জাতীয়

পুলিশ-র‌্যাব-বিজিবি ব্যর্থ হলে সশস্ত্র বাহিনী

অন্য বাহিনী ব্যর্থ হলে কিংবা সহযোগিতা চাইলে সশস্ত্র বাহিনী তাৎক্ষণিক গিয়ে সমাধান করবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেছেন, সারাদেশে ৩০০ আসনে নির্বাচন করা অবশ্যই চ্যালেঞ্জের। ইতোমধ্যে আমরা সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। দেশের কোথাও কোনো সমস্যায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি ব্যর্থ হলে তখন সেনাবাহিনী যুক্ত হবে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন ভবনের চতুর্থ তলায় জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে স্থাপিত কন্ট্রোল রুম থেকে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশে সার্বিক প্রস্তুতি সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সারাদেশে আমরা নির্বাচন আয়োজনে সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুতি আছে। নির্বাচনী সামগ্রী পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। কিছু কিছু এখনও যাচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনী থেকে এবার হেলিকপ্টার সহযোগিতা রেখেছি। নির্বাচনের দিন, নির্বাচনের আগের দিন এবং যেকোনো মুহূর্তে আমরা লজিস্টিক সাপোর্টের জন্য সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টার সহযোগিতা পাব।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সব বাহিনী মোতায়েন হয়ে গেছে। এখানে (নির্বাচন কমিশন) আমরা কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছি। সশস্ত্র বাহিনীসহ সকল বাহিনীর সদস্যরা কাজ শুরু করে দিয়েছে। এখান থেকে ৩০০ টা আসনে এইচএফ রেডিও এর মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।’

Advertisement

নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ৬টা আসনে ভোট হবে। সেখানে সব ইভিএম পাঠানো হয়েছে। প্রশিক্ষণ দেয়া হয়ে গেছে। যারা ভোট দেবেন তাদেরকেও সচেতন ও সহজভাবে ভোট দেয়ার জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।’

আদালতের নির্দেশনায় এখনও অনেকে প্রার্থিতা ও প্রতীক ফেরত পাচ্ছেন। কতগুলো আসনে এখনও ব্যালট ছাপানো যায়নি ও সর্বশেষ কীভাবে আদালতের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যালট পাঠানো হচ্ছে? জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আদালতের আদেশ আমাদের মানতেই হবে। শেষ মুহূর্তেও যদি আদালত কিছু নির্দেশনা দেয় সে ব্যাপারে আমরা তৎপর। প্রয়োজনে আমরা সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে নির্বাচনী সামগ্রী ভোটকেন্দ্রে পাঠিয়ে দেব।’

সশস্ত্র বাহিনীর কাজের ধরন ও ক্ষেত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সশস্ত্র বাহিনী সিভিল পাওয়ারে কাজ করবেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭ থেকে ১৩২ ধারায় কাজ করবেন। আসনভিত্তিক সংখ্যা কোনো বিষয় নেই। তারা সারাদেশে কোস্টাল এরিয়া বাদে কাজ করবেন। কোস্টাল এরিয়ায় কোস্টগার্ড নেভি কাজ করবে। এবার নির্বাচনী মাঠে ৫ লক্ষাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকছে।’

‘আমাদের এখানে পুলিশ আছে, র‌্যাব আছে বিজিবি আছে। যদি কোনো কিছু ঘটে কিংবা সংঘর্ষ ঘটে তাহলে প্রথমে পুলিশ ইন্টারফেয়ার করবে। এরপর বিজিবি-র‌্যাব যাবে। সবাই যখন ফেইলর (ব্যর্থ) হবে তখন সশস্ত্র বাহিনী হস্তক্ষেপ করবে। পুলিশের কাজটা সশস্ত্র বাহিনী কখনও করে না। সশস্ত্র বাহিনী সব সময় লাস্ট রিসোর্স।’

Advertisement

‘আমরা যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছি সেখানে সেনাবাহিনীর কাজের পরিধি সম্পর্কে বলা হয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিযুক্ত থাকবে একথা আমরা কখনও বলি নাই। বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে কাজ করছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অন্য বাহিনী ব্যর্থ হলে কিংবা সহযোগিতা চাইলে সশস্ত্র বাহিনী তাৎক্ষণিক গিয়ে সমাধান করবে’-যোগ করেন নির্বাচন কমিশনার।

অনেক প্রার্থী নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছিল, ইসিতেও অভিযোগ করেছিল। কিন্তু আমলে নেয়া হয় নাই। এরপর অনেক প্রার্থী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ হয়েছে। এত কিছুর পরও আমরা সেনা মোতায়েনের পর সেনা বাহিনীকে মুভ করতে দেখিনি। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘সিস্টেম অনুযায়ী সব হচ্ছে। আচরণবিধিসহ বিভিন্ন অভিযোগ রিটার্নিং কর্মকর্তারা দেখবেন। সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট আছে, এরপর ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির নজরে আনলে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। যেসব ক্ষেত্রে সত্যতা পাওয়া গেছে সেখানে আইনানুগ অ্যাকশন নিতে বলা হয়েছে।’

ঐক্যফ্রন্টের সব অভিযোগ সত্য নয় উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘তাদের যেসব অভিযোগের সত্যতা মিলেছে সেগুলোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি।’

ভোটার ও প্রার্থীদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন ও সংযতভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখার আহ্বান জানান নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘অনেকদিন পর নির্বাচন হচ্ছে। কিছুটা তো উত্তেজনা আছেই।’ তবে সবকিছু নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

পরে মেজর রাজু নির্বাচনী কন্ট্রোলরুমে স্থাপিত ম্যাপ দেখিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিশ্লেষণ করেন।

জেইউ/এসআর/এমকেএইচ