বিশেষ প্রতিবেদন

তারুণ্যের আস্থার প্রতিদান দিতে চাই

প্রযুক্তিকে সাধারণের নাগালের মধ্যে আনার পাশাপাশি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে তথ্যপ্রযুক্তির সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রত্যয়ী মন্ত্রিসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য জুনায়েদ আহমেদ পলক, যিনি নিজের মন্ত্রিত্বকে দেখছেন তারুণ্যের প্রতি আস্থা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ হিসেবে।

Advertisement

জাগো নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কর্মপরিকল্পনার নানা দিক তুলে ধরার পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে নেয়া এ চ্যালেঞ্জের কথা জানান তিনি।

‘আমাকে যে কোনো মূল্যে সফল হতে হবে। বয়স কম হলেও নেত্রী আমাকে অনেক বড় দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি ব্যর্থ হলে ভবিষ্যতে আর কেউ তরুণদের সামনে আনবেন না, বড় কোনো দায়িত্ব দেবেন না। তাই সফল আমাকে হতেই হবে’- বলেন ৩৮ বছর বয়সী এই প্রতিমন্ত্রী।

নবম সংসদের সবচেয়ে কম বয়সী (২৮ বছর) এই সাংসদের ওপর আস্থা রেখে নতুন সরকারে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে তাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যতম নির্বাচনী অঙ্গীকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দায়িত্বও পড়ে তার কাঁধে।

Advertisement

ডিজিটাল বাংলাদেশকে আইকন হিসেবে গড়ে তুলতে ১৯৯৯ সালে পাস হওয়া গাজীপুরের কালিয়াকৈরের হাইটেক পার্ক প্রকল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করতে উদ্যোগী হন তরুণ এই প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু প্রকল্পের নির্মাতা নিয়োগসহ পার্কের কাজ এগিয়ে নিতে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। পলকের একান্ত প্রচেষ্টায় সেই লড়াইয়ে জেতে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ২৮ জানুয়ারি সেই স্থগিতাদেশ স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে পলক বলেন, ‘আমরা প্রকল্প শেষ করার সময়সীমা এখনই বলছি না। তবে ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করে দিয়েছি। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে।’

তিনি বলেন, ‘হাইটেক পার্ক ছিল আমাদের স্বপ্নের একটা প্রকল্প। শেখ হাসিনা তার প্রথম আমলে এই প্রকল্পের কাজ করতে চেয়েছিলেন। মাঝে অন্য সরকার এসে প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে যায়নি। এরপর বাধা হয়ে দাঁড়ায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা। এখন সেই নিষেধাজ্ঞাও খারিজ হলো।’

‘এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তথ্যপ্রযুক্তিতে দেশ অনেক দূর এগিয়ে যাবে’ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশ হচ্ছে তৃতীয় বৃহত্তম ফ্রি-ল্যান্সারের দেশ। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এটি আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি বিকাশের মডেল হিসেবে বিবেচিত হবে।’

Advertisement

হাইটেক পার্ক বাস্তবায়নে আইনি বাধা কাটিয়ে ওঠার পর উজ্জীবিত প্রতিমন্ত্রীর আশা, ‘সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক (জনতা টাওয়ার) স্থাপনের কাজও খুব দ্রুত শুরু করা যাবে।’

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এই পার্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যেসব আইনি ঝামেলা রয়েছে অচিরেই সেগুলোরও সুরাহা হবে বলে মনে করেন তিনি।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মের সহযোগিতা প্রত্যাশা করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় একটি আইটি ভিলেজ বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সরকারের পরিত্যক্ত ভবন ও জমিতে সফটওয়্যার টেকনোলজি কেন্দ্র করার কথাও ভাবা হচ্ছে।

একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৬৪টি জেলার এক লাখ গ্রামীণ নারীকে উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান জুনায়েদ আহমেদ পলক। বলেন, ‘দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে (ফ্রিল্যান্সার টু এন্ট্রাপ্রেনর) তাদের জন্য খুব কম সুদে ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করা হবে।’

মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) পক্ষ থেকে যৌথভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে একটি সনদ দেয়া হবে এবং তার ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা হবে। লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং প্রকল্পের মাধ্যমে ৫০ হাজার ফ্রি-ল্যান্সার তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

পলক বলেন, এরই মধ্যে বাংলাদেশে ১৫ হাজার ফ্রি-ল্যান্সার তৈরি হয়েছে এবং আগামীতে আরও দুই লাখ ফ্রি-ল্যান্সার তৈরি হবে। আগামী পাঁচ বছরে ২৫ হাজার মানুষ যাতে ‘ইনফরমেশন টেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ার্স এক্সামিনেশন’ সনদ পায় তার ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে শুধু নারীদের জন্য ‘ঘরে বসে বড়লোক’ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এখানে ২০ জন করে নারীকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে এবং তাদের মধ্য থেকে যোগ্যদের উদ্যোক্তা তৈরিতে সহযোগিতা করা হবে।

মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কার্যক্রম যেমন- ই-গভর্ন্যান্স, ডিজিটাল স্বাক্ষর, লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং, ই-টেন্ডার, ই-তথ্য সেবা, বাংলা গভনেট প্রকল্প, ইনফো সরকার প্রকল্প, সাসেক প্রকল্প, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৩০ হাজার দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ইত্যাদি কার্যক্রম দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে নিতে চান তরুণ এই রাজনীতিবিদ।

প্রসঙ্গত, গতকাল অনুষ্ঠিত হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে নৌকা প্রতীকে জুনাইদ আহমেদ পলক পান দুই লাখ ৩০ হাজার ২৯৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে দাউদ রহমান পান আট হাজার ৫৯৪ ভোট।

রেজাউল করিম রেজা/এমএআর/জেআইএম