আন্তর্জাতিক

সব ধ্বংস হয়ে গেছে

ভয়াবহ সুনামিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে ইন্দোনেশিয়া। সুনামির কবলে প্রাণ হারিয়েছে ২৮১ জন। জলস্রোতে আহত হয়েছে ১ হাজার ১৬ জন। নিখোঁজের সংখ্যাও অনেক। এর মধ্যেই নতুন করে আরও একটি সুনামি আঘাত হানতে পারে বলে অ্যানাক ক্রাকাতোয়ার সমুদ্র উপকূলবর্তী বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছে।

Advertisement

সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে একটি রিসোর্টের তাঁবুতে বিশাল আকারের ঢেউ আঘাত হানছে। ওই তাঁবুতে এক অনুষ্ঠানে গান গাইছিল ইন্দোনেশিয়ার বেশ জনপ্রিয় রক ব্যান্ড সেভেনটিন।

হৃদয়বিদারক এক ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে গায়ক রিয়েফিয়ান ফাযারসিয়াহ জানান যে, ব্যান্ডের এক সদস্য এবং ম্যানেজার নিহত হয়েছেন এবং তিন সদস্য এবং ওই গায়কের স্ত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।

ওই ব্যান্ডের এক নবীন সদস্য জ্যাক তার ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন যে, স্টেজের অংশবিশেষ আঁকড়ে ধরে স্রোতের হাত থেকে বেঁচে গেছেন। তিনি বলেন, শেষ কয়েকটি মুহূর্তে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, ব্যান্ডটি দলটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, স্রোত আঘাত হানার সময় আমাদের দলে অনেক সদস্যই পানিতে ধরে থাকার মতো অবলম্বন খুঁজে পাননি।

বানতেন প্রদেশের সিনাঙ্কা উপজেলার দোকানদার রুডি হেরদিয়ানসিয়াহ বলেন, সমুদ্র থেকে প্রকট শব্দ আসার আগ পর্যন্ত শনিবার সমুদ্র শান্তই ছিল। পানির উঁচু দেয়াল সমুদ্রতীরে তার দোকানে আঘাত করলে ঢেউয়ের টানে ভেসে যান। এসময় অন্তত তিনবার অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন তিনি।

আল্লাহর কাছে অসংখ্য কৃতজ্ঞতা যে, তিনি আমাকে বাঁচিয়েছেন। হেরদিয়ানসিয়াহ বলেন, তিনি সুনামির সতর্ক বার্তা শোনেননি। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে একবার সুনামি প্রস্তুতি মহড়ায় অংশ নিয়েছিলাম। ওই মহড়ায় অংশ নেয়ার কারণে আমি সচেতন ছিলাম। আমি কোনো কিছু ধরার চেষ্টা করছিলাম যা আমার জীবন বাঁচাতে পারে। শেষ পর্যন্ত একটি বেঞ্চ আঁকড়ে ধরে ছিলাম।

১৬ বছর বয়সী আযকি কুর্নিয়াওয়ান জানান কারিতা সৈকতের একটি জনপ্রিয় রিসোর্ট পাত্রা কমফোর্ট হোটেলে আরো ৩০ জন শিক্ষার্থীর সাথে একটি প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সেসময় হঠাৎ হোটেলের লবিতে থাকা লোকজন সমুদ্রের পানি বাড়ছে বলে তীব্র চিৎকার শুরু করে। সংবাদ সংস্থা এপিকে তিনি জানান, কী হচ্ছিল তা তিনি বুঝতে পারছিলেন না, কারণ কোনো ভূমিকম্প অনুভব করেননি তিনি।

Advertisement

দ্রুতবেগে দৌঁড়ে পার্কিং লটে পৌঁছান আযকি। তার উদ্দেশ্য ছিল নিজের মোটর বাইকটি নিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে যাওয়া, কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন সবকিছু ততক্ষণে পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। হঠাৎ করে প্রায় এক মিটার উঁচু এক ঢেউ আঘাত করে তাকে।

তিনি বলেন, সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় ৩০ মিটার দূরে থাকা একটি বেড়ার দিকে ভেসে যাই আমি। আমি যখন ওই বেড়া শক্ত করে ধরে রেখে স্রোতের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, তখন বারবার মনে হচ্ছিল যে হয়তো আজই আমার মৃত্যু হবে।

আসেপ পেরাংকাট নামের এক ব্যক্তি এএফপিকে জানান, শহরের ওপর দিয়ে সমুদ্রের ঢেউ যাওয়ার সময় জাভার কারিতা দ্বীপে পরিবার নিয়ে সময় কাটাচ্ছিলেন তিনি। গাড়িগুলোকে প্রায় ১০ মিটার দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় ঢেউ; একই অবস্থা হয় বড় কন্টেইনারগুলোরও।

তিনি বলেন, সমুদ্রের খুব কাছে অবস্থিত স্থাপনাগুলো তছনছ হয়ে গেছে, গাছ এবং বৈদ্যুতিক খাম্বাগুলো সব ধ্বংস হয়ে গেছে। বাসিন্দাদের প্রায় সবাই জঙ্গলের দিকে দৌড়ে গিয়ে অবস্থান নেয়। জাভার পানডেগলাং অঞ্চলের বাসিন্দা আলিফ মেট্রো টিভিকে জানান, নিখোঁজ থাকা অনেক ব্যক্তির স্বজনরা এখনো তাঁদের আত্মীয়দের খুঁজছেন।

সন্ধ্যায় আগ্নেয়গিরি থেকে বেশ কয়েকদফা অগ্ন্যুৎপাত হলেও ঠিক সুনামির আগে আগ্নেয়গিরি ছিল একদম শান্ত।অন্ধকারের মধ্যে হঠাৎই বিশাল ঢেউ আসতে শুরু করে এবং লোকজন দৌঁড়াতে শুরু করেন। পর পর দুটি ঢেউ আঘাত হানে। প্রথম ঢেউ অতটা শক্তিশালী না হলেও দ্বিতীয় ঢেউটি ছিল ভয়াবহ।

জাভার আনইয়েরে সমুদ্রসৈকতে একটি দোকান চালান রাণী নামের এক নারী। ওই এলাকা সুনামিতে তছনছ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, সব শেষ হয়ে গেছে, ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের কাছে টাকাও নেই যে আমরা এগুলো নতুন করে বানাব। বছরের এই সময়টা পর্যটনের জন্য ভাল সময় হিসেবে বিবেচিত হয় এবং ওই এলাকার মানুষের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসই পর্যটন। কিন্তু সুনামির আঘাতে সব কিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।

টিটিএন/আরআইপি