ভারতের বিদ্যুৎ গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল তাদের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ এখন থেকে বাংলাদেশে বিক্রি করতে পারবে। আন্তর্জাতিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত সম্প্রতি তাদের বিধিমালা পরিবর্তন করার ফলেই এটা সম্ভব হচ্ছে।
Advertisement
নেপালের কার্নালি নদীর ওপর যে ৯০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে, এর ফলে সেটির বিদ্যুৎ বাংলাদেশে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে বাধা দূর হল।
জিএমআর গ্রুপ নামে ভারতীয় একটি শিল্পগোষ্ঠী আপার কার্নালি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মাণ করছে, বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রির বিষয়ে তাদের সঙ্গে আগেই ঢাকার নীতিগত সমঝোতা হয়েছে।
ওই গোষ্ঠীর একজন মুখপাত্র জানান, ‘২০২১ সালে আপার কার্নালি প্রোজেক্ট কমিশনড হলেই উৎপাদনের একটা অংশ বাংলাদেশে সরবরাহ করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।’
Advertisement
নেপাল থেকে বিদ্যুৎ কেনার পথ প্রশস্ত করতে বাংলাদেশ সরকারও বহুদিন ধরেই ভারতের ওপর কূটনৈতিক চাপ দিয়ে আসছিল।
দিল্লির স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক আরআইএসের অধ্যাপক ও আঞ্চলিক কানেক্টিভিটির বিশেষজ্ঞ প্রবীর দে মনে করছেন ‘বিবিআইএন’ (বাংলাদেশ-ভূটান-ভারত-নেপাল) সাব-রিজিওনের সহযোগিতাকে জ্বালানি তথা বিদ্যুৎ খাতে প্রসারিত করার ক্ষেত্রে এটি একটি বড় পদক্ষেপ।
প্রবীর দে বলেন, ‘বিবিআইএন-এ যখন অবাধে মোটর ভেহিকেল চলাচল নিয়ে সমঝোতা হয় তখন থেকেই বাংলাদেশ চাইছিল জ্বালানি বা বিদ্যুৎ খাতেও অনুরূপ সমঝোতা চালু করতে। অর্থাৎ বিবিআইএন কাঠামোর ভেতর একটা দেশ যাতে অন্য দেশকে বিনা বাধায় বিদ্যুৎ বেচতে পারে, বাংলাদেশ সেই দাবিই জানিয়ে আসছিল যা এতদিনে মিটল বলা যেতে পারে।’
কিন্তু আন্তর্জাতিক বিদ্যুৎ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারত সরকারের নীতিমালাই ছিল এতদিন এই প্রস্তাব রূপায়নের পথে প্রধান বাধা। যেমন- ওই নীতিমালায় বলা ছিল, নেপালে যেসব বিদ্যুৎ প্রকল্প ভারত সরকারের মালিকানাধীন কিংবা যেখানে গরিষ্ঠ মালিকানা (মেজরিটি স্টেক) ভারতের, সেগুলো কেবল ভারতেই তাদের বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু সম্প্রতি এটি সংশোধন করে ভারত সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় নতুন নীতিমালা জারি করেছে।
Advertisement
তাতে বলা হয়েছে, দুটো আলাদা দেশের (এ ক্ষেত্রে নেপাল ও বাংলাদেশ) যদি ভারতের সঙ্গে আলাদাভাবে দ্বি-পাক্ষিক চুক্তি থাকে, তাহলে তারা নিজেদের মধ্যেও বিদ্যুৎ বেচাকেনা করতে পারবে।
এর জন্য তারা ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করতে পারবে। তবে তার আগে তাদের ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ‘সেন্ট্রাল ট্রান্সমিশন ইউটিলিটি’ এর সঙ্গে একটি চুক্তি করতে হবে।
নেপালও মনে করছে, ভারতের এই সিদ্ধান্ত আঞ্চলিক বিদ্যুৎ সহযোগিতার ক্ষেত্রে একটি বিরাট পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারতের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিড যেহেতু ইতোমধ্যেই নেপাল ও বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত তাই নেপাল যদি সরাসরি বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ বেচতে চায়, সেটা আদৌ কোনো সমস্যা হবে না।
এমনকি, নেপালের কাছ থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ কিনলে সেটা ভারতের বিদ্যুতের চেয়েও তুলনায় শস্তা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের অনেকেরই ধারণা।
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামাড়া হয়ে এবং ত্রিপুরার পালাটানা থেকে কুমিল্লা হয়ে দুটো রুটে ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে।
তবে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এখনও চাহিদার তুলনায় বিদ্যুতের জোগান কম এবং বিদ্যুতের অভাবে তেমন বড় শিল্পও সেখানে গড়ে উঠতে পারেনি। এই অঞ্চলটিই ভৌগোলিকভাবে নেপাল ও ভুটানের কাছাকাছি। কাজেই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে সে দেশের একটা বিস্তীর্ণ অঞ্চল নেপাল ও ভুটান থেকে আসা বিদ্যুতের মাধ্যমে উপকৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি
এমবিআর/জেআইএম