রাজনীতি

মৃত্যু হলেও ভোট কেন্দ্র রক্ষা করবো

ঢাকা-৫ আসনের বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী নবী উল্লাহ নবী। যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও কদমতলী থানা (আংশিক) নিয়ে ঢাকা-৫ আসন। নবী উল্লাহ বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহ-সভাপতি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) ৮৬ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার, ডিসিসির ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে যখন প্রচার-প্রচারণার সময় শেষ ঠিক সেই সময়ে মুখোমুখি হলেন জাগো নিউজের। জানালেন কতটুকু প্রচার-প্রচারণা চালাতে পেরেছেন, ভোটের দিনের পরিকল্পনা, আসনের উন্নয়ন ও বিজয়ী হলে তার প্রতিশ্রুতির কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাগো নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক মাসুদ রানা।

Advertisement

জাগো নিউজ : আপনার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের নির্বাচনকে কীভাবে দেখছেন?নবী উল্লাহ নবী: আমার বয়স প্রায় ৬২ বছর। বুঝতে শেখার পর থেকে এমন নির্বাচন আমি কোনো দিন দেখিনি। অনেক স্বৈরাচার গেছে, স্বাধীনতার পর অনেকেই দেশ শাসন করেছে, কিন্তু এবারের মতো নির্বাচন কখনও দেখিনি।

নির্বাচন কমিশন বলেছিল তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করবে, জনগণের ভোটাধিকার তারা ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু এর ধারেকাছেই তারা নেই। এখন মাঠ তো আওয়ামী লীগের। সিইসির পদত্যাগ করা উচিৎ।

সরকার আওয়ামী লীগের ওপরও নির্ভরশীল নয়। সরকার পুলিশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সরকার আওয়ামী লীগকেও বিশ্বাস করছে না।

Advertisement

সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য সেনাবাহিনীকেও মনে হয় সরকার বিশ্বাস করে না। যদি বিশ্বাস করতো তবে তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেয়া হতো, এর মাধ্যমে তারা (সেনাবাহিনী) লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে পারতেন।

সেনাবাহিনী কতটুকু দেখভাল করতে পারবেন তা ৩০ তারিখ পর্যন্ত দেখার বিষয়। এদেশের সেনাবাহিনী জাতির গর্ব, তারা আন্তর্জাতিকভাবেও খ্যাতি লাভ করেছেন। তারা অন্য দেশের শান্তি নিশ্চিত করেন, তারা আমাদের দেশের শান্তিও নিশ্চিত করবেন আমরা এটা আশা করতে পারি। তাদের সুনাম যাতে বজায় থাকে আমরা সেটা চাই।

জাগো নিউজ : ভোটের দিন নিয়ে আপনার কোনো শঙ্কা রয়েছে কি না?নবী: আমরা শুনেছি ভোটের দিন আওয়ামী সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে নেবে। তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। কারণ, তারা জানে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। তারা এই পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা আরও শুনেছি তারা আগের রাতেই নাকি প্রশাসনের মাধ্যমে ২০ শতাংশ ভোট কাস্টিং করে রাখবে, বাক্সে ভরে রাখবে।

জাগো নিউজ : পরিস্থিতি যদি এটা হয় তবে আপনাদের অবস্থান কী হবে?নবী: আমরা তো মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা হয়ে আসিনি। আমার বাড়ি, আমার ঘর, আমার জন্ম সব এখানেই। আমার মৃত্যু হলেও ভোট কেন্দ্র রক্ষা করব। কিন্তু ভোট কেন্দ্র কেউ দখল করতে এলে আমরা মোকাবেলা করবো ইনশাআল্লাহ।

Advertisement

জাগো নিউজ: কতটুকু প্রচারণা চালাতে পেরেছেন?নবী: আমি প্রত্যেকটি ওয়ার্ডভিত্তিক প্রচারণা চালিয়েছি। আওয়ামী লীগ আমার মুখোমুখি হয়নি, পুলিশ আমার প্রতিপক্ষ হয়ে গেছে। সব পুলিশের কথা বলছি না, কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ রয়েছে। তারপরও আমি আশা করবো পুলিশরা তো এই দেশেরই লোক, তাদের আত্মীয়-স্বজনরাই কেউ আওয়ামী লীগ করে, কেউ বিএনপি করে। তাহলে কেন তারা রাজনৈতিক কর্মীর মতো কাজ করছেন। এটা তো ঠিক নয়।

আমি যে এলাকায় গণসংযোগ চালিয়েছি, সেখানে আগের দিন রাতে পুলিশ নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে গেছে। পুলিশের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা আমার পোস্টার ব্যানার ট্রাক দিয়ে নিয়ে গেছে। পোস্টার-ব্যানার লাগাতে গেলে পুলিশ কর্মীদের গ্রেফতার করেছে।

জাগো নিউজ : প্রচারণার সময় আপনার কত সংখ্যক কর্মী পুলিশ গ্রেফতার করেছে?নবী: এই পর্যন্ত আমার প্রায় ২০০-এর বেশি নেতাকর্মী গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

জাগো নিউজ : আপনার প্রধান বিরোধী প্রার্থীকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?নবী: আমাদের নিজেদের মধ্যে গ্রুপিংয়ে কারণে হাবিবুর রহমান মোল্লা (এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী) দুই-দুইবার এমপি হয়েছেন। এ ছাড়া তার এমপি হওয়ার কোনো যোগ্যতা নেই। তার বয়স ৮০ বছর পেরিয়ে গেছে। এখন তিনি জনগণকে কী সেবা দেবেন! এ ছাড়া এখানে আওয়ামী লীগের মধ্যে চারটি ভাগ রয়েছে।

জাগো নিউজ : আপনার দলেও তো গ্রুপিং রয়েছে?নবী: না, আমার দলে আগে যেটা ছিল, এখন কোনো গ্রুপিং নেই। সালাউদ্দিন সাহেব তার ওখানে (ঢাকা-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী) চলে গেছেন। আমি আমার জায়গায় রয়েছি। তাকে আমি সহযোগিতা করেছি, সালাউদ্দিন সাহেবও আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

জাগো নিউজ : এলাকার উন্নয়ন কোন অবস্থায় রয়েছে বলে মনে করেন? নবী: এই আসনটি আসলে রাজধানীর গেট। দেশের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ এই আসনের উপর দিয়ে চলাফেরা করে। কিন্তু এখানে ঢুকলেই মনে হয় একটা বস্তির ভেতরে ঢুকছি। রাজধানীর গেট, এটার কোন সৌন্দর্য নেই, কোনো উন্নয়ন নেই। সেবা প্রদানকারী সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানই নেই। একটা সরকারি মেডিকেল নেই, সরকারি কলেজ নেই, একটি বিশ্ববিদ্যালয় নেই, সরকারি কমিউনিটি সেন্টার নেই। শিশু পার্ক নেই, সরকারি একটা খেলার মাঠ পর্যন্ত নেই। রাস্তাঘাটের অবস্থা আর বললাম না।

এখানে ৮ লাখ লোক বসবাস করে। জলাবদ্ধতা এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমরা ট্যাক্স, রাজস্ব দেই, তারপরও সব নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

জাগো নিউজ : নির্বাচিত হলে উন্নয়নে আপনি কী কী পদক্ষেপ নেবেন?নবী: আমি নির্বাচিত হলে এইসব কাজ আমি বাস্তবায়ন করবো ইনশাআল্লাহ। ডিএনডি বাঁধ এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে স্বাধীনতার পর কোনো এমপিই পদক্ষেপ নেননি। সিটি করপোরেশন হওয়ার পর এখানে কিছু কাজ শুরু হয়েছে। তবে যে কাজ হচ্ছে সেটা দিয়ে এখানকার জলাবদ্ধতা নিরসন করা একেবারেই সম্ভব নয়। এখানে ব্যাপক সার্ফেস ড্রেন করতে হবে। আরও অনেক কাজ করতে হবে।

আরএমএম/এনএফ/এমএস