ধর্ম

বিবি হালিমার ঘরে যেভাবে বেড়ে ওঠেন বিশ্বনবি

বিশ্বনবির জন্মকালীন সময়ে মক্কার লোকেরা নিজেদের সন্তানদেরকে মক্কা শহর থেকে পল্লী গ্রামে পাঠিয়ে দিতেন। যাতে তারা গ্রামের সুন্দর ও উন্মুক্ত পরিবেশে সুস্থ ও মজবুতভাবে বেড়ে ওঠতে পারে। সে আলোকে প্রিয়নবিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তাকেও সুন্দর প্রতিপালন দুগ্ধ পানের জন্য প্রেরণ করা হয়েছিল।

Advertisement

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মের কিছুদিন পর মক্কা পল্লীর হাওয়াযেন গোত্রের বনি সাদ বিন বকর শাখার কতিপয় দুগ্ধদানকারী নারী নবজাতক নেয়ার জন্য পবিত্র নগরী মক্কায় আসেন। সে দলে হজরত হালিমা সাদিয়াও ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন স্বামী হারিস বিন আবদুল্লাহ।

সে বছরটি ছিল মারাত্মক দুর্ভিক্ষ ও অভাব-অনটনের। অভাবের তাড়নায় নিঃস্ব যেসব নারীর দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিল তারা দুগ্ধপোষ্য শিশু গ্রহণের ব্যকুল ছিল। হজরত হালিমা সাদিয়ার দুগ্ধপোষ্য শিশুর নাম ছিল আব্দুল্লাহ।

হজরত হালিমা সাদিয়া স্বামী ও শিশু সন্তান আব্দুল্লাহসহ একটি বযস্ক সাওয়ারীর পিঠে চড়ে দুগ্ধপোষ্য সন্তান লাভের আশায় পবিত্র নগরী মক্কায় এসে পৌছলেন। কিন্তু অন্যদের তুলনায় তাদের আসতে দেরি হয়ে যায়।

Advertisement

পথিমধ্যে ক্ষুধার যন্ত্রণায় শিশু আবদুল্লাহ সারারাত কান্নাকাটি করে, ফলে তারা বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করে। সন্তানের ক্ষুধা নিবৃত্ত করার মতো দুধ ছিল হজরত হালিমা সাদিয়ার বুকে এবং সাওয়ারীর পালানে।

হালিমার মক্কায় আগমনদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে ক্লান্ত ও অবসন্ন গোটা কাফেলা পবিত্র নগরী মক্কায় এসে উপস্থিত হয়। কাফেলার সবাই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ তিনি ছিলেন পিতৃহীন, ইয়াতিম। যথাযথ পারিশ্রমিক ও উপঢৌকন না পাওয়ার ভয়ে তারা প্রিয়নবিকে এড়িয়ে গেলন।

আগত কাফেলার সবাই শিশু পেয়ে যায় কিন্তু হজরত হালিমা কোনো শিশু পায়নি। আর বাকী ছিলেন শুধু শিশু মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। হজরত হালিমা রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ইয়াতিম শিশু মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিতেই স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করেন এবং জেদ ধরেন যে, এ ইয়াতিম শিশুকেই সে গ্রহণ করবে।

হালিমার স্বামী তাকে বলল- ‘ইয়াতিম শিশু মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিতে পার, হতে পারে আল্লাহ তাআলা তার মাঝে আমাদের জন্য কোনো কল্যাণ রেখেছেন।’

Advertisement

শিশু মুহাম্মদকে গ্রহণবিবি হালিমা শিশু মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গেই অনুভব করলেন যে, তার স্তন দুটি দুধে পরিপূর্ণ। তা থেকে শিশু মুহাম্মদকে দুধ পান করালেন। তার সন্তান আব্দুল্লাহকেও দুধ পান করালেন।

যে বয়স্ক ও দুর্বল সাওয়ারিতে করে তারা মক্কায় এসেছেন, সে সাওয়ারী অন্যদের সাওয়ারী থেকে শক্তিশালী ও তার পালনেও দুধে ভরপুর হয়ে গেল। তা থেকে হজরত হালিমার স্বামী হারিস দুধ দোহন করে তারা উভয়ে তৃপ্তিসহকারে দুধ পান করলেন।

হজরত হালিমার স্বামী তখন স্ত্রীকে বললেন, হে হালিমা! জেনে রেখো, তুমি এক মহান কল্যাণময় শিশু পেয়েছ। হজরত হালিমা বলেন, ‘আমারও তা-ই মনে হয়।’ শুরু হলো শিশু মুহাম্মদকে নিয়ে হালিমার পথচলা।

হালিমার গৃহে শিশু মুহাম্মদমক্কায় আসার পথে যে বাহনে আসতে বিবি হালিমার কষ্ট হয়েছিল এবং তারা কাফেলা থেকে পিছিয়ে পড়েছিল। সে সাওয়ারী শিশু মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে গোটা কাফেলাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চললো।

কাফেলার সহযাত্রী নারীরা বলতে লাগলো, হে আবু যুয়াইবের কন্যা! একটু দাঁড়াও এবং আমাদের জন্য অপেক্ষা কর। এটা কি সেই সাওয়ারী নয়, যেটায় চড়ে তুমি আমাদের সঙ্গে এসেছিলে?

হজরত হালিমা সাদিয়া বললেন, ‘হ্যাঁ’। তারা বলল, ‘আল্লাহর কসম! এ সাওয়ারী আগের অবস্থার পুরোপুরি উল্টো।’

হাওয়াযেন গোত্রে শিশু মুহাম্মদহজরত হালিমা শিশু মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে নিজ গৃহে এসে উপস্থিত হলেন। আল্লাহর একান্ত মেহেরবানি যে, সবাই যখন অভাব-অনটনে নিমজ্জিত, তখন হালিমার গৃহে বেইছে স্বচ্ছলতার সুবাতাস।যেখানে গোত্রের কারো ভেড়া ও ছাগলের পাল পেট পুরে খেতে পারে না এবং দুধ দেয় না সেখানে হজরত হালিমার ভেড়া ও ছাগলের পাল পেট ভরে খায় এবং পালান ভর্তি দুধ দেয়। আর তাতে দ্রুত হজরত হালিমার অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। সাবলম্বী হয়ে ওঠে হজরত হালিমার পরিবার।

শিশু মুহাম্মদের বেড়ে ওঠাহজরত হালিমার গৃহে প্রিয়নবির আগমনই ছিল মহান আল্লাহর একান্ত রহমত। যে কারণে পুরো গোত্র দুর্ভিক্ষগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও তার গৃহ ছিল সার্বিকভাবে স্বচ্ছল। এর এটি ছিল প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক বিশেষ মুজিজা।

আল্লাহ তাআলা একান্ত রহমত ও বরকতা দ্বারা হালিমার ঘরকে সাহায্য করেন। ক্ষুধা ও ভয় থেকে প্রিয়নবিসহ বিবি হালিমার পুরো পরিবারকে হেফাজত করেন। আর এভাবেই নিরাপদে বিবি হালিমার ঘরে বেড়ে ওঠেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

আল্লাহ তাআলা ইয়াতিম শিশু মুহাম্মদকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে দুর্ভিক্ষের মাঝে সাহায্য করেছিলেন। যা ইসলাম ও মুসলমানসহ বিশ্ব মানবতার জন্য এক মহান শিক্ষা।

এমএমএস/জেআইএম