নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আগামী ৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) শপথ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী তাদের শপথ পাঠ করাবেন।
Advertisement
সোমবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে এ কথা জানান তথ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ৩ জানুয়ারি সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন। এর আগে আগামীকাল (বুধবার) গেজেট জারি হবে। সুতরাং মহাজোটের সরকার গঠন হতে যাচ্ছে, এটা অবধারিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা নতুন সরকার পাব।’
গত রোববার (৩০ ডিসেম্বর) একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৮টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, ২৮৮টি আসনে (আওয়ামী লীগ ২৫৯, জাতীয় পার্টি ২০, ওয়ার্কার্স পার্টি ৩, জাসদ ২, বিকল্পধারা ২, তরিকত ফেডারেশন ১, জেপি ১) বেসরকারিভাবে জয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। বিএনপি জোট অর্থাৎ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পেয়েছে মাত্র সাতটি (বিএনপি ৫, গণফোরাম ২) আসন। স্বতন্ত্রসহ অন্যান্যরা জয় পেয়েছেন তিনটি আসনে।
Advertisement
নতুন সরকারের আকার কেমন হবে এবং নতুন মন্ত্রিসভায় কতজন নতুন মুখ আসতে পারে- জানতে চাইলে জাসদ (একাংশ) সভাপতি ইনু বলেন, ‘এটা প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার, এ ব্যাপারে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। প্রধানমন্ত্রী সবচেয়ে যোগ্য ও কার্যকরী লোক দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করবেন। প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবিধানিক ও আইনগত নিয়ম রক্ষা করেই শপথ নেবেন সংসদ সদস্যরা এবং মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে।’
নতুন মন্ত্রিসভা কবে গঠন করা হবে- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সময়টা আমি বলতে পারব না। সংসদ সদস্যরা শপথ নেয়ার পরই মন্ত্রিসভায় যাওয়ার যোগ্যতা রাখেন। সুতরাং এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তার দফতরই নির্ধারণ করবে কবে কখন ও কাদেরকে নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন হবে।’
নতুন সরকারে কারা বিরোধী দল হবে- এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জাতীয় পার্টি যেহেতু দলগতভাবে আওয়ামী লীগের পর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে, জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসবে। শেখ হাসিনা যদি আমন্ত্রণ জানান আর তারা গ্রহণ করেন তবে তারা মন্ত্রিসভায় যাবেন, আর গ্রহণ না করলে জোটের অন্যান্য শরিকদের দিয়ে সরকার গঠন হবে।’
Advertisement
নতুন সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ কী- এমন প্রশ্নের জবাবে হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জের একটা হচ্ছে, সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়নটা রক্ষা করে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া; দুই, জঙ্গী সন্ত্রাস দমন করে যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, সেই শান্তি বজায় রেখে সাম্প্রদায়িকতা ও সামরিক শাসনের যে জঞ্জাল এখনও রয়েছে সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন তা আমি পরিষ্কার করে বলছি, দুর্নীতি ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবেন এবং সুশাসনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।’
প্রসঙ্গ: নির্বাচন
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব দিক থেকে এ নির্বাচনে গণমাধ্যম নির্বিঘ্নে কাজ করতে পেরেছে। এ কারণে আমি সন্তুষ্ট।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার মহাকর্মযজ্ঞই মহাজোট সরকারে অভাবনীয় বিজয় এনে দিয়েছে। বিএনপি প্রার্থীদের আয়েশি মনোভাব ও মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্যই তাদের ভরাডুবির কারণ, আরও অনেক কারণ রয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও, হত্যা, ধ্বংসের অপরাজনীতি অনুসরণের ফলেও তাদের এ ভরাডুবি।’
‘এ নির্বাচনটা সবচেয়ে কম সহিংসতাপূর্ণ নির্বাচন, সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং এ নির্বাচনটা সবচেয়ে বেশি উৎসব মুখর নির্বাচন হয়েছে।’
বিএনপির পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় হয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এজেন্টরা প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে অভিযোগের দরখাস্ত দিয়ে চলে যেতে পারতেন। আমার জানা মতে, বিএনপির এজেন্টরা কোনো লিখিত অভিযোগপত্র দেননি। এ কারণে অভিযোগটা প্রত্যাখ্যান করছি। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এজেন্ট দিতে পারেননি।’
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘১৯৭০ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে দেশ আমরা দেখেছি, সেখানে মুসলিম লীগের মাঠপর্যায়ের কর্মীরা পক্ষত্যাগ করে এবং জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের কর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে নৌকার বিজয় ও বিপ্লব এনে দেয়। ১৯৭০ এর নির্বাচনে যেভাবে মুসলিম লীগের যুগের অবসান ঘটে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেভাবে ১৯৭৫ সাল পরবর্তী সামরিক শাসন মদদপুষ্ট সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ধারক ও বাহক বিএনপি-জামায়াত যুগের অবসানের সূচনা ঘটাল বা বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির বিদায় ঘণ্টা বাজাল।’
‘বিএনপি-জামায়াত যখনই পরাজিত হয় তারা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৯৬ সালে ও ২০০৮ সালেও তারা একই দাবি করেছে। এটা তাদের রাজনৈতিক বদ অভ্যাস। এই বদ অভ্যাসের সূত্র ধরে তারা আগামীতে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করবে’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
দেশবাসীকে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাসদ সভাপতি বলেন, ‘বিএনপি পুনঃনির্বাচনের দাবির মধ্য দিয়ে একটা ষড়যন্ত্রের বীজ বপন করল, যা অশনি সংকেত হিসেবে দেখা দিচ্ছে।’
বিএনপি রাজনৈতিক বদ অভ্যাস পরিহার করে গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে আসবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাসানুল হক ইনু।
বিএসআরএফের সভাপতি শ্যামল সরকারের সভাপতিত্বে সংলাপে ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মহসীন আশরাফ উপস্থিত ছিলেন।
আরএমএম/এনএফ/এমএআর/এমকেএইচ