দেশজুড়ে

বরিশালে জামানত হারালেন সোহেল রানাসহ ৩১ প্রার্থী

বরিশাল জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ৬টিতেই বড় ব্যবধানে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা সবকটি আসনে হেরেছেন। শুধু তাই নয়, ৬টি আসনের একটি আসন বাদে মহাজোট প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সবাই জামানত হারিয়েছেন।

Advertisement

আইন অনুযায়ী জামানতের টাকা ফেরত পেতে হলে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট পেতে হয়। তবে ৬টি আসনের একটি আসন বাদে মহাজোট প্রার্থীদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীই তা পাননি। সুতরাং ৬টি আসনের ৩৯ প্রার্থীর মধ্যে ৩১ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

রোববার রাতে বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফল থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ২ লাখ ৫ হাজার ৫০২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এম জহিরউদ্দিন স্বপন পেয়েছেন ১ হাজার ৩০৫ ভোট, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাসেল সরদার ৯৫৪ ভোট এবং গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. বাদশা মিয়া পেয়েছেন ৯৭৭ ভোট। এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ১১ হাজার ৫০৭। বাতিল ভোটের সংখ্যা ২ হাজার ৮২২টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৭৩৮টি। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাসানাত ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

Advertisement

বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের মো. শাহে আলম ২ লাখ ১২ হাজার ৩৪৪ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু পেয়েছেন ১১ হাজার ১৩৭ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী চিত্রনায়ক মো. মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা ১ হাজার ৪৭১ ভোট, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেছার উদ্দিন ৮ হাজার ১৪৫ ভোট, হাতুড়ি প্রতীকে ওয়ার্কার্স পার্টির জহিরুল ইসলাম ৯৬৯ ভোট, আম প্রতীকে এনপিপির সাহেব আলী ১ হাজার ১৪০ ভোট এবং ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিচুজ্জামান পেয়েছেন ৮৪৪ ভোট।

এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৯১টি। বাতিল ভোটের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪১টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৫০টি। এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহে আলম ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে মহাজোটের অন্যতম শরিক দল জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ৫৪ হাজার ৭৭৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন পেয়েছেন ৪৭ হাজার ২৮৭ ভোট, নৌকা প্রতীকে ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান এমপি টিপু সুলতান ১৯ হাজার ২১৯ ভোট, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. সিরাজুল ইসলাম ১৩ হাজার ১৪৮ ভোট, ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান ১২ হাজার ৯৫৫ ভোট এবং কুলা প্রতীকে বিকল্পধারা বাংলাদেশের মো. এনায়েত কবির পেয়েছেন ১৮৪ ভোট।

এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০টি। বাতিল ভোটের সংখ্যা ৩ হাজার২১৯টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৭১টি। এ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) গোলাম কিবরিয়া টিপু, বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ও ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান এমপি টিপু সুলতান ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

Advertisement

বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পংকজ নাথ ২ লাখ ৪১ হাজার ৩ ভোট পেয়ে টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঐক্যফ্রন্টের জেএম নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর ধানের শীষ নিয়ে ৯ হাজার ২৮২ ভোট, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সৈয়দ মো. নুরুল কারিম ৭ হাজার ৪৬১ ভোট, মিনার প্রতীকে ইসলামী ঐক্যজোটের সাইফুল্লাহ ১ হাজার ৩৭৮ ভোট, দেয়াল ঘড়ি প্রতীকে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের রুহুল আমীন ১ হাজার ৮৯ ভোট, টেলিভিশন প্রতীকে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) এনামুল হক ১ হাজার ১১১ ভোট এবং বটগাছ প্রতীকে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাহবুবুল আলম পেয়েছেন ৪১১ ভোট।

এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ৩৯টি। বাতিল ভোটের সংখ্যা ২ হাজার ৩০৪টি । বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৪৫টি। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পংকজ নাথ ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

বরিশাল-৫ (সদর ও মহানগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীম ২ লাখ ১৫ হাজার ৮০ ভোট পেয়ে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার পেয়েছেন ৩১ হাজার ৩৬২ ভোট, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম ২৭ হাজার ৬২ ভোট, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির (জাপা) অ্যাডভোকেট একেএম মুর্তজা আবেদীন ৭১২ ভোট, কাঁঠাল প্রতীকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (মতিন) এইচএম মাসুম বিল্লাহ ৮৯ ভোট, কোদাল প্রতীকে বাংলাদেশের বিল্পবী ওয়ার্কার্স পার্টির অধ্যাপক আবদুস সাত্তার ৭২৭ ভোট এবং আম প্রতীকে এনপিপির শামীমা নাসরিন পেয়েছেন ৪১২ ভোট।

এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৭৮ হাজার ৩২৩টি। বাতিল ভোটের সংখ্যা ২ হাজার ৮৭৯টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ২ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৪টি। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুক শামীম ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) নাসরিন জাহান রত্না লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৩৯৮ ভোট পেয়ে টানা দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মো. নুরুল ইসলাম আল-আমিন হাতপাখা প্রতীক নিয়ে ১৪ হাজার ৮৪৫ ভোট পেয়েছেন। ওই আসনে ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন খান পেয়েছেন ১৩ হাজার ৬৫৮ ভোট, বাইসাইকেল প্রতীকে জাতীয় পার্টির-জেপি খন্দকার মাহতাব উদ্দিন ৩৫০ ভোট, মশাল প্রতীকে জাসদ-ইনু মো. মোহসীন ২০৩৪ ভোট, তারা প্রতীকে জেএসডির একেএম নুরুল ইসলাম ২৮ ভোট, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আলী তালুকদার ফারুক এবং ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ওসমান হোসেন মনির পেয়েছেন ১ হাজার ১৭৮ ভোট।

এ আসনে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৩৮টি। বাতিল ভোটের সংখ্যা ১ হাজার ৫১৪টি। বৈধ ভোটের সংখ্যা ১ লাখ ৯১ হাজার ৮২৪টি। এ আসনে জাতীয় পার্টির (জাপা) নাসরিন জাহান রত্না আমিন ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, আইন অনুযায়ী জামানতের টাকা ফেরত পেতে হলে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ পেতে হয়। তবে ৬টি আসনের ৩৯ প্রার্থীর মধ্যে ৩১ প্রার্থী তা পাননি। সুতরাং ৬টি আসনের ৩৯ প্রার্থীর মধ্যে ৩১ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে।

সাইফ আমীন/আরএআর/এমএস