দেশের ১১তম সাধারণ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ব্যাংককে ভারতীয় শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তাতে সাড়া মেলেনি।
Advertisement
এ নিয়ে কার্যত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠে উঠে এসেছে হতাশার সুর।
দলটির চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মূলত ফখরুলই। এছাড়া খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান দীর্ঘদিন ধরে লন্ডনে। দুর্নীতির অভিযোগে গত ফেব্রুয়ারিতে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
তখন থেকেই দলের মুখপাত্রের ভূমিকায় ফখরুল। গত দুই মাসে নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হিসেবে অন্তত দুই শতাধিক বক্তৃতা করেছেন তিনি। বাংলাদেশের প্রধান এই বিরোধী দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বিশেষ এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেন।
Advertisement
আরও পড়ুন : আয়রন লেডি শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন : টাইম
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে তিনি বলেন, এখানে নির্বাচনী কোনো প্রচারণা নেই, সন্ত্রাসের রাজত্ব চলছে; এটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। ফখরুলই একমাত্র ব্যক্তি; যিনি জিয়া পরিবারের অনুপস্থিতিতে দলটি পরিচালনা করে আসছেন। নির্বাচনে বিএনপি যদি জয় লাভ করে তাহলে দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন তিনি।
ভারতীয় এই দৈনিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম অভিযোগটি করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কীভাবে পুলিশকে ব্যবহার করছে; সেই বিষয়ে। পুলিশকে ক্ষমতাসীন দলের ব্যবহারের ব্যাপারে তিনি বলেন, ভয়াবহ অবস্থা (এটা বিপজ্জনক পরিস্থিতি)। একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর সময় তার স্ত্রী ও ৩২ বছর বয়সী স্কুলশিক্ষিকা মেয়ে কীভাবে পুলিশি হয়রানির শিকার হয়েছেন সেটিও তুলে ধরেন।
ফখরুল বলেন, ‘আমি কল্পনাও করতে পারিনি, এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।’ ১৯ শতকের তৈরি পুরান ঢাকার একটি কারাগারে বন্দি খালেদা জিয়া। প্রতি ১৫ দিন অন্তর একবার করে পরিবারের সদস্য ও দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা তার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি পান। গত ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মোট তিনবার খালেদার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন ফখরুল।
Advertisement
আরও পড়ুন : হাসিনার সম্ভাবনাই দেখছে সিএনএন
তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেয়ার আগে তার অনুমতি নিয়েছি। তিনি দুর্নীতির দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত তারেকের সঙ্গে কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেছেন। এক দশক ধরে লন্ডনে বসবাস করছেন তারেক রহমান। দলটির চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়ার আগে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার স্কাইপিতে নিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত এই চেয়ারপারসন।
ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছি, আমরা উদার গণতান্ত্রিক দল। আমরা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য উন্মুখ হয়ে আছি। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি।’ তিনি বলেন, বিএনপি ১৯৯১ সালে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবিত করেছে; যখন স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনের অবসান ঘটে।
বিএনপির এই মহাসচিব বলেন, ‘আমরা দেশের বাইরে ভারতীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করেছি। আমরা ভারতীয় হাইকমিশনারের সাক্ষাৎ চেয়েছিলাম এবং তিনবার সাক্ষাৎ করেছি। কিন্তু এতে মনে হয়েছে, ভারতীয় কূটনীতিকরা বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহী নন। সম্ভবত বিএনপি নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারতীয় কূটনীতিকরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি চান না।
আরও পড়ুন : বিশ্বের চোখ বাংলাদেশে
‘আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই। এবং আমাদের নিয়ে ভারতের যে ধারণা আছে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ আমরা সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদে বিশ্বাস করি না। এটা পুরোপুরি ভ্রান্ত ধারণা যে, আমরা ভারতবিরোধী। এটা আওয়ামী লীগের অপপ্রচারের অংশ।’
তবে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, বিএনপি তাদের ক্ষমতার মেয়াদে করা কর্মের প্রায়শ্চিত্ত করছে। কিন্তু ফখরুল বলেন, আমরা ভারতের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। এমনকি ২০১২ সালে নয়াদিল্লিতে বেগম খালেদা জিয়ার সফরের সময়ও। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর আমরা ভেবেছিলাম পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। মোদির সঙ্গে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক করেছিলেন খালেদা জিয়া। কিন্তু তারপর আর কোনো কিছুর পরিবর্তন ঘটেনি। কোনো ফলোআপও নেই। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা হতাশ হয়েছিলাম। চলতি বছরের আগস্টে আমরা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাদভের সঙ্গে ব্যাংককে বৈঠকের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ভারতীয় পক্ষ এ বৈঠকের ব্যাপারে কোনো সাড়া দেয়নি।
এসআইএস/এমএস