অর্থনীতি

নির্বাচনের আগে গৃহঋণ পেলেন দুই অতিরিক্ত সচিব

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র ছয়দিন আগে স্বল্প পরিসরে দুই অতিরিক্ত সচিবকে গৃহঋণ দিয়েছে অর্থ বিভাগ। যদিও গত ১ অক্টোবর থেকে এই কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই ও গৃহ নির্মাণ ঋণ সেলের কার্যক্রম ঠিক মতো শুরু না হওয়ায় ডিসেম্বরে গিয়ে তা শুরু হলো। রোববার এ বিষয়ে একটি সরকারি আদেশ (জিও) জারি করেছে অর্থ বিভাগ।

Advertisement

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আনোয়ারুল ইসলাম সরকার। দুজনই বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ঋণ নিয়েছেন। হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস ৩৫ লাখ আর আনোয়ারুল ইসলাম সরকার ৬৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ঋণ দিলে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন হবে সেই দিকে কারও নজর নেই। এর চেয়ে বড় বড় নির্বাচন আইন লঙঘনের ঘটনা ঘটছে সেই দিকে ইসি কোনো কিছু করছে না। তাই আমরা স্বল্প পরিসরে ঋণ দিচ্ছি। ইতোমধ্যে আবেদন যাচাই-বাছাই শেষে বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন দুই সরকারি চাকরিজীবীকে গৃহঋণ দেয়ার বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে আর অর্থ বিভাগ সেই ঋণ অনুমোদন দিয়ে জিও করেছে। ওই দুজনই প্রথম ঋণ পেলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘গৃহঋণ নিতে ব্যাংক ও হাউজ বিল্ডিংয়ের কাছে প্রায় ২০ হাজার মতো আবেদন জমা পড়েছে। যদিও তাদের মধ্যে কতজন ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন সে বিষয়ে ঠিক করে বলা যাচ্ছে না।

Advertisement

এদিকে সদ্য স্থাপিত গৃহ নির্মাণ ঋণ সেলের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে দুই কর্মকর্তা এ সেলে যোগ দিয়েছেন। তারা হলেন জনপ্রশাসনের মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব সৈয়দ নাসির এরশাদ ও সিনিয়র উপ-সচিব এলিস শারমিন।

সরকারি চাকরিজীবীদের গৃহঋণ আবেদন এ পর্যন্ত ২০ হাজার ছাড়িয়েছে। নির্ধারিত ৪টি সরকারি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যে এ চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ আবেদনের সংখ্যাসহ সামগ্রিক তথ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। আর ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব আবেদন যাচাই-বাছাই শুরু করেছে। কিছু আবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোও হয়েছে। আবেদন অনুযায়ী নির্দিষ্ট স্থানে রেডি ফ্ল্যাট আছে কি-না তা যাচাই করতে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্ধারিত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বোর্ড থেকে সেটার অনুমোদন নিয়ে অর্থ বিভাগের গৃহঋণ সেলে পাঠানো হবে। পরে সেখান থেকে ঋণের ভর্তুকি নির্ধারণ করে অর্থ বিভাগের সম্মতি নিতে হবে।

সরকারি চাকরিজীবীদের কম সুদে গৃহঋণ দিতে সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী এবং বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই ঋণের সরল সুদহার হবে ১০ শতাংশ। যার মধ্যে ৫ শতাংশ ভর্তুকি দেবে সরকার। ইতোমধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভর্তুকি বাবদ ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার। দেশে মোট ২১ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী আছে, যাদের মধ্যে প্রায় ৭০ ভাগ কর্মচারী।

গত ১ অক্টোবর থেকে অনলাইনে গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য আবেদন জমা শুরু হয়। অভিন্ন আবেদনপত্রে ২৮টি তথ্য চাওয়া হয়, যার মধ্যে ই-টিন নম্বর দেয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া প্রাইভেট প্লটের জন্য ৪-৬টি দলিল এবং সরকারি/লিজ পাওয়া প্লটের জন্য ৪-৭ দলিল দিতে হচ্ছে আবেদনকারীদের।

Advertisement

উল্লেখ্য, গত ৩০ জুলাই সরকারি কর্মচারীদের গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করে অর্থ বিভাগ। নীতিমালা অনুযায়ী, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচ বছর পর থেকে এবং সর্বোচ্চ ৫৬ বছর বয়স পর্যন্ত গৃহঋণের জন্য আবেদন করা যাবে। বেতন স্কেলের গ্রেড ভেদে সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নেয়া যাবে। ছয় মাস গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে ।

এমইউএইচ/জেএইচ/জেআইএম