একাদশ জাতীয় সংসদে বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা রেকর্ডসংখ্যক আসনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছে এটা নিশ্চিত। কিন্তু এখন সর্বত্র আলোচনা চলছে সংসদে বিরোধী দল হচ্ছে কোন দল? কেই বা হচ্ছেন প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা।
Advertisement
যেহেতু জাতীয় পার্টি মহাজোটের অংশ, তাই আসন কম পেলেও ৭ জন সংসদ সদস্য নিয়ে বিএনপি বিরোধী দলের আসনে বসবে নাকি একই সঙ্গে সরকারে এবং বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টিই আগের মতোই হচ্ছে সংসদে প্রধান বিরোধী দল। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হলে বিরোধীদলীয় নেতাই বা কে হচ্ছেন?
পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ? নাকি বর্তমান বিরোধীদলীয় নেতা পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ?
২০১৪ সালে দশক সংসদ নির্বাচনের পরে এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। এরশাদ প্রথমে স্ত্রী রওশনকে বিরোধী দলনেতা হওয়ার জন্য মত দেন। কিন্তু পরে আবার সেই সিদ্ধান্ত বদলে নিজেই বিরোধী দলনেতা হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ততদিনে রওশন এরশাদ বেশ শক্ত অবস্থানে চলে যান।
Advertisement
আবার জাতীয় পার্টির এমপিরা রওশনের পক্ষে একাট্টা থাকায় এরশাদের সেই আশা অপূর্ণই থেকে যায়। সেই সময়ে রওশনের পক্ষে একাট্টা থাকার অন্যতম কারণ ছিল- ওই নির্বাচন এরশাদ বর্জন করতে চেয়েছিলেন, আর রওশনের নেতৃত্বে জাপার নেতারা নির্বাচনে অংশ নেন। মাঝামাঝি সময়ে এসেও একবার বিরোধী দলনেতার চেয়ারে বসতে চেয়েছিলেন এরশাদ। কিন্তু সফল হননি।
এ নিয়ে তখন এরশাদ-রওশন দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছিল। সংসদ চলাকালীন এরশাদ বসতেন জাতীয় পার্টির সংসদীয় কার্যালয়ে, আর রওশন বসতেন বিরোধী দলনেতার কার্যালয়ে। একতলা ওপর নিচে অবস্থান হলেও তাদের মধ্যে দেখা-কথা বন্ধ ছিল। এক পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী এরশাদকে তার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেন। এবারের প্রেক্ষাপট অনেকটা ভিন্ন। এবার এরশাদ-রওশনের মধ্যে খুব একটা মতপার্থক্য নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমাদের নির্বাচনী ঐক্য হয়েছিল। কয়েকটি আসনে তারা আমাদের ভোট দিয়েছে, কয়েকটিতে আমরা তাদের ভোট দিয়েছি। তবে হ্যাঁ, এখন আমরা আলোচনা করতে পারি, সরকারে অংশ নেব, নাকি বিরোধী দলে থাকব। আমরা যদি চাই দুটি অপশনই খোলা আছে। জাপার বিরোধী দলের আসনে বসার ক্ষেত্রে কোনো আইনি জটিলতাও নেই বলে জানান তিনি।
এখন প্রশ্ন জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হলে প্রধান বিরোধী দলনেতা কে হচ্ছেন? এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির সিনিয়র সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা রওশন এরশাদকেই বিরোধী দলনেতা হিসেবে চান। রওশন এরশাদকে চাওয়ার পক্ষে তাদের যুক্তি হচ্ছে এরশাদের শরীরটা এখন ভালো যাচ্ছে না। তিনি নির্বাচনী প্রচারণায়ও অংশ নিতে পারেননি।
Advertisement
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বচানের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, ২৯৯ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছে ২৫৭টি। ২২টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে জাতীয় পার্টি। বিএনপি ৫টি আসন ও অন্যান্যরা ১৩টি আসনে জয় লাভ করেছে। সে হিসাবে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল হওয়ার মতো আসন পেয়েছে জাতীয় পার্টি।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৩৪টি, জাতীয় পার্টি ৩৪টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ৬টি, জাসদ ৫টি, জাপা (মঞ্জু) ২টি, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ২টি, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী ফ্রন্ট (বিএনএফ) ১টি ও স্বতন্ত্র ১৫টি আসনে বিজয়ী হয়।
এমইউএইচ/এনডিএস/এমএস