বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ বলেছেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে সাধারণ ভোটার, ধানের শীষের সমর্থক ও নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আওয়ামী দুঃশাসনবিরোধী বার্তা দিয়েছেন- আগামীকাল আপনাদের সুযোগ আসবে স্বৈরশাসকদের হাত থেকে মুক্তিলাভের। দেশকে মুক্ত করার। সকল হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে দলে দলে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। আপনাদের এক-একটি ভোট নিশ্চিত করতে পারে জনগণের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। ফলাফল না নিয়ে আপনারা ভোটকেন্দ্র ত্যাগ করবেন না। আপনারা ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা করবেন। আজ বিকেল থেকেই পালাক্রমে ভোটকেন্দ্র পাহারা দেবেন।’
Advertisement
শনিবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, ‘ফজরের নামাজ পড়েই ভোটের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য আপনাদেরকে অনুরোধ করছি। ভোট শুরুর আগে ব্যালটবাক্স পরীক্ষা করবেন। ভোট দিয়ে কেন্দ্রের আশপাশে থাকবেন। আপনারা শুধু সাধারণ ভোটারই নন, ভোটারদের অতন্দ্র প্রহরী। ভোটগ্রহণ শেষে ভোট গণনা করে কে কত ভোট পেল তা নিশ্চিত না হয়ে সাদা কাগজে সই করবেন না। কোনো অবস্থাতেই প্রিজাইডিং অফিসারের সই ছাড়া সই করবেন না। ফলাফল নিয়ে প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে রিটার্নিং অফিসার বা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে যাবেন।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকালের নির্বাচন নিয়ে অবৈধ শাসকগোষ্ঠী নানা কায়দা-কানুন ও পরিকল্পনা করছে। তারা ময়ূরের সিংহাসন থেকে ছিটকে পড়ার ভয়ে এই কয়েকদিন রক্তাক্ত হামলায় সারাদেশকে আতঙ্কের জনপদে পরিণত করেছে। বিএনপির মিছিল ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালানোসহ সহিংস আক্রমণে তাদের রক্ত ঝরাচ্ছে। শারীরিকভাবে ধানের শীষের প্রার্থীদের আক্রমণ করাসহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আক্রমণ করে রক্তাক্ত করা হয়েছে। আগের রাতে ব্যালটে নৌকা মার্কায় সিল মেরে রাখার পরিকল্পনাসহ নানামুখী নীলনকশা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলছে।’
Advertisement
রিজভী বলেন, ‘গতকাল থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ থাকলেও আওয়ামী ক্যাডাররা বিভিন্ন নির্বাচনী আসনে মোটরসাইকেল মহড়া দিচ্ছে। আর চলছে বিরামহীন পুলিশি হয়রানি, মামলা দায়ের ও গ্রেফতার। তবুও ভোটার, ধানের শীষের সমর্থকদের দলের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাবো- আগামীকাল আলো আসবেই।’
তিনি বলেন, ‘বেগম জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তাকেই ভয় পেয়েছে আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী। সেই জন্যই নির্বাচনী মাঠে মোকাবেলা করার সাহস না পেয়ে তাকে বন্দী করা হয়েছে। বন্দী করার পর তিনি জনগণের কাছে ‘গণতন্ত্রের মা’ হিসেবে সমাদৃত হচ্ছেন। আর এতেই সরকার আরও হিংস্র হয়ে উঠে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর চালাচ্ছে ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা।’
রিজভী বলেন, ‘২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, হামলা ও গ্রেফতারের হিড়িকের ধারাবাহিকতায় গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এর মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়েছে চরম মাত্রায়। তফসিল ঘোষণার পর মামলা-হামলা-গ্রেফতারের স্পিড লিমিট নাই। গত দশ বছর ইতিহাস লিপিবদ্ধ করলে দেখা যাবে শুধু আতঙ্ক, ভয়, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, সহিংসতা, রক্তপাত আর বিরোধী দলসহ ভিন্নমত ও বিশ্বাসের ব্যক্তিদের দমনের দশক। গণতন্ত্রের অস্থিমজ্জাকে নিংড়িয়ে নিয়ে গোরস্থানে পাঠানের দশক। বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ফাঁসির মঞ্চে তোলার দশক।’
তিনি বলেন, গত ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর থেকে গতকাল ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ হাজার ৫০৬ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গায়েবি ও মিথ্যা মামলার সংখ্যা ৯৫৭টি। শুধু গতকালই বিভিন্ন জেলায় বানোয়াট মামলা দায়ের হয়েছে ৫৯টি, গ্রেফতার করা হয়েছে ১১৭৭ জনকে।
Advertisement
কেএইচ/বিএ/এমএস