ভ্রমণ

বিদায় বেলায় স্মৃতির পাতায়

সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যায়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) চার বছরের স্নাতক কোর্সের ৮ সেমিস্টারের শেষ সেমিস্টারে ফিশারিজ ৪৬তম ব্যাচ। শেষ সময়ে তাই সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণের আয়োজন করা হয়। বিদায় বেলায় কিছু আনন্দ জমা থাক স্মৃতির পাতায়। ১০৮ জন ক্লাসমেটের একসাথে স্মৃতি আওড়ানোর এটাই শেষ সুযোগ।

Advertisement

দেখতে দেখতে সেই মুহূর্তটি সামনে চলে আসে। ভ্রমণ নিয়ে সেমিস্টার শুরু থেকেই চলছিল জল্পনা-কল্পনা। ব্যাচের নাম ঠিক করা হয় ‘ইনভিকটাস ফোরটিসিক্স’ অর্থাৎ ‘অপরাজেয় ৪৬’। বানানো হয় একই রঙের টি-শার্ট। যার পেছনে অংকে ৪৬ লিখে তার ভেতর ১০৮ জনের নাম।

১৬ নভেম্বর ছিল সেই ভ্রমণযাত্রার কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত। সবাই সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় হ্যালিপ্যাডে জড়ো হই। তারপর সারারাত জার্নি করে পৌঁছাই চট্টগ্রাম। সেখান থেকে আমাদের সপ্তাহব্যাপী ভ্রমণ। আমরা চট্টগ্রাম (সামুদ্রিক মৎস্য জরিপ ও ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাব, মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা, আর-ভি মীন সন্ধানী জাহাজ পরিদর্শন), কক্সবাজার (সি বীচ, ফিস ল্যান্ডিং সেন্টার, শুঁটকি পল্লি, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট), সেন্টমার্টিন (সেন্টমার্টিনে রাত যাপন, ছেঁড়াদ্বীপ ভ্রমণ, পলিথিন ও পরিবেশ দূষণীয় পদার্থ আহরণ), বান্দরবান (স্বর্ণ মন্দির, নীলাচল), রাঙ্গামাটি (কাপ্তাই লেক, ঝুলন্ত ব্রিজ, সুবলং ঝরনা) ভ্রমণ করি।

> আরও পড়ুন- উপরে নীল আকাশ নিচে নীল সমুদ্র

Advertisement

তিনটি বাসে ট্যুর গাইড শিক্ষক হিসেবে ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. কামাল, ড. মো. সামছুল আলম, ড. মো. জসিম উদ্দিন, ড. মো. শাহেদ রেজা, সহযোগী অধ্যাপক ড. তানভীর রহমান, প্রভাষক কামরুন নাহার আজাদ। যখন গ্রুপে গাইড শিক্ষকদের নাম ঘোষণা করা হলো, তখন কারো মুখে কোন কথা বা অনিশ্চয়তার ছাপ ছিল না। আমাদের কোন দাবি-দাওয়া বা কথা বলার কিছু ছিল না।

ভ্রমণ ছিল বিচিত্রতায় ভরা। এ থেকে একাডেমিক প্রাকটিক্যাল জ্ঞান আহরণ, আনন্দ-সৌন্দর্য উপভোগ যেমন করেছি; তেমনই ট্যুরে গিয়েও আমরা সামাজিক দায়বদ্ধতাকে ভুলে যাইনি। সেন্টমার্টিনে রাতে বার-বি-কিউ পার্টি শেষে ট্যুর গাইড ও ইলিশের জীবন রহস্য উন্মোচনকারী প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. সামছুল আলম স্যার ঘোষণা দিলেন, আমরা সকালে সবাই ছেঁড়াদ্বীপ যাবো এবং ভ্রমণের পাশাপাশি ওই দ্বীপের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর পলিথিন ও এ জাতীয় ক্ষতিকর পদার্থ আহরণ করে নিয়ে আসবো।

ঘোষণা অনুযায়ী আমরা কয়েকটি বড় বস্তা সাথে নিয়ে লঞ্চে রওনা হলাম। ছেঁড়াদ্বীপ গিয়ে গাইড শিক্ষকদের নেতৃত্বে দলে দলে বিভক্ত হয়ে দ্বীপের ক্ষতিকর পদার্থগুলো বস্তায় পুড়লাম। ঘোরা শেষে বস্তাগুলো লঞ্চে করে নিয়ে এলাম। সেন্টমার্টিন থেকে ফেরার সময় সৌভাগ্য হলো টেকনাফে ট্যুরের দলনেতা অধ্যাপক ড. মো. কামাল স্যারের বাসায় যাত্রাবিরতির। তার আতিথেয়তা ও বাসার সৌন্দর্য দেখে সবাই মুগ্ধ হয়েছিলাম।

> আরও পড়ুন- শীতে পাহাড় ও সমুদ্রের হাতছানি

Advertisement

আমরা প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়েছি প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দর্শনে। সাগরের বিশালতা ও পাহাড়ের দৃঢ়তাকে সাথে নিয়ে অনেক ভালো লাগার স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসি ক্যাম্পাসে। এর কয়েকদিন পরেই আয়োজন করা হয় ট্যুর পরবর্তী পুনর্মিলনীর। সেখানে আমাদের পরিবেশনায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি স্মৃতিচারণ ও বুফে গ্রান্ড ডিনারের আয়োজন করেন শিক্ষকরা।

এসময় অনুষদের ডিনসহ চার বিভাগের প্রধান ও শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেন। দেখতে দেখতে স্নাতক জীবনের শেষবেলার কাঙ্ক্ষিত ট্যুরটিও শেষ হয়ে যায়। রেখে যায় কিছু স্মৃতি। কিছুদিন পর সবাই যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে, তখন দেখা হলে পরিচয় হবে আমরা ‘ছেচল্লিশ’।

মো. শাহীন সরদার/এসইউ/পিআর