প্রবাস

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের আশ্রয়স্থল ওমান

মরুময় দেশ ওমান, দেশটি আয়তনে বাংলাদেশের চারগুণ বড় হলেও জনসংখ্যা মাত্র ৭০ থেকে ৮০ লাখ। এত অল্প সংখ্যক জনসংখ্যার দেশ হয়েও বাংলাদেশে রেমিটেন্স প্রেরণে বিশ্বের চার নম্বরে রয়েছে। বাংলাদেশির সংখ্যা প্রায় আট লাখ, এর মধ্যে প্রায় ৪শ হবে ইনভেস্টর। যাদের পাঠানো রেমিটেন্সে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে তাদের মধ্যে মুহাম্মাদ আলম চৌধুরী অন্যতম।

Advertisement

ওমানে সাত লাখের অধিক বাংলাদেশি থাকলেও হাতেগোনা কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আছে, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সততায় নিয়ে গেছে সফলতার শীর্ষে, তেমনই একজন সফল ব্যবসায়ী মুহাম্মাদ আলম চৌধুরী, ফেনীর কসকা গ্রামে জন্ম।

২০০০ সালে ভাগ্য বদলের আশায় ওমানে একজন সাধারণ শ্রমিক হিসেবেই তার যাত্রা শুরু। দীর্ঘ ৪ বছর পর ২০০৪ সালে নেমে পড়েন ব্যবসায়। একজন পরিশ্রমী যুবক এই আলম চৌধুরী। ব্যবসার পাশাপাশি তিনি জনসেবাও করে আসছেন।

প্রথমে ছোট্ট একটি বিল্ডিং মেটারিয়ালসের ব্যবসা করেন। এরপর এখন খাবুরাতে তার বিল্ডিং মেটারিয়ালস, রেস্টুরেন্ট, এক্সপোর্ট-ইনপুটসহ তার ১১টা নিজস্ব দোকান রয়েছে। দোকানে বিল্ডিং মেটারিয়ালসের সব ধরনের আইটেম রয়েছে। এ ছাড়াও তার ইআইসি নামে তার কোম্পানির নিজস্ব ব্র্যান্ড রয়েছে। তিনি শখের বসে করেছেন হাঁস, মুরগী ও কবুতরের ফার্ম। মরুভূমির মাঝে এমন একটি ফার্ম করে সৃষ্টি করেছেন নিজ গ্রামকে ভালোবাসার এক অনন্য উদাহরণ।

Advertisement

ওমানে খুব অল্প বয়সে সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। তার কোম্পানিতে ৪২ জন শ্রমিক কাজ করছে, পাকিস্তানি, মিশরি, ওমানি ও বাংলাদেশি শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বাংলাদেশি শ্রমিকই বেশি।

বাংলাদেশি শ্রমিকরা বলেন, একজন বাংলাদেশি হয়ে ওমানে এসে আরেকজন বাংলাদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিতে কাজ করে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছি, আমাদের মালিক সময়মতো বেতন পরিশোধ করেন, তাই আমরা আরো বেশি খুশি।

বাংলাদেশি এই ব্যবসায়ী আফসোস করে বলেন, আজ যদি ওমানে আমরা সব ব্যবসায়ী একসঙ্গে কাজ করতে পারতাম, তাহলে ওমানে যেমনিভাবে আমরা জনসংখ্যায় এক নম্বরে আছি, তেমনিভাবে ব্যবসায়ী হিসেবেও ওমানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা এক নম্বরে থাকতাম। আজ বাংলাদেশ সরকার থেকে যদি ওমানের ব্যবসায়ীরা একটু সহযোগিতা পেত, তাহলে তারা আরো বেশি রেমিটেন্স প্রেরণ করতে পারতো বলে জানান এই প্রবাসী ব্যবসায়ী।

তিনি বলেন, আমরা ব্যবসায়ীরা দূতাবাস থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা পায় না, দূতাবাসের রুক্ষ্ম আচরণ, অসহযোগিতামূলক আচরণ ও প্রবাসীদের নিয়ে ওমান সরকারের কাছে নিস্ক্রিয় ভূমিকা ইত্যাদির কথা তিনি উল্লেখ করেন।

Advertisement

বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায়িক অবস্থার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একবার ওমান থেকে টাইলস বাংলাদেশে ইনপুট করতে চেয়েছিলাম, ৩ লাখ টাকার টাইলসে ১৩ লাখ টাকা কাস্টম ক্লিয়ারেন্স বিল হয়, তাই এখন আর বাংলাদেশে ব্যবসা করার চিন্তা মাথায় নাই।

এ ছাড়াও দেশের নিরাপত্তা ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও দায়ী করে বলেন, আমরা ওমানে কোটি টাকা হাতে নিয়ে ঘুরলেও কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না এবং টাকা ছিনতাই হওয়ারও কোনো ভয় নেই, কিন্তু বাংলাদেশে ব্যাংকে একটু বেশি লেনদেন করলেই তাকে হয়রানি করা হয়।’ এমন হাজারো প্রবাসী ব্যবসায়ী রয়েছে দেশের সীমানা পেরিয়ে প্রবাসের মাটিতে, যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে আজ রেমিটেন্স আসছে দেশে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যদি এই রেমিটেন্স যোদ্ধাদের দিকে একটু বিশেষ নজর দেয়া হত তাহলে বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারতো প্রবাসীরা। সেইসঙ্গে বিদেশের পাশাপাশি দেশেও বিনিয়োগ করে দেশকে এগিয়ে নিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারতো বলে জানান এ প্রবাসী ব্যবসায়ী।

এমআরএম/জেআইএম