অর্থনীতি

ব্রোকারেজ হাউসে বিনিয়োগকারী নেই

আর মাত্র দুদিন পরেই অনুষ্ঠিত হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন ঘিরে সব মহলেই নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলেও ভোট দিতে শহর ছাড়ছেন সাধারণ ভোটাররা। বিভিন্ন ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীদের মতো শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরাও যান্ত্রিক শহর ঢাকা ছেড়ে নিজ নিজ এলাকায় যাচ্ছেন।

Advertisement

ভোটের আগে আজ বৃহস্পতিবার ছিল শেয়ারবাজারের শেষ লেনদেন কার্যদিবস। এদিন সরেজমিনে মতিঝিলের বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ ব্রোকারেজ হাউস প্রায় বিনিয়োগকারী শূন্য।

মতিঝিলে যে কয়টি ব্রোকারেজ হাউস নিয়মিত জমজমাট থাকে তার একটি শাকিল রিজভী স্টক লিমিটেড। বেলা ১১টার দিকে এই ব্রোকারেজ হাউসটিতে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি খালি চেয়ার পড়ে রয়েছে। হাতেগোনা কয়েকজন বিনিয়োগকারী প্রজেক্টর দেখে লেনদেন করছে।

ব্রোকারেজ হাউসটির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘হাউসে উপস্থিত হয়ে সাধারণত ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করেন। আমাদের এখানে প্রতিদিনই লেনদেন শুরুর পর বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতিতে জমজমাট থাকে। কিন্তু কয়েকদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কম। একদিকে বাজারের অবস্থা ভালো না, অন্যদিকে অনেকে ভোট দিতে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। এ কারণেই বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কম।’

Advertisement

মধুমিতা ভবনে থাকা আর একটি ব্রোকারেজ হাউস এআরসি সিকিউরিটিজ। এই ব্রোকারেজ হাউসটিতে গিয়ে দেখা যায়, মনিটরের সামনে মাত্র তিনজন বিনিয়োগকারী বসে আছেন। পাশেই একটার ওপর আর একটা চেয়ার তুলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

এ ব্রোকারেজ হাউসটির এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের এখানে সাধারণত বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকে। তবে এত কম থাকে না। ভোটের কারণেই কয়েকদিন ধরে বিনিয়োগকারীরা কম আসছেন। ভোটের পর আশা করছি, বিনিয়োগকারীদের উপস্থিতি বাড়বে।’

ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে যেসব বিনিয়োগকারীদের দেখা মেলে তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোটের উদ্দেশ্যে সোমবার (২৪ ডিসেম্বর) থেকেই বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। এরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার পাশাপাশি কিছু ভোট পছন্দের প্রার্থীর দিকে টানার চেষ্টা করবেন।

এদিকে ভোটকে কেন্দ্র করে যানবাহন চলাচলের ওপর নির্দেশনা জারি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আগামী ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২টা থেকে ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত সড়কপথে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। এর আওতায় রয়েছে বেবি ট্যাক্সি/অটো রিকশা/ইজিবাইক, ট্যাক্সি ক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পোসহ স্থানীয় পর্যায়ে যন্ত্রচালিত বিভিন্ন যানবাহন। আর ২৮ ডিসেম্বর (শুক্রবার) দিবাগত রাত ১২টা থেকে ১ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

Advertisement

ভোট উপলক্ষে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে নঈম রাজা নামের এক বিনিয়োগকারী জাগো নিউজকে বলেন, ‘শনিবার থেকে সড়কপথের সব যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই শুক্রবার গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করা মানুষের চাপ বাড়বে। তাই অনেকেই আগেভাগে বাড়ি চলে গেছেন। আমার পরিচিত পাঁচজন বিনিয়োগকারী সোমবার কুষ্টিয়ার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন ‘

সায়েম নামের আর এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘ভোট উপলক্ষে এবার ঈদের মতো টানা ছুটি পাওয়া গেছে। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির কারণে শেয়ারবাজারে লেনদেন হবে না। রোববার ভোটের কারণে লেনদেন বন্ধ। তাই অনেকেই গ্রামে স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাতে ঢাকা ছেড়ে গেছেন। তাছাড়া এখন ছেলে-মেয়েদের স্কুলও বন্ধ। ফলে একসঙ্গে দুই কাজ করার সুযোগ চলে এসেছে। একদিকে ভোট দেয়া হলো অন্যদিকে শীতে গ্রামও ঘুরে আসা হলো।’

রংপুরে জন্ম নেয়া এই শেয়ার বিনিয়োগকারী বলেন, ‘আমি নিজেও রংপুরে গ্রামের বাড়িতে ভোটার। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের পাশাপাশি ঢাকায় ছোটখাট একটা ব্যবসা করি। ভোট দিতে আগামীকাল (শুক্রবার) ভোরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হবো। সঙ্গে ছেলে-মেয়ে ও পরিবারও যাবে। ভোটের পর ৩ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরে আসার ইচ্ছা আছে।’

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালক শরিফ আতাউর রহমান বলেন, ‘বাজারের অবস্থা ভালো না। লেনদেন খুবই কম। একটা-দুইটা ব্রোকারেজ হাউস নয়, সব হাউসেই একই অবস্থা। বিনিয়োগকারী নেই। ভোটের কারণে হয়তো কিছু বিনিয়োগকারী ঢাকা ছেড়ে গ্রামে গেছেন, এর পাশাপাশি বাজারের অবস্থা ভালো না থাকাও বিনিয়োগকারী কম থাকার একটি কারণ।’

এমএএস/এসআর/এমকেএইচ