আইন-আদালত

ছাত্রীদের যৌন হয়রানির মামলা : আপসের চেষ্টা আহসানউল্লাহর শিক্ষকের

আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহফুজুর রশীদ ফেরদৌসের (বরখাস্ত) বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগে যে মামলা হয়েছে তা মিটমাটের চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি। বিভিন্ন মাধ্যমে মামলার বাদীকে আপসের প্রস্তাব দিচ্ছেন শিক্ষক ফেরদৌস।

Advertisement

জামিনের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি থাকলেও তাকে গ্রেফতার করছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণেও নেই তেমন অগ্রগতি। দুই বছরে ২৮ সাক্ষীর মধ্যে সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে সাতজনের। মামলাটি বর্তমানে ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসলি আফরোজা ফারহানা আহম্মেদ অরেঞ্জ জাগো নিউজকে বলেন, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আমরা রাষ্ট্রপক্ষ চেষ্টা করছি। মামলার একমাত্র আসামি শিক্ষক ফেরদৌস পলাতক রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের জন্য সোর্পদ করা।

Advertisement

বাদীপক্ষের আইনজীবী জেয়াদ আল মালুম বলেন, শিক্ষক ফেরদৌস পলাতক রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত দ্রুত তাকে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা। আমরা বাদী পক্ষ চাচ্ছি মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।

মামলার বাদী আসাদদৌল্লাহ আল সায়েম জাগো নিউজকে বলেন, মামলা চলছে মামলার গতিতে। শিক্ষক ফেরদৌস বিভিন্ন মাধ্যমে আমার সঙ্গে আপসের চেষ্টা করছে। আমি কোনোভাবে আপস করতে রাজি হয়নি আর কখনো হবও না।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষক ফেরদৌস পলাতক রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতার করছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচিত তাকে দ্রুত গ্রেফতার করা।

শিক্ষক ফেরদৌসের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির ঠিকানা রমনা থানা এলাকায়। ফেরদৌসের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয় জানাতে অস্বীকার করে রমনা থানার পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) কাজী মাঈনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা একটি গোপনীয় বিষয়। বাদী ছাড়া এটা কাউকে জানানো যায় না।

Advertisement

মামলার নথি থেকে জানা যায়, হাইকোর্ট থেকে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৭ সালের ১৮ এপ্রিল ট্রাইব্যুনালে জামিন নামা দাখিল করেন শিক্ষক ফেরদৌস। এরপর ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় ২০১৭ সালের ১ জুন শিক্ষক ফেরদৌসের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়াও ২৮ সাক্ষীর মধ্যে দুই বছরে সাত জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, যৌন হয়রানির অভিযোগে ২০১৬ সালের ৪ মে রাতে কলাবাগান থানায় শিক্ষক ফেরদৌসের বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদদৌল্লাহ আল সায়েম। ওই দিনই কলাবাগানের বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। রিমান্ড শেষে যৌন হয়রানির কথা স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দেন ফেরদৌস।

এদিকে ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তাকে বরখাস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

২০১৬ সালের ১৪ আগস্ট ছাত্রীদের সঙ্গে যৌন হয়রানি, নগ্ন সেলফি প্রকাশ, ধর্ষণ চেষ্টা ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত ফেরদৌসের বিরুদ্ধে অভিযোপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের নারী সহায়তা ও তদন্ত বিভাগের উপ-পরিদর্শক আফরোজা আইরীন কলি। যৌন হয়রানির শিকার ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রীসহ মোট ২৮ জনকে এ মামলায় সাক্ষী করা হয়।

২০১৬ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকার ২ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সফিউল আজম শিক্ষক ফেরদৌসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।

চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, শিক্ষক ফেরদৌস আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রীকে বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি ও প্রশ্নপত্র এবং ভাইভায় নম্বর দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এক ছাত্রীর সরলতার সুযোগে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজ বাসস্থানে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তার নগ্ন ছবি ওয়েবসাইট ও মোবাইলের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেয়ায় পাবলিক পরীক্ষা আইনে শিক্ষক ফেরদৌসের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।

জেএ/এনডিএস/এমএস