খেলাধুলা

টি-২০তে ক্যারিবীয় পাওয়ার হিটিংয়ের সামনেই পিছিয়ে টাইগাররা

খালি চোখে চার-ছক্কার ফুলঝুরি; কিন্তু আসলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট কি?

Advertisement

তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলেন, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট হলো বিগ হিট নেয়ার প্রতিযোগিতা? যে দল বেশি চার ও ছক্কা হাঁকাতে পারে, তারাই জেতে। আবার কারো কারো মত, ভিন্ন। তারা বলেন, নাহ টি-টোয়েন্টি মানেই চার ও ছক্কার অবাধ প্রদর্শনি নয়, শুধু চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে ২০ ওভারের ক্রিকেটে জেতা যায় না।

খেলাটা মোট ১২০ বলের। এর মধ্যে মধ্যে ক্রিকেটীয় শট মানে ব্যাকরণ সম্মত ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি, পাওয়ার হিটিং ও ইম্প্রোভাইজ করে যতটা সম্ভব বেশি বলে রান করাটাই সাফল্যের মূল। আবার অনেকে বলেন, যে দল যত বেশি গায়ের জোর খাটিয়ে ভাল ও সমীহ জাগানো বলকেও সীমানার ওপারে পাঠাতে পারে, সেই দলই টি-টোয়েন্টির সবচেয়ে লাগসই দল। তাদের আটকে রাখা কঠিন।

ওপরের কোন ব্যাখ্যাই ফেলনা নয়। তাই এক কথায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের সঠিক ও সত্যিকার সংজ্ঞা দেয়া মুশকিল। আসলে যা বলা হলো, টি টোয়েন্টিতে তার সবকিছুরই মিশ্রণ আছে।

Advertisement

তবে এটা সত্য যে ক্রিকেটীয় টেকনিক, টেম্পারামেন্ট উইকেট উপযোগি ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ এবং সামর্থ্যের সঠিক ও যথাযথ প্রয়োগ প্রথম কথা। এখন কেউ যদি বলের লাইনে পা ও শরীর না নিয়ে জায়গায় দাড়িয়ে ‘ইয়াহু’ মার্কা শট খেলেন, তাহলে নিশ্চয়ই সফল হওয়া যাবে না। আর হলেও এক বা দুইবার, তারপরও আউট হয়ে যেতে হবে।

আসল কথা হলো, টি-টোয়েন্টিতে ভাল বলই শেষ কথা নয়। এই ফরম্যাটে যে দল যত বেশি ভাল ও সমীহ জাগানো ডেলিভারিতে চার ও ছক্কা হাঁকাতে পারে- সেই দলের সম্ভাবনা তত বেশি থাকে। সেই দল তত বেশি সফলও।

আর সে কারণেই টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা এখনো সফল। গায়ের জোর খাাটিয়ে চার-ছক্কা হাঁকানোর ক্ষমতা বেশি বলেই ২০ ওভারের ফরম্যাটে ক্যারিবীয়রা অন্য দলগুলোর চেয়ে আলাদা। সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী।

আর তাইতো ক্রিস গেইল, আন্দ্রে রাসেল, ডোয়াইন ব্র্যাভো, কাইরণ পোলার্ড ও সুনিল নারিনের মত তারকাদের ছাড়াও এভিন লুইস, সাই হোপ, হেটমায়ার, নিকোলাস পুরান, কিমো পল এবং ব্রাথওয়েটের গড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজও ২০ ওভারের ফরম্যাটে অন্যরকম দল। কঠিন প্রতিপক্ষ।

Advertisement

যা হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছে টাইগাররা। বিষয়টা এমন নয় যে- সাকিবের দল ভাল খেলেনি, তাই হেরেছে। এটা সত্য যে, শেরে বাংলায় দ্বিতীয় ম্যাচটি ছাড়া বাকি দুই ম্যাচে টাইগাররা সামর্থ্যের সেরাটা খেলতেও পারেনি।

কিন্তু যে দুই ম্যাচে হেরেছে, সেই দুই ম্যাচে টাইগারদের চেয়ে অনেক বেশি ভাল খেলেছে ক্যারিবীয়রা। সাই হোপ, এভিন লুইস, কিমো পল, নিকোলাস পুরানদের উত্তাল উইলোবাজি ও আর চার-ছক্কার তোড়ের সামনে বাংলাদেশের বোলিং ও ফিল্ডিং লণ্ড ভণ্ড হয়ে গেছে।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে লিটন, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ ও সৌম্য সরকার রান পেয়েছেন। স্ট্রোকও খেলেছেন। ছক্কা-চারও হাঁকিয়েছেন; কিন্তু এভিন লুইস আর সাই হোপরা অনেক বড় বড় ছক্কা হাঁকিয়েছেন। আলগা বল পেলে তো কথাই ছিল না, ভাল বলকেও তারা অবলীলায় উড়িয়ে বাতাসে ভাসিয়ে সোজা সীমানার ওপারে পাঠিয়েছেন।

সেটা সম্ভব হয়েছে গায়ে ও পেশিতে বেশি শক্তি থাকার কারণে। আর সেই পেশি শক্তির চার ও ছক্কা হাঁকানোর প্রতিযোগিতায় ক্যারিবীয়দের সাথে পেরে ওঠা সম্ভব হয়নি বলেই সিরিজ হেরেছে সাকিব বাহিনী।

একটি ছোট্র পরিসংখ্যানেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা চার ও ছক্কা হাঁকানোর প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হারিয়েছেন। আসুন দেখি সেই ছোট্র পরিসংখ্যান : বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তিন ম্যাচে মোট ছক্কা হাঁকিয়েছেন (প্রথম ম্যাচে ২টি, দ্বিতীয় ম্যাচে ৬টি আর শেষ ম্যাচে ৮টি), মোট ১৬টি। আর বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন (১৫+২২+১০) = ৪৭টি।

তার মানে বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে চার ও ছক্কা থেকে পেয়েছে (২ ছক্কা ও ১৫ বাউন্ডারি) ৭২ রান। সেখানে সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সাই হোপের উত্তাল উইলোবাজিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চার ও ছক্কা থেকে এসেছে (১০ ছক্কায় ৬০ ও ৮ বাউন্ডারি থেকে ৩২) ৯২ রান।

একইভাবে শেরে বাংলায় পরের ম্যাচে বাউন্ডারি এবং ছক্কায় টাইগাররা তুলেছেন (৬ ছক্কায় ৩৬, ২২ বাউন্ডারিতে ৮৮) ১২৪ রান। সে দিন ক্যারিবীয়রা সুবিধা করতে পারেননি। তারা চার ও ছক্কা থেকে তুলেছেন (৬ ছক্কা থেকে ৩৬ আর ১৫ বাউন্ডারি থেকে ৬০) = ৯৬ রান।

চার ও ছক্কা হাঁকানোয় এগিয়ে থাকা দ্বিতীয় ম্যাচেই জিতেছিল সাকিবের দল। আবার শেরে বাংলায় শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা ছক্কা ও চারের মহোৎসবে মেতে উঠেছিলেন। এই ম্যাচে ক্যারিবীয়রা ছক্কা (১২ ছক্কায় ৭২) ও চার (১৪ বাউন্ডারিতে ৫৬) থেকে তুলে নিয়েছেন ১২৮ রান। আর ওই ম্যাচে টাইগাররা আট ছক্কা ও ১০ বাউন্ডারি থেকে পেয়েছেন ৪৮+৪০= ৮৮ রান। সেটাই শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিয়েছে।

তার মানে পরিষ্কার, পাওয়ার হিট বা গায়ের শক্তি খাটিয়ে হাঁকানো বেশি চার ও ছক্কায় বাজিমাত করেছে ব্রাথওয়েটের দল।

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম