যেন ভালো কিছু করতে পারি। নিচে যেন না নামি।

Advertisement

এ ছাড়া আমি সবসময় একটা দোয়া পড়ি, আমি দুই চোখ দিয়ে যত জনকে দেখেছি, আমার দুই কান দিয়ে যতো জনের কথা শুনেছি তারা বেঁচে থাকুক। কিংবা মারা গেলেও যেন তার আত্মা শান্তিতে থাকে। আমার জন্মদিনে হোক, বছরের শুরুতে হোক এই দোয়া করি সবসময়।

জাগো নিউজ : জন্মদিনের কথার সূত্র ধরেই একটা কথা মনে পড়লো। গত ৪ অক্টোবর ৫০ পেরিয়ে ৫১ বছর বয়সে পা রেখেছেন। পঞ্চাশ বছর বয়স মানুষের জীবনে আলাদা গুরুত্ববহন করে। এই বয়সে পা রাখলে জীবন নিয়ে অনেক পরিকল্পনা থাকে মানুষের.....

জাহিদ হাসান : আসলে, আমরা কত কিছু ভাবি, কতো কিছু নিয়ে চিন্তা করি সব কিছুই কিন্তু হয় না। আমি মনে করি মানুষের জন্মের যেমন আলাদা সৌন্দর্য আছে, মৃত্যুরও সৌন্দর্য আছে। আমার মনে হয়, এই পৃথিবীতে মানুষ যতদিন বাঁচে এই বেঁচে থাকাটাই আসল সৌন্দর্য। বয়স নিয়ে অতো ভাবি না।

আমি আমার জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট। এক জীবনে যা পেয়েছি তাতেই সন্তুষ্ট আমি। সবার দোয়া ও ভালোবাসার মাঝেই আমি বেঁচে থাকতে চাই। আমার জন্য একটাই দোয়া করবেন যেনো জীবনের শেষ দিনেও কাজের সঙ্গে থাকতে পারি।

জাগো নিউজ : আপনার বর্তমান ব্যস্ততা কেমন চলছে?

জাহিদ হাসান : ব্যস্ততা বলতে কাজ তো লেগেই আছে। শুটিং শুটিং আর শুটিং। এই সবের মধ্যেই আছি।

জাগো নিউজ : এরই মধ্যে কয়েকটি চলচ্চিত্রের শুটিং করেছেন। ঠিক কবে দেখা মিলবে আবার বড় পর্দায়?

জাহিদ হাসান : আমার তিনটা সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় আছে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘সাটারডে আফটারনুন’, কলকাতার একটি সিনেমায় অভিনয় করেছি নাম হলো ‘সিতারা’। কথাসাহিত্যিক আবুল বাশারের ‘ভোরের প্রসূতি’ উপন্যাস অবলম্বনে ছবিটি পরিচালনা করেছেন আশীষ রায়।

আর গোলাম সোহরাব দোদুলের ‘সাপলুডু’ সিনেমায় অভিনয় করলাম। সাপলুডু সিনেমার শুধু ডাবিং বাকি আছে। বাকি দুইটা ছবির সব কাজ শেষ। ছবিগুলোতে প্রতিটি চরিত্রেই বেশ মজা আছে। কাজ করে আনন্দ পেয়েছি। আশা করছি নতুন বছরের প্রথমদিকেই দর্শক আমাকে সিনেমা হলে দেখার সুযোগ পাবেন।

জাগো নিউজ : সবশেষে সাপলুডু সিনেমাতে যুক্ত হয়েছেন আপনি। এই সিনেমাটি নিয়ে কিছু কথা শুনতে চাই-

জাহিদ হাসান : একজন দেশপ্রেমিক নেতার চরিত্রে অভিনয় করছি। তার জীবনের নানা উত্থান-পতন তুলে ধরা হবে এখানে। মানুষের আদর, ভালোবাসা, ক্রোধ, সব কিছুই দেখানো হবে ছবিতে। পরিচালক দারুণ একটা গল্প বাছাই করেছেন। আর সংলাপগুলোও অসাধারণ। দর্শকের মনে দাগ কাটবে। ‘সাপলুডু’ বাংলাদেশের জন্য, ঢাকাই সিনেমার জন্য একটি ভালো সংযোজন হবে বলে আশা করি।

জাগো নিউজ : অভিনেতা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন, আবার নাটকও পরিচালনা করছেন। এদিকে আপনার অনেক বন্ধুরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করে প্রশংসা পাচ্ছেন। আপনি চলচ্চিত্র পরিচালনায় আসবেন না কখনো?

জাহিদ হাসান : আপাতত যা করছি এটাই মন দিয়ে করে যেতে চাই। সিনেমায় তো অভিনয় করছি। পরিচালনাটা আমি শখের বশে, নিজের তৃপ্তির জন্য করি। নিজেকে চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসেবে এখনো ভাবিনি। যখন ইচ্ছেটা হবে হয়তো নেমে পড়বো।

জাগো নিউজ : আজকাল নাটকের গল্প নিয়ে অনেক কথা হয়। আপনি কী মনে করেন সত্যি আমরা ভালো গল্পের নাটক থেকে দূরে সরে গেছি?

জাহিদ হাসান : একটা আলোচনা যখন শুরু হয় তখন কিছু না কিছু কারণ কিন্তু থাকে। এটা ঠিক আশি-নব্বই দশকে যে আমেজে, যে বিনোদন নিয়ে নাটক তৈরি হতো সেটা এখন হচ্ছে না। কিছু ভালো কাজ হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোও পরিপূর্ণ কিছু নয়। সেজন্য হুট করেই ভাইরাল হয়ে আবার দর্শকের মন থেকে মুছে যাচ্ছে। কয়েকমাস পর সেই নাটক বা টেলিছবিটির কথা কারো মনে থাকে না। কিন্তু পুরনো দিনের কাজগুলো দর্শক বারবার দেখতে চান। সেগুলোর আবেদন এখনো আছে।

গল্পে আরেকটু সময় দেয়া যেতে পারে। পরিবার, মানুষের জীবনবোধ, সুন্দর ভাবনা, সর্বজনীন বিনোদনকে প্রাধান্য দেয়া উচিত। কিছু নাটক কিন্তু হচ্ছেও। আমি নিজেও করেছি। অন্যরাও করছে। সেগুলো দর্শক বারবার দেখে।

জাগো নিউজ : সবশেষে আপনার ভক্তদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?

জাহিদ হাসান : যে যেখানে আছেন সবাই ভালো থাকুন। নতুন একটি বছর হাজির হলো, তাকে উপভোগ করুন। জীবনকে সুন্দর করে তুলুন কর্মে ও ভালোবাসায়। জাগো নিউজের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জন্যও অনেক শুভকামনা থাকল।

এমএবি/এলএ/আরআইপি