পুরনোকে পেছনে ফেলে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে এলো নতুন বছর। ২০১৯ সালে নতুন প্রত্যাশায় দেশের অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যাংকাররা। বলছেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য কাটিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, অগ্রগতি, দারিদ্র্য বিমোচন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ করে নতুন বছরে এ খাতে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। নতুন বছর ও নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী- জানতে চাইলে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নতুন বছর ও সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হবে, অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত যেসব চ্যালেঞ্জগুলো আছে সেগুলো মোকাবেলায় সরকার দৃঢ় প্রত্যয় দেখাবে ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নেবে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যাংক খাতের সমস্যা মোকাবেলা করে সুশাসন ফেরানো।’ অর্থনীতির অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে- রফতানির বৈচিত্রকরণ, দারিদ্র্যের হার কমানো, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো; এসব ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করা। যেমন- অবকাঠামো সমস্যা, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সমস্যা সমাধান করা। এছাড়া কর্মসংস্থান বাড়ানো। বিশেষ করে উৎপাদনশীল খাতের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। নতুন সরকার নীতির পরিবর্তন করে অর্থনীতির উন্নয়নে যেসব সমস্যা রয়েছে তা দূরীকরণে সচেষ্ট হবে- এটাই আমার প্রত্যাশা। অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, নতুন বছর ও নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হবে, গত ১০ বছরে এ খাতকে যে খারাপ অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে এটি ঠিক করা। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ অনেক বেড়ে গেছে। এটি কমানোর উদ্যোগ নেয়া।’ ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের শাসন ব্যবস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে’ উল্লেখ করে সাবেক এ ডেপুটি গভর্নর বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এখন স্বায়ত্ত শাসনের স্বাধীনতা দরকার। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, এ ক্ষেত্রে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। একই সঙ্গে সরকারি ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা হবে।’ ‘বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলাই এখন সার্বিক অর্থনীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন’ উল্লেখ করে প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর একটি পলিসি ছিল যে, বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের আয় বৈষম্য সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে। এটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমি চাইবো, সরকার শুরুতেই একটি ঘোষণা দিয়ে এ আয় বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নেবে।’ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘সরকারের প্রতি জনগণ যে আস্থা রেখেছে তারই ফল এই বড় বিজয়। তাই বর্তমান সরকারের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেড়েছে। এখন জনগণের প্রত্যাশা পূরণই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ।’তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, গ্রাম ও শহরের উন্নয়ন এবং এগুলোর সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টিতে সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা কার্যকর করবে। কোনো কালক্ষেপণ না করেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।’ ব্যবসায়ী এই নেতা আরও বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশ-বিদেশের পরীক্ষিত নেত্রী। দেশের ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে যাওয়া এবং অপ্রতিরুদ্ধ অর্থনীতির গতিকে উনিই পারবেন অব্যাহত রাখতে। তাই নতুন বছরে নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা হবে, বঙ্গবন্ধুর দেখা দেশ ও মানুষের কল্যাণে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নতুন বছরে আমাদের ব্যাংক খাত আরও ভালো করবে, এগিয়ে যাবে, এ খাতে সুশাসন ফিরে আসবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, বর্তমানে খেলাপি অনেক বেড়ে গেছে। এটি নিয়ন্ত্রণে নতুন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, খেলাপিদের বিরুদ্ধে বিশেষ করে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদে শাস্তির আওতায় আনা। একই সঙ্গে ব্যাংক খাতের সুশাসন ফেরাতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও সহয়তা দেয়া। ‘নতুন বছরের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আমানত ও মূলধন সংগ্রহ’ উল্লেখ করে ব্যাংক নির্বাহীদের এই নেতা বলেন, ‘বর্তমান উন্নয়ন অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে ব্যাংক খাতকে বড় সাপোর্ট দিতে হবে। অর্থ জোগাতে ব্যাংকগুলোকে আমানত ও মূলধন সংগ্রহের ওপর জোর দিতে হবে।’ প্রসঙ্গত, নানা অনিয়ম-দুর্নীতি, ঋণ কেলেঙ্কারি আর জাল-জালিয়াতির কারণে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শেষের দুই মেয়াদে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। তাই আগামীতে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের উন্নয়ন, খেলাপি ঋণ কমানোসহ ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশকালে জানিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসআই/এমএআর/জেএইচ
Advertisement