বিনোদন

প্রধানমন্ত্রীর সাহায্যেই কাঙ্গালিনী সুফিয়ার চিকিৎসা, তবুও সংকট

অনেকদিন ধরেই নানারকম শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন লোক গানের কিংবদন্তি শিল্পী কাঙ্গালিনী সুফিয়া। এই মাসের শুরুর দিকে হঠাৎ করেই স্ট্রোক করেন তিনি। হার্ট আর কিডনিতে সমস্যা রয়েছে আগে থেকেই। কিছুদিন ভর্তি ছিলেন সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

Advertisement

এখন বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০৬ নাম্বার ভিআইপি কেবিনে চিকিৎসাধীন আছেন। শরীরের খুব একটা উন্নতি এখনও আসেনি।

প্রধানমন্ত্রীর সাহায্য হিসেবে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা হাতে আসে। সে অর্থে চিকিৎসার খরচ মিটছে না। এখনও অসুস্থ শিল্পী। চিকিৎসা চালাতে হবে আরও দীর্ঘদিন। কিন্তু অর্থের এই সংকটে কতদিন চিকিৎসনা চালানো যাবে তা অনিশ্চিত। এ নিয়ে ভীষণ চিন্তার মধ্যে আছেন কাঙালিনী সুফিয়ার পরিবার।

আজ বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে এমনটাই জানালেন শিল্পীর মেয়ে পুষ্প বেগম। তিনি রয়েছেন মায়ের সঙ্গে হাসপাতালেই।

Advertisement

কাঙ্গালিনী সুফিয়ার বর্তমান অবস্থার কথা জানিয়ে পুষ্প বলেন, ‘মায়ের চিকিৎসা চলছে। ডাক্তার বলেছেন মায়ের ব্রেনে চাপ পড়ে এমন কোনো কিছু করা যাবে না। তাকে সব সময় হাসি খুশি রাখতে হবে। বেশি চিন্তা করলেই ব্রেইন স্ট্রোক এর ভয় আছে।

ডাক্তরা বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছিলেন সেগুলো করা হয়েছে। যাবতীয় ওষুধপত্র সরকার থেকে দেওয়া হচ্ছে।’

তবুও আর্থিক সংকটে আছেন বলেও জানালেন তিনি। পুষ্প বেগম বললেন, ‘সাধ্যমতো মায়ের সেবা করার চেষ্টা করছি। কিন্তু নিজের হাতে একটি পয়সা নেই। সরকার তো অনেক করছে। আর কী দাবি করা যায়। কিন্তু একজন রোগীর অনেক ইচ্ছে থাকে, অনেক চাহিদা থাকে। সেগুলো মিটাতে পারছি না। এজন্য খুব খারাপ লাগে।

মাকে তার ইচ্ছে মতো একটু ভালো খাবার কিনে খাওয়াব সেই সামর্থ্য নেই আমার। এর মধ্যে চিকিৎসাসহ নানা প্রয়োজনে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো ঋণ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী মাকে সঞ্চয়পত্র করে দিয়েছিলেন, সেখান থেকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা তোলা যায়। কিন্তু সব মিলিয়ে অনেক বেশি খরচ হচ্ছে।

Advertisement

মেডিকেলে যে ভাত দেয় সেই ভাত মা খেতে পারেন না। তার সমস্যা হয়। তাকে চিকন চালের ভাত খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

আমরা দুই বোন। আমাদের কোনো ভাই নেই। কে দাঁড়াবে আমাদের পাশে? মায়ের সামনে কাঁদতেও পারছি না হাসতেও পারছি না। অনেক কষ্টে আছি। আমার কোনো বান্ধবও নাই যে এই সময়ে আমাকে সহযোগিতা করবে।’

বাংলাদেশের লোক সংগীতের এক আবেগের নাম কাঙ্গালিনী সুফিয়া। তার প্রকৃত নাম টুনি হালদার। ‘কোন বা পথে নিতাইগঞ্জে যাই’, ‘পরাণের বান্ধব রে’, ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’, ‘আমার ভাঁটি গাঙের নাইয়া’- এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গান দিয়ে কোটি কোটি মানুষের মন জয় করেছেন তিনি।

মাত্র ১৪ বছর বয়সে গ্রামীণ অনুষ্ঠানে গেয়ে শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। পেয়েছেন ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার।

মিলেছে খ্যাতি। কিন্তু কোনোদিন অর্থের অভাব কাটেনি। অর্থের পেছনে ছুটেননি অবশ্য কোনোদিন। সারা জীবন গান করেছেন। মানুষকে সুরের খোরাক দিতে ছুটেছেন পথ থেকে পথে। গান গেয়ে অর্থ উপার্জন কখনোই মুখ্য বিষয় ছিল না তার কাছে।

১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করা এই মানুষটি এখনো বাঁচতে চান গানকে সঙ্গী করেই। অসুস্থতা জয় করে সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে চান গানের ভুবনে। সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছেন তিনি ও তার পরিবার।

এমএবি/এলএ/এমকেএইচ